নারীর যোগ্যতা ও পুরুষের ভাবনা

ফারজানা কাজী:

শারীরিক গঠন একটি মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না। কিন্তু শারীরিক সৌন্দর্যকে একটি যোগ্যতা বলেই ধরা হয় মেয়েদের ক্ষেত্রে। একটি মেয়ে কালো না ফর্সা, বেঁটে না লম্বা, মাথায় চুল আছে কী নেই, নাক খাড়া না বোঁচা, এগুলো তার যোগ্যতার (?) মধ্যে পড়ে।

মেয়ের গায়ের রঙ কালো হলে পরিবারের ঘুম হারাম হয়ে যায় তাকে যে কোনো উপায়ে ফর্সা বানানোর চেষ্টায়। মেয়েটি যতই উচ্চ শিক্ষিত হোক না কেন, সেটিকে তার যোগ্যতা হিসেবে দেখতে চাইবে না কেউ। যেন শরীরটিই নারীর সম্বল! আর এই শরীর পুরুষের মনের মতো না হলেই বিপদ!
“সৌন্দর্য থাকে মনে, ব্যক্তিত্বে, থাকে মানসিকতায়। বাহ্যিক সৌন্দর্য ঠুনকো…..”। কথাগুলো আমরা মুখে বললেও বিশ্বাস করি কি?

এখনও বাহ্যিক সৌন্দর্যের কদর সবখানে। ছেলেদের ক্ষেত্রে টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম হলো প্রকৃত সুন্দর। আমাদের দেশে একটি ছেলে যত বেশি ফর্সা হয়, তত বেশি ঠাট্টার পাত্র হয়। ছেলেদের বেলায় শ্যামলা বা কালো রঙের বেশ কদর। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে? যত বেশি গাঢ় হবে গায়ের রঙ, তত বেশি উপেক্ষার পাত্রী হবে সে। বিয়ের ক্ষেত্রে, চাকরির বাজারে সবখানে ফর্সা মেয়ের জয়-জয়কার। আর টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনগুলো তো আরো দশ ধাপ এগিয়ে। কালো রঙকে সাদা বানানোর যে কত রকম প্রচেষ্টা !

কই, পুরুষের সৌন্দর্য নিয়ে তো কোনো চর্চা হয় না! পুরুষ কে তো ভাবতে হয় না নারীর মনের মতো করে ঘষে-মেজে শরীরকে তৈরি করার কথা! একটি পুরুষ যতই কুৎসিত হোক না কেন, একটি সুন্দরী বউ বা গার্লফ্রেন্ড এর আকাঙ্খা সে করে এবং পেয়ে যায়। আলকাতরার মতো কুচকুচে কালো ছেলেও ফর্সা বউ খোঁজে! চকচকে টাক থাকলেও দীর্ঘ চুলের অধিকারিণী মেয়েকে বউ করে আনতে কোনো অসুবিধে হয় না।

নারী চিরদিনই পুরুষের ইচ্ছেতে বন্দী। এক সময়ে হাটে-বাজারে দাসী বিক্রি হতো। সৌন্দর্যের বিচারে তার দাম নির্ধারণ হতো। সময় পালটালেও পুরুষের সেই মানসিকতা বদলায়নি এক ফোঁটা। আজও নারীকে যৌনদাসী ছাড়া আর কিছু ভাবা হয় না।

কেন এত বৈষম্য? একটি মানুষ ভালো না মন্দ তা বিচার করার আগে কালো না ফর্সা তার বিচার করা হয়। বিয়ের পাত্রী কালো হলে মহা সমস্যা। যতোই তার যোগ্যতা থাকুক না কেন! কিন্তু ফর্সা, বোকা-সোকা পুতুল মেয়ে হলে সোনায়-সোহাগা। মেয়েদের ঘরের পুতুল করে রাখতে চায় পুরুষগুলো।

যার ঘরে কালো মেয়ে আছে, কিংবা যার গায়ের রঙ কালো, তারাও যেন কেমন ঈর্ষার চেখে তাকায় ফর্সা মেয়ের দিকে । কালো রঙ নিয়ে কেন এই হীনমন্যতা? গায়ের রঙ নিয়ে চিন্তা না করে শিক্ষায়, ব্যক্তিত্বে, মানসিকতায় অনন্যা হয়ে উঠতে পরিবারগুলো উৎসাহ দেয় না কোনোকালেই। বরং কালো মেয়েকে ঘষে-মেজে পুরুষের মনের মতো করে গড়ে তুলতেই যেন সব অগ্রহ। মেয়েরা কি শুধু পুরুষের মনের মতো হবার জন্যে জন্মেছে? তার নিজের কি নিজের মনের মতো হবার কোনো অধিকার নেই? কেন আমরা সব সময় পুরুষের ভালো লাগার প্রাধান্য দেই?

শেয়ার করুন: