‘সুগার ড্যাডি’ আসলে প্রেমিক ড্যাডি

শিল্পী জলি:

আমেরিকায় ‘সুগার ড্যাডি’ বলে একটি কথা আছে। এই ড্যাডিরা আসলে ড্যাডি নয়, প্রেমিক প্রেমিক ড্যাডি।

মূলতঃ ধনী হয় তারা। ধন উপার্জন করতে করতে যখন বয়স বাড়ে, যৌবনে ভাটির টান আসে, শরীরের তেজ কমে , উদ্দীপনা হারাতে থাকে, জীবন গতিহারা হতে চায়,… তখন তারা কম বয়সী সঙ্গী খোঁজে। তার কাছ থেকে ধার নেবে হারিয়ে যাওয়া সময়, উদ্দীপনা, তেজ, এনার্জী, সঙ্গ, হাসিঠাট্টা, কেয়ার, স্ফূর্তি, সেক্স…..কখনও বা শুধুই সঙ্গ…। বিনিময়ে যত ধন চাও, আমি দেবো।

শিল্পী জলি

বয়স আঠারো হতেই আমেরিকাতে বাবামায়ের ঘর ছেড়ে দিতে হয়। স্কুলেও ফ্রি’তে পড়ালেখা খতম। যেতে হয় কলেজে। নিজের খাওয়া, থাকা, খরচ, এবং টিউশন ফি সবই নিজে বহন করতে হয়। সাধারণ একটি বিষয়েও একটি ব্যাচেলর ডিগ্রী করতে প্রায় ৬০/৭০ হাজার ডলার টিউশন ফি দিতে হয়। যদিও কিছু লোন পাওয়া যায়, তবুও অনেকেই দীর্ঘ সময় ঐ চাপ সয়ে হাল ধরে রাখতে পারে না। প্রতিদিন কাজ, ক্লাস, হোমওয়ার্ক জমাদান–ঘুমের সময়ও বলতে গেলে হাতে থাকে না। তখন অনেকেই বিকল্প পথ খোঁজে–শর্টকাট রাস্তা। তোমার আছে টাকা, আমার আছে যৌবনের ঝঙ্কার, এসো বিনিময় করি।
তেমনই একটি পথ সুগারড্যাডি।

সব সুগার ড্যাডিই সেক্স চায় না, শুধু সময় এবং সঙ্গও খোঁজে। তাঁরা সুগার মেয়ের দায়িত্ব নিয়ে সাথে ঘোরে, মুভি থিয়েটারে যায়, রেষ্টুরেন্টে খায়-খাওয়ায়, পড়ালেখা-বাসাভাড়ায় সহায়তা করে। বেশীরভাগ মেয়েদেরও তেমন ড্যাডিই পছন্দ। তবে, সব সময় তেমন ড্যাডি না পেলেও অনেক মেয়েই ক্লান্ত হয়ে দুই ফকিরের আইডিয়া ত্যাগ করে– সমবয়সী প্রেমিক না খুঁজে বেশী বয়সী সুগারড্যাডী খোঁজে। ড্যাডি যদি মাঝে মধ্যে সেক্সও দাবী করে বসে, এতে তাদের বার বার পার্টনার বদলাতে হবে না । মোটামুটি একজনই থাকবে–ঝড়-ঝাপ্টা-ঝুঁকি কম। পুরোপুরি পতিতার জীবন নয়। তথাপি, এখানে বিয়ে বিনা সেক্সও ক্রাইম নয় ।

তেমনই এক সুগার ড্যাডির উপর ডক্যুমেন্টারি দেখলাম। বিশাল ধনী। দশ বছর ধরে কালো এক মেয়ের সুগার ড্যাডি হয়ে বসে আছেন। মিলিয়ন ডলারের উপর খরচ করে সুগার ডটারকে একটি ব্যবসা দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, গলফ খেলা শিখিয়েছেন, নানারকম জীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বললেন, মৃত্যুর সময় তাকে নিজের অনেকটা সম্পওিও লিখে দিয়ে যাবেন।
জিজ্ঞেস করা হলো, তাদের কখনও সেক্স হয়েছে কিনা ?
বললেন, ওটাতো অন্যদের সাথে কতবারই হয়েছে–সেক্স ইজ নাথিং ইন লাইফ ! আমি তার সঙ্গ কিনেছি, সে আমায় জীবন দিয়েছে।

শুধুই ‘লাভের চুক্তির’ সম্পর্কেও কখন প্রেম ঢুকে যায় বলা মুশকিল !
দেখলাম, ত্রিশ বছরেরও একজন পুরুষ সুগার ড্যাডি হবার প্রার্থী হয়েছে। সামনাসামনি বাপের বয়স এতো কম দেখে আঠারো বছরের মেয়ে তো হেসে খুন। বান্ধবীকে কানে কানে চুপি চুপি শুধায়, এত ছোট ড্যাডি যদি আবার বিয়ে করতে চায় !

কম বয়সী মেয়েদের প্রতি বেশী বয়সী পুরুষের ঝোঁক সহজাত–
তাঁরা ওদের মাঝে নিজের হারিয়ে যাওয়া জীবন এবং সময়কে খুঁজে বেড়ায়। ঐ চক্করে পড়ে ‘অতি কঠিন প্রেম’ ভেবে অনেক বাচ্চা মেয়েই পথ হারাতে পারে। তখন তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় সময়, মানুষটিও হয়ত দ্রুত চলে যায়, জীবনে নেমে আসে, একরাশ শূন্যতা ।

উন্নত বিশ্বে মেয়েদের একজন সঙ্গী হারালে আরেকজন সঙ্গী এসে হাত ধরে, বাকি পথটুকু চলতে। কিন্তু আমাদের সমাজে সেই কথা চিন্তা করাতেও বাধার পর বাধা থাকে। এখন আবার আইন হয়েছে বাচ্চা মেয়েদের বিয়ে, অথচ ছেলেদের বয়স একুশ হতে হবে। এতে কম বয়সীদের বিয়েতে বয়সের গ্যাপ থাকবে।

এমনিতেও বয়স্করাই অল্প বয়সী মেয়েদের বেশী বিয়ে করতে চায়। তেমন ঘটনা ঘটলে মেয়েদের ক্ষেত্রে বাড়বে অকালে বিধবা হবার ঝুঁকি। অতঃপর বান্টি মীরের মতো কোন লোক হয়তো ভিডিও বানিয়ে ছাড়বে সাদা শাড়ীর ফতোয়া দিয়ে। দুই দিনের বৈরাগী ভাতকে বলবে, অন্ন।

জগতে কত ধার্মিকপুরুষ দেখলাম, কিন্তু আজও মনের মত একজনও পেলাম না যে ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজের ত্যাগের কথা বলে !

শেয়ার করুন: