শোনো মেয়ে!

 

আহমেদ মুশফিকা নাজনীন:

শোনো মেয়ে!

একটা স্মার্ট ফোন কিনেছো তুমি। ফেসবুক একাউন্টও করেছো। একটার পর একটা রিকোয়েস্ট আসছে তোমার। তুমি খুব খুশী। অচেনা অনেক মানুষকে বানাচ্ছো বন্ধু। এর মধ্যে কারো কারো সাথে বিশেষ বন্ধুত্বও হয় তোমার। এর মধ্যে একজন তোমাকে ম্যাসেঞ্জারে গান পাঠায়, কবিতা পাঠায়। গুড মর্নিং, গুডনাইট লেখে। তুমি দিন দিন মুগ্ধ হচ্ছো, ভাবছো এমন করে কেউ তো আগে কেয়ার করেনি। এমন করে কেউ, তোমার কথা কখনো ভাবেনি। কেউ বলেনি, দুপুরে খেয়েছো বাবু?

কেউ বলেনি, ঘুমাও বেবী। তুমি না ঘুমালে আমি ঘুমাবো না। কেউ বলেনি তুমি খুব সুন্দর। তুমি দিনরাত তার কথা ভাবছো। সকাল বিকেল রাত চ্যাটিং করছো।
বন্ধুদের দেখাচ্ছো। কোনো কোনো বন্ধু বলছে, বাহ্, ছেলেটা তো ভালো। কত যত্ন করে তোর। তুমি অহংকারে পাখনা মেলো। মন দিয়ে দাও তাকে। ছেলেটা তোমার মনের আরো কাছে আসে। তুমি ভালোবাসায় ভেসে যাও।

তোমার পড়াশুনা করতে ভালো লাগে না, খেতে ভালো লাগে না। বাবা মার কথা শুনতে ভালো লাগে না। তোমার মা/ বাবা তেমন বোঝেন না ফেসবুক, টুইটার, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসআপ। সারাক্ষণ ফোন নিয়ে থাকায় তারা বকা দিলে তুমি মিথ্যে বলো, বানিয়ে বানিয়ে বলো পড়াশোনা করছো। তাদের বলে বসো গ্রুপ স্টাডিজ করতে হয়। এটাই আধুনিকতা। মা’র কেন জানি বুক কাঁপে। তুমি হেসে উড়িয়ে দাও। মাকে মনে হয় বড্ড ব্যাকডেটেড। একদিন ছেলেটা তোমাকে স্বপ্ন দেখায়। তুমি ভেসে যাও।

একদিন ভোরে প্রাইভেট পড়ার নাম করে তোমার জামাকাপড়, জমানো টাকা, মা’র গয়না নিয়ে তুমি বাসা ছাড়ো। তোমার কি একটু ভয় লাগে ? পা কাঁপে ? না তুমি সেসব পাত্তা দাও না। তুমি বেরিয়ে পড়ো। বাসস্যান্ডে দাঁড়ানো সেই ছেলে। তুমি তার হাত ধরো। ছেলেটা তোমাকে নিয়ে যায় এক মেসে। তুমি অবাক হও। ছেলেটা তোমাকে অভয় দেয়। বিয়ে করেই তোমরা চলে যাবে শ্বশুরবাড়ি। একদিন, দুদিন, তিন দিন যায়। এক সকালে নাস্তা আনার কথা বলে সেই সে ছেলেটা চলে যায়। আর আসে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ফোন বন্ধ তার। ফেসবুক ব্লক। সব বন্ধ।

ব্যাগ খুলে দেখো টাকা পয়সা গয়নাগাটি কিছুই নেই তোমার। তুমি বুঝতে পারো সব হারিয়ে গেছে তোমার। মাথা নিচু করে ফিরে আসো বাবা/ মা’র কাছে। বুঝতে পারো পৃথিবীর সবচে নির্ভরতার জায়গায় তুমি ফিরে এসেছো। খোঁজ নিয়ে তুমি জানতে পারো, তুমি যাকে নামী দামী কলেজের ছাত্র ভেবেছিলে, সে আসলে একজন বখাটে। মাদকসেবী। সন্ত্রাসী। সে ক্লাস এইটের বেশি পড়েইনি। যা বলেছিলো সবই ছিলো তার মিথ্যে। ভয়ংকর আরও বিপদে তুমি পড়তে এই ভেবে তুমি কুঁকড়ে যাও। ঘৃণা হয় তোমার। রাগ হয় নিজের উপর।

তুমি এবার বুঝতে পারো, ভুল মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছিলো তোমার। তুমি বুঝতে পারো, কদিনের পরিচয়ে কেউ আপন হয় না। তুমি বুঝতে পারো, বাবা মা কখনো খারাপ চান না সন্তানের। তুমি এবার বুঝতে পারো, মিথ্যে বলা ঠিক না, তুমি বুঝতে পারো, কদিনের পরিচয়ে অচেনা মানুষের হাত ধরে চলে যাওয়া ঠিক না। তুমি বুঝতে পারলে আধুনিকতা মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়।

ভালো লাগলো তুমি এখন সব বুঝতে পারলে। এখন তুমি সচেতন। আর এ ভুল করবে না।
কিন্তু তোমার মতো আরেকজন মেয়ে হয়তো তখন এমন মিথ্যের ফাঁদে পড়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

দায়িত্ব এখন তোমার, আমার, আমাদের। তোমার চারপাশে ছড়িয়ে দাও, ফেসবুক প্রতারণায় যেন আর না পরে তোমার বন্ধুরা। না চিনলে কাউকে যেন ফ্রেন্ডলিস্টে এ্যাড না করে। মিথ্যে ফেক আইডি যেন একসেপ্ট না করে কেউ। নিজের কোনো ছবি যেন কখনো আর না দেয় কদিনের চেনা বন্ধুকে। কোনো ভুল হয়ে গেলে বিষয়টি না চেপে সাথে সাথে জানায় যেন বাবা মাকে। পরিবারের মানুষদের কাছে নি:সংকোচে যেন খুলে বলে সব কথা। বলো তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে। ভয় নেই, সাহস বাড়াও নিজের মনে। মনে রেখো, তুমি মাথা উঁচু করে হাঁটলেই, সাহসী হলেই, প্রতিবাদী হলেই, সচেতন হলেই দূর হবে সব অন্ধকার।

লেখক: সাংবাদিক

শেয়ার করুন: