শংকায় বাংলাদেশের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ

BD Cricketনাহিদ দীপা: বাংলাদেশের মাটিতে ক্রিকেট মানেই সবার মনযোগের কেন্দ্রবিন্দু। খেলার দিনটা যেন আর কিছুতেই কারো মন বসেনা। সবাই স্টেডিয়ামে যাবার জন্য এক পা বাড়িয়ে রাখে। যারা মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ পেল..তারাতো আকাশের চাঁদ হাতে পেল। আর দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পাড়ায় পাড়ায় টানানো হয় বড় পর্দা। যে মাসই হোক না কেন, সারা দেশে লাল-সবুজের পতাকার ছড়াছড়ি, যেন মার্চ অথবা ডিসেম্বর।

২০১৪ সালের শুরুটা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে জুড়ে থাকার কথা অনেক পালক। শ্রীলংকা সফরে আসবে, এরপর এশিয়া কাপ, তারপর ওয়ার্ল্ড টি-টুয়েন্টিকে ঘিরে কত আশা নিয়েই না বসে আছি আমরা। কিন্তু সে গুড়ে বালি পড়বে কিনা, কে জানে !

অনূর্ধ্ব-১৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল খেলতে এসেছিল বাংলাদেশে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় ম্যাচে তারা খেলবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কারণ অবরোধ আর হরতাল। আগ্রাবাদ হোটেলে আছে তারা। সেই হোটেলের সামনে গত শনিবার ককটেল ফুটেছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তারা। ভুগবারই কথা। ভিন দেশে এসে যদি এমন হয়, কেমন লাগার কথা! দেশের হাল-চাল যেদিকে যাচ্ছে তাতে সিরিজ শেষ না করে ফিরে গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।

দেশের অবস্থা যদি এমন থাকে তাহলে শ্রীলংকার ট্যুর, এশিয়া কাপ আর টি-টুয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজন করতেও বাধার মুখে পড়বে বিসিবি। এরই মধ্যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে চিঠি দিয়েছে আইসিসি। রিপোর্টে সন্তোষজনক লেখার কিছুই নেই, সেটা সবাই জানে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে এই আয়োজনের ভাগ্য যে আমাদের হবে না সেটাও বুঝতে পারছি আমরা। দেশের অর্থনীতির সংগে সংগে যে এদিক দিয়ে আমরা কতটা ক্ষতির স্বীকার হবো সে ধারণা কি দেশ চালকদের নেই?

ক্রিকেট যে কত বড় শক্তি, তার দু-দুটো নজির আমাদের চোখের সামনে। একদিকে ভারত, অন্যদিকে পাকিস্তান। একদিকে ভারত তাদের ক্রিকেট ব্যবসাকে কাজে লাগিয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছে পুরা দুনিয়ায়। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পাকিস্তান থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ক্রিকেট। আমরাও কি পাকিস্তানের দিকেই যাচ্ছি? ভেবে দেখার সময় হয়েছে এখন।

Dipa
নাহিদ দীপা

কিভাবে আমরা ভুলে যাই পাকিস্তানের কথা। ২০০৯ সালে শ্রীলংকান ক্রিকেট দলের বাসে বোমা হামলার পর থেকে সেখানে খেলতে যায় না কোন দেশ। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আসর তো বসেই না, আইপিএলের আদলে করা পাকিস্তান প্রিমিয়ার লিগেও ক্লাবগুলো পায়না তেমন কোন বিদেশি খেলোয়াড়। তাদের দেশের উঠতি তারুণ্য নিজ মাঠে স্বাদ নিতে পারছে না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের। যাদের স্বপ্ন ছিল তারা এক এক জন ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস অথবা শহীদ আফ্রিদী হবে, সে স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে।

যুদ্ধের ডামাডোল না থাকলে আফগানিস্তানও যে দক্ষিন এশিয়ার ক্রীড়া পরাশক্তি হতে পারতো…সে প্রমাণও তারা সাফ ফুটবলে দিয়েছে। এখন কি তবে আমাদের পালা!! আমি ভীত!! আমি আতংকিত।

যদিও আমার কাছে কোন উদাহরণ নেই, তবু বাজি ধরে বলতে পারি, পাকিস্তানের শিশু বা কিশোরদের কেউই এই স্বপ্নের বীজ এখন আর বোনে না। বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের নিরাপত্তার কথা পাকিস্তানের মুখের উপর বলে দিয়ে দল পাঠাইনি আমরা। এখন পাকিস্তান যদি পাল্টা জবাব দেয়? মেনে নিতে পারবো আমরা? মাননীয় রাজনীতিবিদরা, একটু কি ভেবে দেখবেন?

(নাহিদ দীপা: সাংবাদিক)

শেয়ার করুন: