শারমিন জান্নাত ভুট্টো:
আশেপাশের অনেক চলমান ইস্যুতে অনেকটাই হারিয়ে গেছে রূপা। দুফোঁটা জল বিসর্জন করে আমরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছি আমাদের প্রতিদিনকার জীবন নিয়ে। কীই বা করার আছে আমাদের ছোট্ট পরিসর থেকে, এই প্রশ্নটি নিশ্চয় অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
সমস্যার সমাধান সব সময় আইনি প্রক্রিয়ায় দ্রুত করা না গেলেও অন্তত এই সমস্যাগুলো পরবর্তীতে যাতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেকারণে কোনো নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার প্রচলন করা যেতে পারে। হতে পারে এ প্রক্রিয়াগুলো ব্যয় কিংবা সময়সাপেক্ষ, তবে অসম্ভব কিছু না বলে আমি মনে করি।
১. রূপাকে যে বাসে ধর্ষণ করা হয়েছিলো সে বাসের কোনো তথ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নেই। “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার প্রত্যয়ে যখন দেশ এগোচ্ছে তখন এর ছোঁয়া থাকা দরকার সর্বস্তরে। বাংলাদেশে কতগুলো সরকারি ও বেসরকারি বাস সার্ভিস রয়েছে সেগুলোর সংখ্যা, মালিক ও চালকদের পূর্ণ তথ্য থাকা দরকার বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির কাছে। যাতে রাস্তাঘাটে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে তথ্য সরাসরি পেয়ে যায় নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গিবাদ ঠেকাতে যদি বাড়িওয়ালারা তাদের ভাড়াটিয়ার সব তথ্য নিকটস্থ থানায় দিতে বাধ্য থাকেন, তবে কেন ধর্ষণ ঠেকাতে একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যাবে না? আর এ পদক্ষেপ নিলে কেউ আর কোনদিন যানবাহনের ভেতর ঘৃণ্য কোন অপরাধ করার সাহস পাবে না।
২. গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, অফিস-আদালত, বাসা-বাড়িতে ইদানিং আমরা সিসিটিভির সংযোগ দেখতে পাই। একইভাবে দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাতে সিসিটিভি প্রতিস্থাপন বাধ্যতামূলক করা দরকার। যুক্তরাজ্যসহ উন্নতবিশ্বের দেশগুলোতে আমরা এ ধরনের ব্যবস্থা দেখতে পাই। যার কারণে কোন যাত্রী যদি অন্য কোন যাত্রীর প্রতি সামান্যতম কোন বৈষম্যমূলক আচরণ করে, তবে সেটিরও রক্ষা নেই। কারণ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে বৈষম্যমূলক আচরণ করা সেই যাত্রীকে ঠিকই আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। আর এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্যরা সতর্ক হয় দুভাবে।
এক, যারা অপরাধী মন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা আর সাহস পায় না এ ধরনের নোংরা কাজ করতে। দুই, যারা কোন ধরনের নির্যাতনের আশংকায় থাকে, তারা জানে সিসিটিভির ফুটেজের মাধ্যমে অপরাধীকে ঠিকই সনাক্ত করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা যাবে আর এ কারণে অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকে।
৩. দূরপাল্লার যানবাহনে জিপিএস ডিভাইসের আওতায় আনা হয় তবে সহজেই জানা যাবে যানবাহনগুলোর গতিবিধি। যদি কোনো বাহন অনুমতি ছাড়া হঠাৎ করে তার গতিপথ বদলায় তবে এ ডিভাইসটি সরাসরি সিগন্যাল প্রেরণ করতে থাকবে কন্ট্রোল রুমে এবং তার সাথে সংযুক্ত থানায়। আর এভাবেই হয়তো প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে কমিয়ে আনা যাবে অপরাধ ও বিচ্যুতি।
৪. একটু আগে বলা হচ্ছিল জিপিএস ডিভাইসের কথা। সেটির সাথে আরো সংযুক্তি ঘটতে পারে প্যানিক বাটনের যেটির সংকেত পৌঁছে যাবে প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। কোন যাত্রী কোনো বিপদের আশংকা আঁচ করতে পারলে সাথে সাথে প্যানিক-বাটন চেপে জানান দিতে পারবে তার অবস্থানের কথা। প্যানিক-বাটন সংকেত আর সেই মুহূর্তে যানবাহনের ভেতরকার সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিতে পারবে ত্বরিৎ অ্যাকশন/পদক্ষেপ।
৫. নারীদের জন্য সহজে মনে রাখা যায় এমন হেল্পলাইন সার্ভিস নম্বর। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে ইতিমধ্যে, যার নম্বর হচ্ছে ১০৯২১। অবশ্যই ভালো উদ্যোগ এবং সাধুবাদ জানাতে হয় সরকারকে, তবে সমস্যা হচ্ছে বিপদের সময় এই ৫ ডিজিটের নম্বরটি মনে রাখা কিংবা মনে পড়া বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার হবে। এর পরিবর্তে যদি সহজ কোন ইমার্জেন্সি নম্বর এই যেমন ১১১ কিংবা ১২৩ চালু করা হয় এবং কেউ বিপদে পড়ে এ হেল্পলাইনে ফোন করলে তার অবস্থান (লোকেশন) যাতে সনাক্ত করা যায় সহজে এবং গুরুত্ব অনুযায়ী নিকটস্থ থানা থেকে যাতে পুলিশি সহায়তা পাওয়া যায়। উন্নত বিশ্বের দেশ যেমন আমেরিকায় ৯১১, যুক্তরাজ্যে ৯৯৯ চালু আছে, যেখানে ফোন করে কোন ব্যক্তি তার পরিস্থিতি অনুযায়ী পুলিশ, মেডিকেল এবং দমকল বাহিনীর কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে থাকে।
৬. কোন নারী বা শিশু কোন ধরনের নির্যাতনের শিকার হলে কেনো তার পরিবারকেই সব ধরনের আইনি ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে মহিলা ও শিশু বিষয়ক একটি মন্ত্রণালয় আছে এবং আমি মনে করি তাদের উদ্যোগী হয়ে নির্যাতিত নারী ও শিশু এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কারণ অনেক সময় ওইসব পরিবার সমাজ ও প্রভাবশালী বিভিন্ন মহল থেকে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হয় এবং অনেক সময় বঞ্চিত হয় সঠিক বিচার থেকে। আবার অনেক পরিবার জানেই না ঠিক ওই মুহূর্তে তাদের কী করা দরকার।
আর সবশেষে বলতে পারি, কোন অঘটনের যাতে পুনরাবৃত্তি ঘটতে না পারে সেজন্য দরকার একটি দৃষ্টান্তমূলক বিচার। অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা গেলে অন্য আর যে কেউ কোনো ধরনের অপরাধ করতে সাহস পাবে না। সবার জন্য সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ বিকশিত করতে চাইলে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর কনসেপ্টটিকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সমান তালে। নির্যাতন ও ধর্ষণ ঠেকাতে প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহার শুরু হোক এখন থেকেই। শুরু হোক রূপার থেকেই……………………..
(এই লিখাটি লিখতে গিয়ে আমাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত ও আলোড়িত করায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি-বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আবদুন নূর তুষারকে)