অচিরেই মানুষ মানুষকে খুবলে খাবে

Burn Unit
ছবিটা সংগৃহীত

শামীমা মিতু: যৌতুকের কারণে স্বামী ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে এক চোখ তুলে নিয়েছে সু্খী বেগমের। আরেক চোখও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন রাজধানীর চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে।
পিটিয়ে হত্যা ও তার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া রাজন হত্যার ঘটনা সকল নৃশংসতাকে হার মানিয়েছে।
গোপালগঞ্জের সেই বাবা ভাতিজাদের চাপাতির কোপে দু পা হারিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি। তার ছেলেকে চাচাতো বোনের সাথে প্রেমের কারণে মেয়েটির ভাইয়েরা দুই হাত কুপিয়ে কেটে ও চোখ দুটি উপড়ে ফেলে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি।
এই ঘটনার কয়েকদিন আগে কিশোর কিশোরীর প্রেমের জের ধরে মেয়ের বাবা বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করে দশম শ্রেণীতে পড়া এক কিশোরকে। প্রেমিকের এমন নির্মম মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে কিশোরি।
এর বাইরেও আরো আরো ঘটনা রয়েছে, নির্মম, নৃশংস, পাশবিক। কোনো কোনোটা বর্ণনার অতীত। ঘটনা যতই অবর্ণনীয় হোক কিংবা চাঞ্চল্যকর হোক, অধিকংশ ক্ষেত্রে আসামীরা গ্রেফতার হয় না। রাজধানীর একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে জন্মদিনের কেক নিয়ে এসে এক গৃহবধূকে হত্যার ঘটনায় আসামি এখনও গ্রেফতার হয়নি।
প্রশাসনের সীমাহীন অসততায় বহু আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এবার সমাজের মানুষগুলোর নৈতিক অবক্ষয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে হিংস্রতা, পাশবিকতা। এখন আর খুন হবার ঘটনা তেমন গুরুত্ব পায় না, লাশকে কত টুকরো করা হয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার যে শো ডাউন হয়ে গেল কয়েকমাস আগে এর থেকেও কি আমরা বেরুতে পারবো? মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে পোড়া গাড়ি, পোড়া মানুষকে দেখে দেখে। মানুষ এখন পোড়া গাড়ি-মানুষের ছবি তোলে! কোপ খেতে দেখে, পিটিয়ে খুন হতে দেখে এগিয়ে যায় না! এরপর মানুষ না পোড়ালে হয়তো আন্দোলনই হবে না!
এরপর? এই হিংস্রতার শেষ কোথায়?
কোথায় যাচ্ছে আমাদের মানবিকবোধ, নৈতিকতা? সভ্যাতার লেবাস পরে আমরা কি বন্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি?
সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, সংস্কৃতি কর্মী, সর্বোপরী রাষ্ট্র যদি এখনই যদি এগিয়ে না আসে, সমাজের মানসিক সুস্থতার চিকিৎসা না করে, তাহলে হয়তো খুব বেশি দূরে নেই যেদিন মানুষ মানুষের রক্ত খাবে, খুবলে খুবলে মাংস খাবে!

শেয়ার করুন: