অচলায়তন ভাঙছে রাজ পরিবারের

ফারহানা মিলি:

মেগান মার্কেলকে (পুরো নাম র‌্যাচেল মেগান মার্কেল) দেখে ভালো লাগলো… সদ্যই তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে.., ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারির বাগদত্তা হিসেবে… ডিভোর্সি, বয়সেও প্রিন্সের চেয়ে প্রায় চার বছরের বড়, তারপর একজন বেশ শক্তপোক্ত অ্যাকটিভিস্ট ও স্বাধীনচেতা ধরনের নারী মার্কেল, আবার তার দেহে বইছে আফ্রো-আমেরিকান মায়ের রক্ত– এমন একজন নারীকে রাজবঁধু হিসেবে মেনে নিতে এখন আর এ পরিবারের খুব একটা বাধা নেই মনে হচ্ছে…

সনাতনী বরফ গলছে তাদের, যে বরফ একসময় হ্যারিরই মা প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানা ও বাবা প্রিন্স অফ ওয়েলস চার্লসকে পীড়িত করেছে… ক্যামিলা পার্কারের সঙ্গে চার্লসের সম্পর্কের কথা জেনেও তার শরীরে কেবল রাজরক্ত নেই বলে, তখনকার লেডি ডায়ানার সঙ্গে বিয়ের আয়োজন করেছিলেন চার্লসের পরিবার.. বিশেষত তাঁর বাবা, এখন ৯৬ বছর বয়সী প্রিন্স ফিলিপ এই বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছিলেন চার্লসকে।

ডায়ানা লর্ড পরিবারের মেয়ে, লর্ডরা রাজপরিবারের আত্মীয় সাধারণত, কয়েক প্রজন্ম আগে ডায়ানার পূর্বপুরুষরাও ছিলেন সরাসরি রাজপরিবারের সদস্য… আর এই বিয়েই ছিল দুজন মানুষের জীবন ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট… ডায়ানা অসাধারণ রূপবতী ও গুণবতী হওয়া সত্ত্বেও চার্লসের মন কখনও জয় করতে পারেননি… ওদিকে ক্যামিলাও কখনও রাজপুত্রের জীবন থেকে সরে যাননি।

ফলে অনিবার্য সংঘাতে বিপর্যস্ত হতে হতে, খাপছাড়া সব প্রেমের সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে বিশ শতকের সবচেয়ে বেশি ফটোগ্রাফড ও আবেগী এক নারী প্রিন্সেস ডায়ানা কম বয়সেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।
তাতে কোথাও কারও কোনো ক্ষতি হয়নি… টেমস নদীর জলও যেমন ছিল তেমন গড়াচ্ছে… বিগ ব্যাং সময় বয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে অনবরত… প্রিন্স অফ ওয়েলস তার চিরদিনের প্রেমিকাকে বিয়ে করেছেন… দুই রাজপুত্র মাতাকে হারালেও তারা রাজপরিবারের সদস্য বলে তাদের লালনপালনে কোনো সমস্যা হয়নি।

কেবল ডায়ানার পুত্রদের মনের গভীরে হয়তো মায়ের ভালোবাসার ছাপ রয়ে গেছিল… তাই বড় রাজপুত্র উইলিয়ামও বিয়ে করলেন সাধারণ মধ্যবিত্ত ব্রিটিশ নারী কেট মিডলটনকে… আর হ্যারি তো ছাড়িয়ে গেলেন সব প্রথা ও নিয়ম…
একজন ডিভোর্সি মার্কিন নারীকে বিয়ে করার জন্য ১৯৩৬ সালে তখনকার রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডকে সিংহাসন ছাড়তে হয়েছিল… পরে তাঁর ছোট ভাই ষষ্ঠ জর্জ সিংহাসনে বসেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর রাণী হোন তাঁর বড় মেয়ে এলিজাবেথ, যিনি হ্যারিরই দাদি, বর্তমান রাণী…
কেবল এডওয়ার্ড নন, রাণীর বোন প্রিন্সেস মার্গারেট এবং কন্যাা প্রিন্সেস অ্যানির জীবনও বিপর্যস্ত হয়েছে রাজপরিবারের সঙ্গে নিজেদের পছন্দ নিয়ে টানাপোড়েনে….

মনের ওপর জোর চলে না, এটা ব্রিটিশ রাজপরিবার এতদিনে মেনে নিচ্ছে… কিন্তু তাদের সামন্তীয় পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিশ শতকেও কেড়ে নিয়েছে এই পরিবারের অনেক সদস্যের জীবনের আনন্দ, বঞ্চিত করেছে তাদের প্রাপ্য সম্মান থেকে….

শেয়ার করুন: