পুরুষই পুরুষকে অবিশ্বাস করে সবচেয়ে বেশি

শাশ্বতী বিপ্লব:

প্রিয় পুরুষ, তোমার জন্য আমার খুব করুণা হয় জানো তো! আমার লেখার নিচে যখন তুমি তোমার অশ্রাব্য গালির ঝুড়ি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো, তখন সেই করুণাবোধ আরও বাড়ে। কী বোকার মতোই না তুমি তোমার নোংরা, কুৎসিত চেহারাটা প্রকাশ করে ফেলো!
আহারে, বেচারা! নিজের পাতা ফাঁদে আটকে পড়ে কী অসহায় ছটফটানি তোমার! “সব পুরুষ এক নয়” বলে চিৎকার করতে থাকো, কিন্তু নিজেরাও সেটা বিশ্বাস করো না একবিন্দু।

নারীর শরীর ঢেকে রাখার এই যে এতো আয়োজন, নারীর শরীর নিয়ে এতো উৎকন্ঠা, উদ্বেগ, তাকে ঘরে বন্দি করার এতো ফন্দি ফিকির, এতো আইন কানুন, তার কারণ কখনো ভেবে দেখেছো কি প্রিয় পুরুষ? কার হাত থেকে বাঁচানোর এতো প্রাণান্ত চেষ্টা? কেনই বা এই আয়োজন?

কারণ কি জানো? পুরুষই পুরুষকে সবচেয়ে বেশি অবিশ্বাস করে, নারী নয়। আমি বলছি শোনো, তুমি তোমার কন্যা, জায়া, জননী বা প্রেমিকাকে আড়াল করতে চাও, বাঁচাতে চাও পুরুষেরই হাত থেকে, নারীর নয় কিন্তু। জনতার ভিড়ে বা নির্জনতায়, ঘরের ভিতরে বা খোলা মাঠে, তুমি নারীদের কাপড়ে মুড়ে প্যাকেট বানাতে চাও, সেও পুরুষেরই ভয়ে। তুমি জানো দেশে কী বিদেশে, কর্মক্ষেত্রে কী গৃহকোণে, মুক্ত আকাশের নিচে বা বদ্ধ জেলখানায়, সর্বত্র পুরুষ তার যৌনক্ষুধা আর বিকৃতি নিয়ে বিরাজমান। ঠিক কিনা বলো?

কোনো বিশেষ প্রয়োজনে তোমার ছোট্ট মেয়েটিকে তুমি আর যার কাছেই হোক, একজন একা পুরুষের কাছে রেখে যেতে নিরাপদ বোধ করো না। একটু বড় হয়ে ওঠা মেয়েকে তো নয়ই। এমনকি তোমার ছোট্ট ছেলেটিও নিরাপদ নয় পুরুষের কাছে। যেকোনো সময় সে ব্যবহৃত হতে পারে গেলমান হিসেবে। তাই না?

তুমি যখন তোমার কন্যা বা স্ত্রীকে বাইরে যেতে দাও না, তখন তুমি পুরুষকে অবিশ্বাস করো। যখন তাদের বলো, নিজেকে ঢেকে রাখো, তখন তুমি পুরুষকে অবিশ্বাস করো। তুমি যখন তাদের বলো ব্যবসা করো না, চাকরি করো না, শিল্পচর্চা করো না, বাজারে যেও না, বাসে উঠো না, গান করো না, সুন্দর হইয়ো না, সব, সব তুমি করো পুরুষকেই অবিশ্বাস করে। এমনকি একই পরিবারের ভেতরেও, আপন আত্মীয়দের কাছ থেকেও নারীকে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় সেই অবিশ্বাস থেকেই। আর এসব করে করে তুমি তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দাও পুরুষ কতোটা বিপদজনক ও বিশ্বাসের অযোগ্য। তোমার কাছেই তারা পায় পুরুষকে অবিশ্বাস করার প্রথম পাঠ।

তুমি যেমন একজন পুরুষ হিসেবে কখনোই আরেকজন পুরুষকে বিশ্বাস করো না, তেমনি তোমাকেও অন্য পুরুষ বিশ্বাস করে না। তা তুমি নিজেকে যতই ভালো দাবি করো না কেন। কেননা নারীর প্রতি তোমার অনিয়ন্ত্রিত লালসাকে নিজের মনে সত্য বলে জানো সবসময়।

এই যখন তোমার অবস্থা, তখন তুমি নারীর কাছে “সব পুরুষ এক না” সার্টিফিকেটের দাবি করো কোন মুখে? তুমি নিজেই তো সেই পার্থক্য করতে অক্ষম। কী হাস্যকর আত্মসংকট তোমার! হায় পুরুষ!

এমনকি ধর্মও তোমাকে বিশ্বাস করেনি কখনো। তাই তোমাকে ইহজগতে সুপথে রাখতে লোভ দেখিয়েছে পরকালের ৭২ হুরের। আর নারীর জন্য সেই একই ময়নার বাপ। কী বুঝিলা হে প্রিয় পুরুষ? কখনো প্রশ্ন জাগে না তোমার মনে যে কেন এরকম বিধান? কেন এই লোভ দেখানো? আরো আছে, ইহজনমে তুমি একসাথে চার বিয়ে করতে পারবে ধর্মমতে। কেন বলো দেখি? তবুও যেনো তুমি তোমার সর্বগ্রাসী লালসা সামলে চলো। তবুও যদি শেষ রক্ষা হয় আরকি!

নারীই বরং যুগে যুগে তোমাকে ভালোবেসে বিশ্বাস করেছে এবং ঠকেছে।

আমি বলি কী, নিজেদের একটু বিশ্বাসযোগ্য করে তুললে হয় না? তাহলেই দেখবে নারীকে নিয়ে এতো ঘেরাটোপের টানাটানি, এতো আইন কানুন, রীতিনীতির দরকারই হবে না আর। নারীবাদীরাও তাদের চিৎকার কমিয়ে দিতে বাধ্য হবে। বেয়াদপ নারীবাদীগুলোকে শায়েস্তা করার এর চেয়ে উত্তম পন্থা আর নেই কিন্তু। বিশ্বাস করো।

আমি মনেপ্রাণে চাই পুরুষ বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠুক, নারীর কাছে তো বটেই, কিন্তু সবার আগে পুরুষের কাছে। তবেই যদি মুক্তি আসে, নারী পুরুষ সকলের।

শেয়ার করুন: