উইমেন চ্যাপ্টার: ধরুন, আপনার শিশু কারো দ্বারা সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজড বা যৌন হয়রানি/নিপীড়নের শিকার হলো (ছেলে বা মেয়ে যে কেউ হতে পারে) এখন আপনার করণীয় কী?
১) আপনার শিশু যদি কারো নামে আপনার কাছে নালিশ করে, শিশুকে বিশ্বাস করুন। শিশুরা সাধারণত এই ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। আপনি অবিশ্বাস করলে ভবিষ্যতে হয়তো আর কখনোই শিশুটি আপনার সাথে শেয়ার করবে না।
২) আপনার শিশুকে এটা বুঝতে দেয়া যাবে না তার সাথে খুব ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে। আপনি আপনার শিশুর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করুন, অস্থির হয়ে যাবেন না।
৩) নিয়মিত একজন ভালো শিশুমনোবিজ্ঞানীকে দিয়ে কাউনসেলিং করান।
৪) শিশুটি যদি খুব গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিশু মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন। কখনোই শিশুটিকে এ নিয়ে তো নয়ই, উপরন্তু এ সময়টাতে কোনকিছু নিয়েই বকাবকি করা যাবে না। বরং তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যা হয়েছে তা কোনভাবেই তার অপরাধ নয়, অপরাধ ওই ব্যক্তির।
ব্যাপারটি যদি আদালত পর্যন্ত যায়, বিশেষ ব্যবস্থায় মনোবিজ্ঞানীর মাধ্যমে শিশুর জবানবন্দী নিতে হবে, কখনোই শিশুকে জনসমক্ষে ‘তার সাথে কী হয়েছে’ এর বর্ণনা দিতে বলা যাবে না। এসব শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৫) ভিকটিম শিশুটি যদি খুব অল্প বয়সী হয়- তাহলে হয়তো সে আপনাকে নির্যাতনকারীর কথা বলতে পারবে না। আপনাকে আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুকে একাকী যার-তার কোলে দেবেন না।
নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে সাবধান হোন, প্রয়োজন হলে ডাক্তার দেখান। তবে এগুলো অন্য কারণেও হতে পারে।
• শিশুর গোপনাঙ্গে কোন ক্ষত বা অস্বাভাবিক ফোলা ভাব,
• মুখে ক্ষত,
• পেট খারাপ,
• খাওয়ায় অরুচি,
• বিশেষ কোন ব্যক্তিকে দেখে ভয় পাওয়া,
• হঠাৎ চমকে ওঠা ইত্যাদি।
নির্যাতনকারী কদাচিৎ অচেনা মানুষ হন ।
অধিকাংশ সময় সে নিকট বা দূরসম্পর্কের আত্মীয়, শিক্ষক, পরিবারের লোক, পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশী, কাজের লোক ইত্যাদি হন।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে- কেবল সন্দেহ করে অহেতুক কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না । এতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। আবার, নিশ্চিত হলে লজ্জায় চুপ করে থাকবেন না । সে আপনার যত ঘনিষ্ঠ বা সম্মানিত জনই হোক না কেন। পারিবারিকভাবে সালিশ করা গেলে ভালো, কিংবা আইনি সহায়তা নেবার প্রয়োজন হলে নিন।
আমরা তো এখন আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনেক বিকৃতিকেই স্বাভাবিকভাবে নেয়া শুরু করেছি। ভাবলে ভেতরটা হিম হয়ে আসে ।
একসময় হয়তো আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ, পেডোফিলিয়া এবং ‘অজাচার’ (ইনসেস্ট) এর মতো জঘন্যতম বিকৃতিগুলোকেও স্বাভাবিক ভাবে নিতে শুরু করবো।
আপনার আমার নীরবতাই হাজারো শিশুর নির্যাতিত হওয়ার পথ সুগম করে দেবে।
আসুন, এদের মুখোশ খুলে দিই সভ্য সমাজে, ধিক্কার দিই, কঠোর আইন প্রণয়ন করি, আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করি।
সুস্থ-স্বাভাবিক-নিরাপদ শৈশব- প্রতিটি শিশুর অধিকার । আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠুক নিবিড় স্নেহাশীষের পবিত্রতায়।
সবচেয়ে বড়কথা, নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে কিছুতেই ভাবতে দেয়া যাবে না যে, তার জীবনে ‘ভয়াবহ’ কিছু ঘটে গেছে, যার কারণে তার সারাটা জীবনই অভিশপ্ত হয়ে উঠবে।
বরং তাকে এটা বুঝতে দিতে হবে যে, যেহেতু বিশ্বে এখনও অনেক নরাধম আছে, বিকৃত রুচির মানুষ আছে, তাই তাদের পক্ষে এরকম কিছু ঘটানো সম্ভব আর এর প্রতিকারও সম্ভব। সে একা নয়, আমরা সবাই তার পাশে আছি আনন্দে-ভালবাসায়, এটা শিশুটিকে বুঝিয়ে বলতে হবে। আর পরিবারের অতিআগ্রহীদের এসময় ধারেকাছে ঘেঁষতে না দেয়াই ভাল। পারলে শিশুটিকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসুন, ওকে ভুলিয়ে দিন সবকিছু।
( সংগৃহীত পোস্ট)