সাংবাদিক ভৃত্য বনাম গৃহস্থ মালিক

Newspaper pixউইমেন চ্যাপ্টার:  এক সহকর্মী এমনই একটা স্ট্যাটাস দিলেন ফেসবুকে। যাহা আমার অতিশয় মনে ধরিল। সে লিখিলো, “একদা এই ব-দ্বীপের এক গৃহস্থ স্থির করিলেন, কিছু উপাধিধারী সাংবাদিক ভৃত্য রাখিবেন। তিনি বুদ্ধি করিয়া একখানা পত্রিকা বাহির করিলেন। অনেক সাংবাদিক রাখিলেন। তাহার কথায় ভৃত্যসকল উঠিতে বসিতে লাগিলেন। তিনি আনন্দে আত্মহারা হইলেন।”

এই স্ট্যাটাসে মন্তব্য আসিলো…অত:পর ভৃত্যরা নতুন কিছু গৃহস্থের সন্ধান পাইলেন, এবং অতি লাভের আশায় দৌড়াদৌড়ি করিতে লাগিলেন। ইহাতে তাহাদের আমও গেল, ছালাও গেল। এই কথা বলিয়া মন্তব্যকারিনী যারপরনাই হাসিতে লাগিলেন। হা হা হা হা হা।

এর উত্তরে একজন লিখিলো…ওই গৃহস্থের এমন সুখ দেখিয়া তখন এই ব-দ্বীপের অপর গৃহস্থরাও এমন অনুগত ভৃত্য পুষিবার খায়েশ করিলেন। ভৃত্যরা তখন তাহাদের জয়-জয়কার দেখিয়া খুশীতে বাক্-বাকুম করিতে করিতে বগল বাজাইতে লাগিলেন। একসময় গৃহস্থরা উপলব্ধি করিলেন, ভৃত্যরা তো অতি বাড় বাড়িয়াছে, কাজেই ইহাদের লেজ কর্তন করিবার আদেশ দিলেন পাইক-বরকন্দাজদের। এমতাবস্থায় এক অতীব সাহসী বেয়ারা প্রভুকে বলিলেন, “আর্য, লেজ পাইবো কোথায়? ইহারা তো মনুষ্য দাস। ‘সাধু’ ‘সাধু’ বলিয়া উঠিলেন এক গৃহস্থ। সবাই এক হইয়া অত:পর এক সিদ্ধান্তে আসিলেন। বলিলেন, “মানিলাম, ইহাদের লেজ নাই। পদবি তো আছে? মাসোহারা তো আছে? সেইখানেই আঘাত করিতে হইবে।”

যেই কথা, সেই কাজ। অমনি পাইক-বরকন্দাজরা ছুটিলেন প্রভুদের আজ্ঞা পালন করিতে। অতিশয় ক্ষুদ্র এই ভৃত্যকুল তখন কি আর করিবে, বসিয়া বসিয়া এদিক-ওদিক অবলোকন করিতে লাগিল আর আঙুল চুষিতে লাগিল। ভৃত্যদের এই দুর্দশা সচক্ষে দেখিয়া গৃহস্থরা তখন হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিলেন, আর বলিলেন, যাক্, ভৃত্যদের নাক কাটিয়া বড় বাঁচা বাঁচিলাম।

ইহা শুনিয়া পূর্বেকার মন্তব্যকারিনী হাসিয়া ভাঙিয়া পড়িয়া বলিলেন, অত:পর এইভাবেই চক্রাকারে ভৃত্যের আর গৃহস্থের গল্প যুগ যুগ ধরিয়া রচিত হইতে লাগিল। ভৃত্যের নাক কাটিয়া গৃহস্থের যাত্রাও বলবৎ রহিল।

এই পর্যন্ত আসিয়া স্ট্যাটাসের জনক লিখিলেন…ভৃত্য লইয়া আরো কিছু: সেই গৃহস্থ অবাক হইয়া দেখিলেন, তাহার জমি-জমা ও বাড়ি-ঘরে সকল ধরনের উৎপাত বন্ধ হইয়া গেল। গরুতে ধান খায় না। ঘরে চোর ঢুকিতে সাহস করে না। তিনি আবারো আনন্দে আত্মহারা হইলেন। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করিয়া অপরাপর গৃহস্থ সকল একই…পন্থা অবলম্বন করিতে লাগিলেন। তখন হইতেই ধনীক শ্রেণীর সাংবাদিক ভৃত্য রাখার চল হইল!

ফেসবুকের আরও কিছু স্ট্যাটাস এখানে সংযুক্ত করা হইলো। ‘সত্যিই অপূর্ব ! বর্তমান সময়ের মিডিয়ার বাস্তব চিত্রটাই ফুটে উঠেছে এখানে।

‘গেরস্থ-ভৃত্যের’ এই হাডুডু খেলায় গেরস্তের কিন্তু তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, ভৃত্যসকল ক্সতিগ্রস্থ হচ্ছে,সর্বোপরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মিডিয়াজগত’।

‘গৃহস্ত- ভৃত্যের এই টম এন্ড জেরীর খেলায় কয়েকজন উচ্চমার্গীয় ভৃত্য লাভবান হইতেছে। উনারা একই সাথে কয়েক গৃহস্থের তেলা মাথায় তেল দিয়া আর প্রতারনার আশ্রয় নিয়া নিজেদের আখের গোছাইতে ব্যস্ত। আর এই কারণে নতুন যাহারা এই কর্মে অভিষিক্ত হইতে চায় অথবা নিবেদিত হইতে চায় তাহারা নিরাপত্তাহীন ও দ্বিধাগ্রস্ত। কবে যে এই ইঁদুর বেড়াল খেলা থামিবে?? ‘

কিন্তু কথা হচ্ছে, ভৃত্যের ধর্ম কি ঠিক আছে? ভৃত্যদের ধর্ম যদি সঠিক না হয়, মূল্যবোধ যদি তাদের না থাকে, তবে ওই একদিনও কোনো কাজে আসবে না।

“আপনি আচরি ধর্ম, জীবেরে শেখায়”…যতদিন না ভৃত্যরা এই নীতি মেনে চলবে, ততদিন কোন জাতিই লাভবান হবে না’।

‘ভৃত্যকূল নিজেদের গেরস্থের কাছে সমর্পণ করিয়া বেশ ভালই আছে…আত্মসম্মান-মর্যাদা বলিতে যে কোন কিছু আছে এটাও যেন তাহাদের মনে নাই… এদের জ্ঞান দাও প্রভু এদের দয়া করো… এছাড়া আমার বলার কিছু নেই!!’

‘১২ বছর আগে যদি ফেইসবুক থাকিতো, তাহলে নিশ্চই আমার একটা কথা স্ট্যাটাস এ জায়গা পাইতো!! তোমার বন্ধু লিখিয়াছেন ভৃত্যের কথা, এই বান্দা সেদিন বলিয়াছিল ধনীরা যেমন শখে কুকুর পোষে লাখ টাকা ব্যয় করিয়া—তেমনি দেখা যাইবে কেউ কেউ পত্রিকা …..’।

(লেখাটি বেশ আগের। উইমেন চ্যাপ্টারের জন্য আবারও তুলে ধরা হলো)

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.