নারীবাদ নির্বংশ হোক!

ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী:

সারা দেশজুড়ে  আজ শুধু আনন্দ সংবাদ!
পত্রিকা, টেলিভিশন, সামাজিক গণমাধ্যম – কোথাও আজ কোনো নারী নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়নি!  আজ দেশের অলিতে-গলিতে, আনাচে-কানাচে, কোথাও কোনো স্কুলকলেজগামী ছাত্রী বখাটে ছোড়াদের হাতে হেনস্থা হয়নি।

ইভ টিজারের উৎপাতে, অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে কোনো কিশোরীকে আজ দুয়ার এঁটে গলায় দড়ি দিতে হয়নি! ইভ টিজিং কাকে বলে ভাইসব? আমাদের দুধেভাতে বেড়ে ওঠা বাছারা কি ওসব নচ্ছার কাজ করতে পারে? 

পথেঘাটে, হাটেবাজারে, নিউমার্কেটে, সুপারশপে, বাস স্টপেজ, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, বিমানবন্দর, অফিস-আদালত  – কোথাও কোনো মেয়ের শরীর চোখ দিয়ে মাপেনি কেউ! আজ কোনো নারীযাত্রী বাসে ওঠার সময় ড্রাইভার ইচ্ছাকৃতভাবে একটু করে এগিয়ে একটু করে ব্রেক চাপেনি, যাতে মেয়েটি টাল সামলাতে না পেরে হেল্পারের গায়ে পড়ে যায়! শুধু কী তাই? মেয়েদের শরীরের এখানে-সেখানে হাত দেয়ার জন্য বাসে কচি থেকে বুড়োহাবড়া – একজনও নপুংসক পুরুষ পাওয়া যায়নি গত চব্বিশ ঘণ্টায়!  রিকশাওয়ালা, দোকানদার, লেগুনা বা বাসের কন্ট্রাক্টর কেউ আজকে ভাড়ার টাকা নেবার ছলে কোনো মেয়ে যাত্রীর হাতে চাপ দিতে চেষ্টা করেনি ! 
গাউসিয়া – নিউমার্কেটের হকার, দোকানদার  থেকে দর্জি, ছাত্র – শিক্ষক – সহপাঠী- সহকর্মী থেকে কর্পোরেট বস কারো মুখ – হাত – চোখ আজ নিশপিশ করেনি শাড়ি – জিন্স কিংবা হিজাব ভেদ করে নারীর মুখ- বুক- নিতম্ব দেখে! 
সব বয়সী পুরুষের চোখ – হাত – দাঁত – জিহ্বা সহ যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আজ যারপরনাই সংযত ছিল! 
আজ দেশে কোনো প্রেমিকরূপী গুপ্তঘাতক নেই। প্রতারক প্রেমিক বা স্বামীর হাত থেকে আজ কোনো অষ্টাদশী পতিতালয়ের দালালের কাছে বিক্রি হয়ে যায়নি, পাচার হয়নি! প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের হাতে হাতে আজ গোলাপ , বেলি, কৃষ্ণচূড়া আর হৃদয় উপচে পড়া কবিতার বসন্তবার্তা! কোনো সুযোগসন্ধানী বন্ধু, প্রেমিক আজ লিটনের ফ্ল্যাট খোঁজেনি, নগ্ন ছবি, ভিডিও তুলে ব্ল্যাকমেইল করেনি, ফেইসবুক বা ইউটিউবে ছেড়ে দিয়ে হায়নার হাসি হাসেনি!  প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দেশের কোথাও কোনো সুন্দর মুখ এসিডে ঝলসে দেয়া হয়নি !  
যৌতুকের দাবিতে কোনো স্বামী আজ তার স্ত্রীকে  নির্যাতন বা খুন করেনি ! যৌতুক না পেয়ে, সন্তান না জন্মানো অথবা কন্যাসন্তান প্রসবের দায়ে কোনো মেয়েকে শ্বশুরালয় থেকে অপমানিত,  নির্যাতিত,  বিতাড়িত হতে হয়নি !  ফতোয়াবাজরা আজ কোনো ধর্ষিত মেয়েকে ব্যাভিচারের দায়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখে বেদম প্রহার করেনি ! সন্তান জন্মের আশা পূরণ করতে বা  জ্বীন – ভূতের আছর ছাড়ানোর নামে কোনো  ভণ্ডপীর নারীদেহ সম্ভোগ করেনি !
কোথাও কোনো নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের মতো বর্বরতা ঘটেনি!  না, কোনো শিশুকেও গৃহকর্মে নিয়োগ দেয়া হয়নি! নারী শ্রমিকেরা আজকে পুরুষের সমান মজুরি পেয়েছে। 
আজ সারাদেশের কোথাও কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি!  ০ – ১০০ সব বয়সী এবং সর্বস্তরের শিশু এবং নারীরা আজ শতভাগ নিরাপদ ছিল পরিবারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, গণপরিবহনে, কর্মক্ষেত্রে, অনলাইনে! 
আজ কোথাও নারী- পুরুষের বৈষম্য ভুলেও চোখে পড়েনি! ঘরে – বাইরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে তারা। দিন ও রাতের কোনো সময়ই একা চলাচলে ভয় পায়নি,  বাধাপ্রাপ্ত হয়নি নারীরা। 
কর্মজীবী নারীদের গৃহকর্মে ও সন্তান লালনপালনে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে পরিবারের পুরুষ সদস্যগণ!
আজ সারাদেশে একজনও বিকৃতমনস্ক, নির্যাতনকারী , যৌন হয়রানিকারী, ধর্ষক পুরুষের সন্ধান পাওয়া যায়নি ! অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত,  উচ্চশিক্ষিত, সুশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত সকল স্তরের, সকল প্রজাতির  পুরুষেরা আজ সভ্যতার নজিরবিহীন ইতিহাস রচনা করেছে। আজ তাদের মুখ থেকে, কলম থেকে, কী – বোর্ড থেকে একটিও অশ্লীল শব্দ উচ্চারিত হয়নি, পৃথিবীর কোনো নারীর শরীর – বয়স – চরিত্র – পোশাক – পেশা নিয়ে ! আজ একটি দিন অন্তত তাদের মায়েদের ” কী শিক্ষা দিলেন ছেলেকে ” – এ নিয়ে লজ্জিত হতে হয়নি!
পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থেকে পাবলিক প্লেস – সর্বত্র এক অভূতপূর্ব নারীবান্ধব পরিবেশ !বলা বাহুল্য আজ থেকে দলেদলে নারীবাদীরা অবসরে যাচ্ছে। তাদের জারিজুরি শেষ। আজ থেকে তারা বেকার, কর্মহীন ! ” নারীবাদী ” গালিটাও আজ থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে ! 
আর কোনোদিন এদেশে নারী দিবস পালন করার প্রয়োজন হবেনা ।
নারীবাদ ! পুরুষতন্ত্র ! বৈষম্য !  পারিবারিক নির্যাতন ! ধর্ষণ !  কোন ভিনগ্রহ থেকে এসব আজগুবি শব্দ উড়ে এসে জুড়ে বসেছে কে জানে ! 
ওহে বন্ধুগণ ! বুকের পাটা থাকলে, মায়ের সন্তান হয়ে থাকলে এগিয়ে আসুুন, দিন না মেয়েদের জন্য এমন একটি দিন ! আর কিচ্ছু করতে হবেনা, নারীবাদ নির্বংশ হয়ে যাবে।
ভালো করে বুঝুন, লড়াইটা পুরুষের বিরুদ্ধে  নয়, পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে। মানুুুুষের পক্ষে, 
মানবতার দাবিতে।
পারলে পাশে থাকুন। নাহলে সরে দাঁড়ান, একাই লড়তে দিন। 
শেয়ার করুন: