
উইমেন চ্যাপ্টার: যাক্ অবশেষে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেন পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অপহরণের ৩৫ ঘণ্টা পর অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছেন তাঁর স্বামী আবু বকর সিদ্দিক। তিনি অক্ষত অবস্থায়ই আছেন।
বুধবার দুপুরে অপহরণের পর থেকে কেবল রিজওয়ানাই নন, সারাদেশের মানুষ উদগ্রিব ছিলেন একটি ভালো খবর শোনার জন্য। শেষপর্যন্ত সবার প্রার্থনা মঞ্জুর হয়েছে, ফিরে এসেছেন একজন, যদিও এমনভাবে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। তারা জীবদ্দশায় ফেরেন না, ফেরেন লাশ হয়ে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মিরপুরের আনসার ক্যাম্প এলাকায় তাঁকে নামিয়ে দিয়ে যায় অপহরণকারীরা। এ সময় তাঁর চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। দীর্ঘ সময় গামছা বেঁধে রাখার কারণে তাঁর নাকের ওপরে কালসিটে দাগ পড়ে গেছে। তাঁর পোশাক কিছুটা ছেঁড়া ছিল।
ধানমন্ডি থানায় আবু বকর সিদ্দিক বলেন, অপহরণকারীরা তার সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করেনি। তবে তার চোখ বাঁধা ছিল। ফলে অপহরণের পর তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা তিনি জানেন না।
এদিকে আবু বকর সিদ্দিককে উদ্ধারে পুলিশের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে র্যাব ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। এর আগে অপহরণে ব্যবহূত গাড়িটি শনাক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নীল রংয়ের ওই মাইক্রোবাসটির নম্বরের (চট্টগ্রাম মেট্রো-গ-১৭-৮৩২৭) খোঁজ নেওয়া হলে তা ভুয়া বলে নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বিআরটিএ।
গতকাল দুপুরে আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণের পেছনে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জড়িত বলে দাবি করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ঢাকা মহানগর ডিবি কার্যালয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমার সন্দেহের তালিকায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমাদের আইনগত কর্মকাণ্ডের কারণে যারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাই এ কাজ করেছে। তিনি বলেন, আমার স্বামীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক শত্রু নেই। আমার কাজ পরিবেশ আইন নিয়ে। আমার কাজের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাই এ কাজ করেছে।
তিনি বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা আমাকে বলেছেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আমি তাদের চেষ্টায় বিশ্বাস রাখতে চাই। র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিকবৃন্দ’র ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি আশা হারাচ্ছি না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন হামিদা হোসেন, তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম এবং সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। সংবাদ সম্মেলনে আবু বকর সিদ্দিকের অপহরণে বিশিষ্ট নাগরিকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তাকে দ্রুত ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবি জানান।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও গতকাল দুপুরে মানববন্ধন করে দ্রুত আবু বকর সিদ্দিককে সশরীরে উদ্ধারের দাবি জানান।
গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অপহরণে জড়িত অপহরণকারীরা অনেক দক্ষ ও পেশাদার। পরিকল্পনা করেই তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।
অপহরণের ঘটনা তদন্তে ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ডিএমপি।
গত বুধবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ফতুল্লার হামিদ ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান থেকে নিজ গাড়িতে চড়ে ঢাকায় আসার পথে আবু বকর সিদ্দিক অপহূত হন। তার গাড়িটি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের দেলপাড়া এলাকায় এলে অন্য একটি গাড়ি পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। তখন ওই গাড়ি থেকে নেমে আসা দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণ করে ঢাকার দিকে চলে যায়। বুধবার রাতেই সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অপহরণে জড়িত নাম ছাড়া আটজনকে আসামি করা হয়েছে।