সব উৎসবেরই ভালোটা রক্তে মেশা

জিনাত হাসিবা স্বর্ণা:

উৎসবের আনন্দ আর উচ্ছাস ভালো লাগে। প্রিয়জনদের সাথে সাক্ষাৎ ভালো লাগে। মানুষ, ভীড়, রং সবই ভালো লাগে। শুধু গরম, কর্কশ শব্দ আর ট্রাফিকে আটকে থাকা বাজে লাগে। এতোই খারাপ লাগে যে প্রতিবার ভাবি – “কী আর এমন, গেলামনা কোথাও। থাকলাম নয় বাসায়ই বসে। কেন এত্তো হ্যাসেল পোহানো!” তবু মন মানে না। তবু ঈদে বাড়ি যাই। তবু বৈশাখে ক্যাম্পাসে যেতে চাই। তবু যেখানেই থাকি পূজার সময় একদিন পূজা দেখতে যাই।
ঈদ এখন পরিবারের মানুষদের সাথে সময় কাটানো মাত্র। যতো বড় হয়েছি বুঝেছি ঈদে আমার জন্য এছাড়া আর কিছুই নেই। একদা ঈদে নতুন জামায় ব্যাপক আগ্রহ ছিলো কারণ সারাবছর জামা পেতামনা। এখন সে ব্যাপারও নেই।

বড় হবার পর পূজায় আমার আগ্রহ বেড়েছে। কারণ পূজোয় রঙের ছড়াছড়ি। রঙ ভালো লাগে! বেশকিছুদিন আগে আমার এক ছোটবোনের লেখায় দেখেছিলাম কিছু মানুষের প্রতি ক্ষোভ আর ব্যাঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি আছে ওর। ক্ষোভ তাদের প্রতি, যেসব মুসলিম নামধারী মানুষদের ঈদে অনাগ্রহ থাকলেও পূজায় আগ্রহের কমতি নাই। আমি পুরো না হলেও অনেকটাই এই ক্যাটাগরিতে পড়ি। পড়ি কারণ ঈদে আমার আগ্রহের কোনো কিছু আসলেই নাই। অভ্যাসগত কিছু আকুলিবিকুলি আছে শুধু পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর আছে দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানোর কিছু স্মৃতি।

ঈদ আর পূজার মিল হলো ঈদের মূল আকর্ষণ যে নামায, সেখানে যেমন পুরুষের যাতায়াত; পূজার মূল যে মন্ত্রপাঠ তাতেও পুরুষের ভূমিকাই মূল, পূজার আয়োজনেও নেতৃত্ব দেন পুরুষেরা, পয়সা-পাতির হিসেবও কষেন তারাই। আর তফাৎ হলো রঙে আর অংশগ্রহণে। ঈদে সাদা সাদা পাঞ্জাবি পরে ছেলেরা জমায়েত হয়। রঙ নাই। গান নাই। হই হুল্লোর নাই। কোনো মেয়ের উপস্থিতি নাই। মেয়েদের ঈদ হলো ঘর গুছাও, রান্না করো, আপ্যায়ন করো। নিজের বাসায় এই তালিকা ফলো করা শেষ হলে অন্যের বাসার মেয়েদের গুছানো ঘর দেখতে আর আপ্যায়ন পাইতে অন্যের বাসায় যাও। পূজাতেও মেয়েরা সেই কাটাকুটো, খাবারের আয়োজন, আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায়ই নিয়োজিত।

তবু রঙে আর উদযাপনে সবাই আছে। নারী-পুরুষ-বড়-ছোট-হিন্দু-মুসলিম-রঙীন-সাদা সব মিলে মিশে একাকার। কিন্তু পূজা দেখতেও হতাশ যে হইনি তা নয়। সেবার বগুড়ায়, তারপরের বার গাইবান্ধায় গেলাম মন্ডপে। যে আশা নিয়ে গিয়েছিলাম একদম গুড়েবালি। ঢাক নেই ঢোল নেই, আরতিনৃত্য নেই, এমনকি রঙও নেই বললেই চলে। বিকট শব্দে হিন্দি গান আর তার সাথে উৎকট নাচ। আর যদি একটু রাত হয় তো তাতেও সব ছেলেরাই, মেয়েরা নেই। পূজা বললেই কানে যেসব গান আর বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ভেসে আসে তা পাইনি গত ক’বারের অভিজ্ঞতায়। আগ্রহ তাতে অনেকটাই মিইয়ে গেছে।
তবু এবার একটা লালশাড়িতে খুব চোখ গেঁথেছিলো, শখ হয়েছিলো পূজায় পরবো। কেনা হয়নি। সময় মেলেনি দ্বিতীয়বার যাওয়ার।

ধর্মে আমার আগ্রহ নেই। কিন্তু ঈদ বলি আর পূজা বলি, সব উৎসবেরই ভালোটা রক্তে মেশা। ঠিক দোলা দেয়। ঈদের আগে গাইতে ভালো লাগে- “চাঁদের পালকি চড়ে আসলো সবার ঘরে, আসলো খুশির ঈদ!”। আবার পূজা এলেই মনের আনন্দে গাই- “আয়রে ছুটে আয় পূজোর গন্ধ এসেছে! ঢ্যাম কুড়কুড় ঢ্যাম কুড়াকুড় বাদ্যি বেজেছে!”

হিন্দু হোক আর মুসলিম, সমাজটা তো একই। সংস্কৃতি তাই অভিন্ন। ভালোমন্দ আর ভালোলাগা আর মন্দলাগাগুলিও মিলে মিশে গেছে।
শুভেচ্ছা সবাইকে।
ভালো থাকুক সব।

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

#BeHumaneFirst

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.