এই পোড়া দেশে আর কোনো মেয়ে জন্ম না নিক

সাদিয়া অন্তরা:

ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই কেউ কেউ বলে উঠে, সব পুরুষ সমান না। আমিও মানি, সবাই সমান না। এইসব ধর্ষকরা তো আপনাদের কারো না কারো এলাকার লোক, কারো না কারো তো পরিচিত, এমনকি ভাই-কাকা-মামা-আত্মীয়ও। তো, আপনারা যারা আছেন “ভালো পুরুষ” আপনাদের পৌরুষ দেখান আজ। ঘর থেকে টেনে বের করে আনেন এই সব ধর্ষকদের, হাতের জোর দেখান। আমাদের দেশে চোরও যদি সামান্য মোবাইল চুরি করতে যেয়ে একবার ধরা পড়ে, তাহলে গণধোলাইয়ের কারণে মারাও যায়, কিন্তু এই ধর্ষকরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায় এই সমাজে!!

আচ্ছা আপনাদের সামনে যখন কোনো মেয়ে ইভটিজিং এর শিকার হয়, তখন আপনারা কি তার প্রতিবাদ করেন? বুকে হাত দিয়ে সত্যি বলুন তো! দেখেও না দেখার ভান করে চলে যান। এইসব ইভটিজারদের ধরে আপনাদের পৌরুষ দেখান প্লিজ। সামনে কোনো মেয়েকে লাঞ্ছিত হতে দেখলে চুপ করে না থেকে থাপ্পড় মেরে কয়েকটা দাঁত অন্তত ফেলে দেন। কারণ এই ইভটিজারগুলোই পরবর্তীতে ধর্ষণ এর মতো কাজ করে, কারণ তারা জানে সবসময়ই এই ধরনের ঘটনায় মেয়েদের দিকেই আংগুল উঠে, এমনকি মেয়েটির মরে গেলেও।

অনেকেই বলেন পোশাকের কথা, বাংলাদেশের কোন মেয়ে এতোই খারাপ পোশাকে ঘুরে যে তাকে ধর্ষণ করতে হবে? আট মাস বয়সী শিশু, তিন বছরের শিশু, পাঁচ বছরের শিশু যখন ধর্ষণের শিকার হয়, তখনও কি পোশাকের কথাই বলবেন? আপনারা হিজাবের কথা বলেন, আচ্ছা আপনারা কি ধরেই নেন যে দেশের সব মানুষ একই ধর্মের অনুসারী, যে সবাই একই পোশাক পরে পর্দা করবে? একজনের ধর্মে যেটা পর্দা, অন্য ধর্মের জন্য তা নয়, এটাও কি আপনাদের মাথায় আসে না? আচ্ছা সেটাও মানলাম যে পোশাকে সমস্যা আছে। তো, সেই কারণে কি তাকে ধর্ষণ করে বুঝান যে তার পোষাকে সমস্যা?? হাস্যকর নয় কি?

ধর্ষণের বিচার আমি চাই না। কেন চাই না জানেন? কারণ বিচার হতে দেখি না। আসামীরা জামিন পেয়ে যায়। জামিন পেয়ে আবার তারা ধর্ষণ করে, এমনকি খুনও করে। তাই বলছিলাম কী, পুরুষদেরকে একমাত্র প্রতিহত করতে পারবে পুরুষরা। সবাই যে খারাপ না, আপনারা দয়া করে প্রমাণ করে দেখান। মা, বোন, স্ত্রীর জন্য তো নিরাপদ দেশ বানাতে পারেননি, অন্তত নিজের কন্যা সন্তানের কথা চিন্তা করে হলেও কিছু একটা করুন। সেটা না পারলে নিজের ছেলে সন্তানকে মানুষ হিসেবে বড় করুন, শুধুমাত্র পুরুষ হিসেবে নয়।

সেটাও না পারলে কন্যা সন্তানকে মানুষ মনে করুন, না পারলে তাকে এই দুনিয়াতেই আনবেন না। কারণ কতোগুলো থাবা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন মেয়েকে? মেয়ে তো ঘরেও নিরাপদ নয়। কিছুদিন আগে একটা সাড়ে তিন বছরের বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণের পর তাকে মেরে বাথরুমের কমোডে ফেলে রেখেছিলো ধর্ষক, মনে আছে?? ভুলে গেছেন নিশ্চয়ই, খুব স্বাভাবিক। রূপাকেও ভুলে যান সমস্যা নেই। তবে ভবিষ্যৎ এ আপনাদের কন্যা সন্তানদের জন্য এখনই যদি এই ধর্ষকদের সাজা দিতে না পারেন, প্রতিহত করতে না পারেন, তবে, ঘরের কোণে বসে প্রার্থনা করুন।

এই পোড়া দেশে যেন আর কোনো কন্যা সন্তানের জন্ম না হয়
বন্ধ্যা হোক এই ধরিত্রী
নারীশূন্য হোক এই দেশ
তবেই বাঁচবে নারীর মান

শেয়ার করুন: