পাঠ্যপুস্তকে মেয়েদের ‘সহনশীল’ হওয়ার শিক্ষা!

উইমেন চ্যাপ্টার:

অষ্টম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইতে মেয়েদের যৌন নিপীড়ন থেকে আত্মরক্ষার কিছু কৌশল বলা আছে।

– বাড়িতে কখনই একা না থাকা।

– অন্যকে আকর্ষণ করে এমন পোশাক না পরা।

-মন্দ স্পর্শ করলে এড়িয়ে যাবে অথবা পরিত্যাগ করবে

– পরিচিত অপরিচিত কারোর সাথে ঘুরতে না যাওয়া।

– পাড়ার বখাটে দলের হয়রানিতে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না দেখায়ে কৌশল অবলম্বন। যেমন জুতা খুলে দেখানো, চড় দেখানো, গালাগাল না করে বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি সামলানো।

ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, একটি পাঠ্যবইতে এমন ধরনের কথা লেখা আছে, যা একজন মেয়ের জন্য চরম অবমাননাকর। এখানে নিজ বাড়িই যদি একটি মেয়ের জন্য নিরাপদ আবাস না হয়, তাহলে কোথায় যাবে মেয়েটি? দ্বিতীয় পয়েন্টটিতে পরোক্ষভাবে ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাককেই কিন্তু দায়ী করা হচ্ছে। মন্দ স্পর্শ করলে এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এটা কোন সময়ে বাস করছি আমরা? কেন এড়িয়ে যাবে মেয়েরা? উল্টা দু ঘা লাগিয়েই না ফিরবে তারা বাসায়, সেই শিক্ষাটা দেয়া হোক। যারা মন্দ স্পর্শ করবে, তাদের কিছু না বলেই ছেড়ে দেবে মেয়েরা?
পাড়ার বখাটে ছেলেদের মানুষ হতে না বলে তাদের সাথে কৌশল অবলম্বন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কথা হচ্ছে, কোন গাঞ্জাখোর এ ধরনের লেখা ছাপানোর জন্য সিলেকশন কমিটিতে আছে? তাকে বা তাদেরকে আগে শিক্ষা দেয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট রাফী শামস্ এক প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ক্লাস এইটে পড়া একটা মেয়ে যদি নিজ বাসায় ‘একা’ নিরাপদ না হয়, তাহলে পৃথিবীর কোথাও সে নিরাপদ না। পোশাক এর ব্যাপারে আর কতবার বলবো! মূর্খদের কথা বাদ দেই, অনেক শিক্ষিত মানুষও ‘পোশাকের জন্য নারীরা হয়রানির শিকার হয়’- এটা বিশ্বাস করে।

পরিচিত বা অপরিচিত কেউ নোংরাভাবে গায়ে হাত দিলে তাকে কষে থাপ্পড় মারার শিক্ষা দেবার বদলে এড়িয়ে যাওয়ার শিক্ষা দেয়ার ফলেই,এই পরিচিত -অপরিচিতরা আবার গায়ে হাত দেয়ার সাহস পায়। প্রথমবারেই প্রতিহত করতে না পারলে এরা আপনাকে পেয়ে বসবে।

একা বেড়াতে যেতে নিষেধ না করে সরাসরি লিখলেই পারতো যে অন্ত:পুরে বন্দী থাকা (আবার ঘরে একা থাকাও মানা!)। ‘মন্দ স্পর্শ’ টের পেলে বাবা-মা’কে জানানো- এই একটা একমাত্র লজিকাল পয়েন্ট, সেই সাথে নিজেকেও তাৎক্ষণিক ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। শেষের পয়েন্টটাও আপত্তিকর। প্রতিবাদ না করলে পেয়ে বসবেই। তবে প্রতিবাদের ধরন অবস্থাভেদে নানা রকম হতে পারে।

আধুনিক পৃথিবীর আলোকে আসলে পয়েন্টগুলো কী হওয়া উচিত-
* বাড়িতে একা থাকলে সাবধান থাকতে হবে।
* পরিচিত বা অপরিচিত কেউ গায়ে হাত দিলে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে।( কষে থাপ্পড় মারতে পারলে ভালো)।
* একা ঘুরে বেড়ানোর মত স্বাবলম্বী ও সাহসী হতে হবে।
* মন্দ স্পর্শ টের পেলে তা অবশ্যই বাবা মা এবং আশেপাশের সকলকে জানাতে হবে এবং প্রতিবাদ করতে হবে। এরকম অবস্থায় জোরে জোরে ধমক-টমক দিতে পারলে কাজ হয়।
* পাড়ার বখাটেরা বিরক্ত করলে প্রতিবাদ করতে হবে এবং পুলিশকে জানাতে হবে।
* সেলফ ডিফেন্স এর জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে মার্শাল আর্টের বেসিক জিনিস গুলো শিখতে হবে।
আপনার সন্তানকে সুশিক্ষা দিন, তাকে বলুন, পাঠ্যবই- এ আমরা যা পড়ি তার সবই সত্যি না, এতে অনেক মিথ্যা বস্তাপচা কথা লিখে রাখে বাতিল বুড়োরা। সুশিক্ষার জন্য তাকে বেশি বেশি ‘আউট বই’ পড়তে দিন।

আশা করি, পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেবেন এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনবেন।

শেয়ার করুন: