উইমেন চ্যাপ্টার: দীর্ঘ ৪২ বছরের যুদ্ধ শেষ করে মারা গেছেন ভারতের নার্স অরুণা শানবাগ। ১৯৭৩ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থেকেই কোমায় ছিলেন অরুণা।
দিনটি ছিল ২৭ নভেম্বর। অন্যদিনের মতোই ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে ডিউটিতে গিয়েছিলেন ২৫ বছর বয়সী অরুণা। কিন্তু সেদিনের একটি ঘটনা যে এভাবে পালটে দেবে তার জীবন, তিনি নিজে কেন স্বয়ং বিধাতারও হয়তো অজানা ছিল।
একটি ধর্ষণ আমূল পাল্টে দিয়েছিল মুম্বাইয়ের নার্সিং স্টাফ অরুনা শানবাগ -এর জীবন । কর্তব্যরত অবস্থায় তাঁকে ধর্ষণ করে ওয়ার্ড বয় সোহনলাল বাল্মীকি, এর পরে চলে নারকীয় অত্যাচার । কুকুর বাঁধার চেইন দিয়ে বেঁধে ফেলে রেখে দেওয়া হয় তাঁকে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়, দীর্ঘক্ষণ অক্সিজেন না যাওয়ায় কোমায় চলে যায় অরুণা। সেই থেকে গতকাল ২০১৫ সালের ১৮ মে পর্যন্ত একই অবস্থায় ছিলেন তিনি।
কেবলমাত্র সহকর্মীদের দায়িত্বে ও পরিচর্যায় এত কাল চলে তাঁর লড়াই। মাঝে স্বেচ্ছা মৃত্যুর আবেদনও জানানো হয়েছিল পরিবার থেকে এবং তখন এই নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন একজন সাংবাদিক। কিন্তু আইনী ঝামেলায় তা বাতিল হয়।
কিন্তু ভারতের ইতিহাসে এই কেসটিই ছিল প্রথম ‘স্বেচ্ছা মৃত্যু’র আন্দোলন। তখন এ নিয়ে ব্যাপক ঝড় উঠে দেশজুড়ে। এরকম আবেদন অনেক হয়েছে। দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের পরে ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট ভিরানীর আবেদনে সাড়া দেয় – প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুতে সায় দেয় শীর্ষ আদালত।
আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘এক জন পুরুষ মানুষ। একটা কুকুর বাঁধার চেন। আর কয়েক মিনিটের শরীর-মন ভেঙে দেওয়া অত্যাচার। তার পর শুধুই হাসপাতালের খুপরি ঘর। সেখানে বিছানায় শুয়ে এক মহিলা। চোখে দেখেন না, কিছু বলেনও না। জড়। জীবন্মৃত। সেই জড় পদার্থের মতো মানুষটার এ ভাবে বেঁচে থাকা ঘিরেই বদলে গিয়েছিল এ দেশের আইন। বাঁচার অধিকার যদি থাকে, তা হলে মরার অধিকার থাকবে না কেন, এই প্রশ্ন নাড়িয়ে দিয়েছিল ভারতের সংবিধান।
দোষী ধর্ষকটি কিন্তু মাত্র ১৪ বছরের জেল হাজত বাসের শাস্তি পায়। আশ্চর্য্যজনকভাবে তা এই নারকীয় ধর্ষণের জন্যও নয়। ডাকাতি ও হেনস্থার মামলায় তাকে ওই সাজা দেয়া হয়েছিল। অরুণা যখন কোমায়, এর মধ্যেই ওই ধর্ষকের জেলবাস এবং বেরিয়েও আসে সে।
ভারতের স্বাস্থ্য ইতিহাসে অরুণাই দীর্ঘতম সময় ধরে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা, চার দশকেরও বেশি সময় কোমায় থাকা রোগী।
বাল্মীকির শাস্তি তাঁর দেখা হয়নি, দেখা হয়নি তার নির্লজ্জভাবে ফিরে আসাও। ভাগ্যিস অরুণা কোমায় ছিলেন। ছয়দিন আগে তার নিউমোনিয়া দেখা দেয় বলে হাসপাতালের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানান। তাকে সাথে সাথেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নেয়া হয় এবং লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
অরুণার কষ্ট দেখে তার স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য আন্দোলনকারী এবং অরুণাকে নিয়ে লেখা বইয়ের লেখক ও সাংবাদিক পিংকি ভিরানি এক প্রতিক্রিয়ায় বলছিলেন, ‘আমার আহত, ছিন্নভিন্ন পাখি শাবকটি শেষপর্যন্ত উড়ে গেল। যাওয়ার আগে ভারতকে স্বেচ্ছামৃত্যুর আইনটিও দিয়ে গেল’।