‘রাধা’ নয়, আরাধ্যা হয়ে উঠুন

পিংকি মাইতি:

“বনমালী, তুমি আর জনমে হইয়ো রাধা!”-
পরজনমে বনমালীর ‘রাধা’ হওয়ার অপেক্ষা না করে,বরং আপনিই ‘বনমালী’ হয়ে ওঠুন-এ জন্মে, পারলে এখনই-এই মুহূর্তেই!

‘হায়, আমার এ কী হলো গো!’ বলে কপাল না চাপড়ে,নিজের আবেগ, ইমোশন সঠিক স্হানে,সঠিকমাত্রায়, ব্যবহার করতে শিখুন। ব্যবহৃত হতে নয়!

তা নইলে, তিস্তার পানির জন্য আর ‘আপা-দিদি’র গোলটেবিল বৈঠক বসবে না,আপনার চোখের জল-নাকের জলেই,
এ জন্ম,ও জন্ম,সাতজন্ম বাংলার এপার-ওপার দু’পার ভাসবে।
তখন চোখের জল মোছাতে আপনার হাতের কাছে টিস্যু পেপার তো নয়ই, মা-কাকীমার ঘরমোছার ম্যাড়ম্যাড়ে ন্যাতাটুকুও এগিয়ে দেওয়ার জন্য, আপনার থেকে একশো কি.মি এর মধ্যেও কাউকে পাবেন না।

ভুল সময়ে,ভুল মানুষের জন্য ফ্যাঁচ ফ্যাঁচিয়ে, রাতের পর রাত বালিশ ভিজিয়ে- ‘সে কেন আমায় বুঝলো না’ টাইপ সিন ক্রিয়েট না করে,আপনার আবেগ-ইমোশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করে রাখুন।
সঠিক সময়ে, সঠিক মানুষটি আসবেই।আসতে বাধ্য।

নেহাত স্টোর করার মতো স্পেস কিংবা কন্টেইনার না পেলে, ভুল স্হানে আবেগের অপচয় করে, অযথা চোখের পাতা না ভিজিয়ে,বেশ হয়-যদি আপনার আবেগ, ইমোশন-টন গুলোকে কেটে-কুটে-বেটে, তেল-ঝাল-নুন -ধনেপাতা সহযোগে ভর্তা বানিয়ে প্রথম পাতেই খান।
কথা দিচ্ছি-পাতের খাবার ঢের বেশি সুস্বাদু হবে,অরুচিময় জীবনে হারানো রুচি ফিরবে।

বদলা নিন-যে আপনাকে ভুলে গেছে,তাকে ভুলে গিয়ে।
বদলে যান আপনি।
বদলে নিন- আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলো, বিগত অভিজ্ঞতার নিরিখেই।

নিজের আইডেন্টিটি তৈরি করুন।

আগাছা ছেঁটে, বদলে ফেলুন- আপনার চারপাশ।

সম্পর্করা ‘ঢেউয়ে’র মতো, প্রকৃতির নিয়মেই ভাঙবে-গড়বে!
যে সম্পর্কগুলো আপনার জন্মের আগে থেকেই ঠিক করা ছিল,তা আপনি ‘হার্ট অ্যান্ড সোউল’ চেষ্টা করেও বদলাতে পারবেন না।
কিন্তু যে সম্পর্কগুলো সময়ের সাথে সাথেই গড়ে ওঠে? তার দায় কিন্তু একান্তই আপনার!

‘দাম্পত্য কিংবা প্রেম’, পারস্পরিক ‘শ্রদ্ধা-বিশ্বাস’ ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়ার পর,হাজারো ‘শরীরী পিরিতে’ও ‘প্রেম’ তো টেকেই না,উল্টে মনের জ্বলন বেড়েই চলে।
ডেনড্রাইট,ফেবিকুইক বা, বাজার চলতি কোনো গাম দিয়েই নিদাগ জোড়া লাগানো সম্ভব নয়।
আর তাই, মৃত সম্পর্কের ‘এঁটো ঘা’ সংক্রামিত হয়ে ওঠার আগেই সংক্রমণ এড়াতে শল্যচিকিৎসার আশু প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ‘রাখি না কাটি?’- ভেবে অযথা কালবিলম্ব, আপনার জন্যই হানিকারক হয়ে উঠতে পারে।

রাস্তা এখনও অনেক লম্বা।
সুমো না পেলে ট্যাক্সি, ট্যাক্সি না পেলে বাস,বাস না পেলে বাইক।
আর কিছুই না পেলে পায়ে হেঁটে!

মোটকথা-কেউ পাশে থাক্ বা না-ই থাক্, শুয়ে-বসে-কেঁদে-কেটে বালিশ ভিজিয়ে দিন কাটালে চলবে না।
বাকি পথটা আপনাকে দৌড়োতেই হবে- আপনার নিজের জন্য,’আপনার যারা’ তাদের জন্য।

‘মা কী বলবে,মাসি কী বলবে,পিসি কী বলবে,পাশের বাড়ির রাঙা জ্যাঠি কিংবা হলুদবাড়ির ন’ দাদু, হাসান খুড়ো,রকে বসা সুমন-শক্তি-রাহুল-জলিল কী বলবে’ এসব সাত-পাঁচ না ভেবে,বাঁচুন নিজের মতো।চোখ রাখুন- সোজা রাস্তায়,হাঁটুন ঘাড় সোজা রেখে!

আয়নায় চোখ রেখে, খুঁজে খুঁজে নখ দিয়ে পিম্পল না খুঁটে,খুঁজে বের করুন- আপনার
মধ্যে লুকিয়ে থাকা ‘পারা আর না পারা’ গুলোকে!
কনসিলার দিয়ে ‘না পারা’গুলোকে ঢেকে না রেখে, চেষ্টা করুন ‘পারতে’!
আপনি ঠিক পারবেন-ই।

আর বাদবাকি যা যা আপনি পারেন-তা কাজে লাগাতে চেষ্টা করুন।
এতে করে হয়তো- আপনার মুখের ওপর অনেক অনেক ক্যামেরার ফ্লাশ ঝলসে উঠবে না, অটোগ্রাফের জন্য আপনার চারপাশে ভিড়ও জমবে না,কিন্তু দিনের শুরুতেই ‘দিন’কাটাতে কিছু টাকার জন্য, ঘরের মেঝেতে চোখ রেখে, অন্যের সামনে মাথা নিচু করে, হাত কচলাতেও হবে না।

“আমার কিছু টাকা চাই।” -এহেন ঘৃণ্য সংলাপটিকে আপনি চাইলেই “তোমাদের কিছু টাকা চাই?”এ সগৌরবে ডাইভার্ট করতে পারেন।

এখন সিদ্ধান্ত আপনার!

হাঁটবেন আপনি। রাস্তাও বেছে নিতে হবে আপনাকেই! ব্যর্থতা ঢাকতে কনসিলার নাকি প্লাস্টিক সার্জারি?

ছুটতে গিয়ে হোঁচট খান,হুমড়ি খেয়ে পড়ুন,সেও ভি আচ্ছা!

কিন্তু রানওয়েতে প্লেনের ল্যান্ডিং দেখেছেন? কিংবা যখন ধীরে ধীরে আকাশে পাখা মেলে?
ফ্যাশন ম্যাগাজিনের কভারপেজের মডেলদের মতো পেনসিল হিল নয়, বাস্তবের মাটিতে পা রেখে, দৌড়োতে হলে-ওসব আবেগ,ইমোশন-টনের গায়ে শার্পনার বুলিয়ে, স্পোর্ট শু -ই চাই।

কে বলতে পারে- হেলদি পার্স আর ব্যক্তিত্বের প্রখর ঝলকানিতে আপনার সেই সো কল্ড ‘প্রেমিকপ্রবর’ টি অতি আবেগে গলা ছেড়ে ‘ফিরে এলাম দূরে গিয়েও’ গেয়ে উঠবে না!

তখন না হয়, সবভুলে আপনিও….!
?
একসাথে গলা মেলাবেন-” ফিরে এলাম দূরে গিয়ে আমি তোমার অনুরাধা
ডেকো তুমি মোনালিসা ভেঙ্গে দিলাম সব বাধা ….ও … তুমি কেমন ছিলে বলো , আঁখি কেন ছলছল……….”

আর তেমন বেগতিক বুঝলে-সালাড কুচোনোর স্টেইনলেস ছুরি তো আছেই!

এই না-না! আপনার কিংবা আপনার ‘ওনার’ বুকে নয়।
টার্গেট ঠিক করুন। ট্রিগার টিপুন- সোওজা টুকটুকে লাল গোলাপটার বুকে!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.