স্বকীয়া-পরকীয়ার জোয়ারে আমার শিক্ষা সফর

ইশরাত জাহান ঊর্মি:

এইটা আমার জন্য শিক্ষা সফর হলো। কোনরকম রাগ-দু:খ-বেদনা-ক্ষোভ নয়, আমি সত্যি বলছি, অনেককিছু শিখলাম। “পরকীয়া-স্বকীয়া” বিষয়ে কয়েকদিনের ফেসবুক এবং ফেসবুকের বাইরে যে দুচারজনের সাথে আমি ওঠা-বসা করি, চা খাই আড্ডা দেই,কো-অপারেশনের সম্পর্ক রাখি, মিশি বা শেয়ার করি ছোটখাটো সুখ-দু:খ তাদের সবার কাছ থেকে শিখলাম। যা যা শিখলাম বা যা আমাকে ভাবালো, ভাবতে প্রাকটিস করালো বা চিন্তা করতে বললো তা প্রত্যেকের জন্যই ভাবনার খোরাক যোগাবে। কোন যুক্তি বা পাল্টা যুক্তি নয়, শুধু মানুষের ভাবনাগুলোর রিফ্লেকশন আমি তুলে ধরছি। 

প্রথমত: গাছেরটাও খাওয়া তলারটাও কুড়ানো।এই ভাবনা যারা ভাবছেন তারা বলতে চাইছেন সেইসব নারীদের কথা, যারা বিবাহিত। স্বামীর সাথে সুখে সংসার করছেন। কেউ কেউ স্বামীর টাকাতেই দিনাতিপাত করছেন। স্বামীর সাথে বেড়াচ্ছেন, স্বামীর সাথে সামাজিক সব কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন এবং সেই স্বামীকে আবার শারীরিক-মানসিকভাবে পছন্দ করতে পারছেন না।অন্য কোন পুরুষকে তাদের পছন্দ হচ্ছে। মানসিক এবং শারীরিকভাবে একাত্ন হতে চাইছেন অথচ বিয়ে নামের প্রতিষ্ঠানটির সকল সুবিধা গ্রহন করছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ভাঙার সাহস আবার তাদের নাই। বা সুবিধা পেয়ে তা ভাঙার কথা ভাবছেন না। তারা পরকীয়াকে যৌন সুখ মেটানোর পন্থা ভাবছেন এবং এটাকেই মানে পরকীয়া করাকেই নারীবাদ বলে ভাবছেন।

দ্বিতীয়ত: সব পুরুষকে ঢালাওভাবে বর্বর, ধর্ষক বলা। এই ভাবনাটি অত্যন্ত সিগনিফিকেন্ট। সব পুরুষ তো আর ধর্ষক না। যদি আমি বলি “নারীরা ছলনাময়ী” তাহলে যেরকম জেনারালাইজ করা হয় সেরকমই সব পুরুষই ধর্ষক সেটা বললে নারীবান্ধব পুরুষদের গায়েও লাগে। নারীবাদ নিয়ে যারা লিখেন বা লেখালেখি করেন তারা পুরুষদের সম্পর্কে তীব্র বিদ্বেষ ছড়ান। আমাকে আমার অত্যন্ত কাছের একজন মানুষ উইম্যান চ্যাপ্টারে ছাপা হওয়া এরকম কিছু লেখার উল্লেখ করেছেন। তিনি এই পত্রিকা পড়েন না, তার কোন এক বন্ধু পত্রিকাটির কয়েকটি লেখা একত্র করে তাঁকে দেখিয়েছেন যেখানে সকল পুরুষদের ধর্ষক, বর্বর বলা হয়েছে। (পুরুষ নয়, পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে-এরকম হাজারটা লেখা এখানে ছাপা হলেও সেগুলো একত্র করে কেউ তাকে দেখায়নি।)

তৃতীয়ত: নারীবাদ চর্চা করা নারীরা অপার অশিক্ষিত। তারা ভার্জিনিয়া উলফ পড়েননি, মেরি ওলস্টোনক্রাফট পড়েননি, সিমন দ্য বোভোয়ার পড়েননি, ডলস হাউজ পড়েননি, তলস্তয়সহ বিশ্বসাহিত্যে নারী নিয়ে যেসব ভাবনার কথা বলা হয়েছে সেসবের পাঠ নেননি। নিজের জীবনের কিছু বাজে অভিজ্ঞতাকে বাটখারা করে এই আইডোলজির বারোটা বাজাচ্ছেন। যেহেতু পড়াশোনা করেননি সেহেতু সমস্তকিছু নিয়ে ট্রল করাকেই মনে করেন স্মার্টনেস।

চতুর্থত: নারীবাদ যে মূলত: শ্রেণীসংগ্রাম এবং বঞ্চনার ইতিহাস খণ্ডন, শ্রেনীবিভাজন থেকে যে এটা আলাদা নয় সেই পাঠও তারা নেননি। ফলে স্বামী বা কাছের আত্নীয়র সাথে গৃহকর্মীর যৌন সম্পর্ক থাকলে তারা গৃহকর্মীরই দোষ খুঁজে পান, স্বামী বা আত্নীয়কে কিছু বলার সাহস রাখেন না। শ্রেণী সংগ্রামের পাঠ না নিলে কোন কিছুই যে সমতার হবে না এইটা তারা জানেন না।তারা গামের্ন্টস এর নারীর বঞ্চনার কথা বলেন না, গ্রামের প্রান্তিক নারীর বেদনার কথা জানেন না শুধু নির্দিষ্ট একটা শ্রেণী নিয়ে লাফান।

পঞ্চমত: তারা অত্যন্ত একপেশে। 
শুধু নিজেদের কষ্ট-অবদমনের কথা বলে। পুরুষেরও আবেগ আছে, কষ্ট আছে, মান-অপমান আছে এবিষয়ে তারা সোচ্চার নয়। আধুনিক পুরুষেরা অত্যন্ত সচেতন নারী অধিকারের ব্যাপারে তারপরও নারীরা কিছু বাজে বিষয় অকারণে টেনে এনে শত্রু বাড়ান।পুরুষকে ইনক্লুসিভ করে এই অধিকার আন্দোলনে না নিয়ে বরং তাদের দূরে ঠেলে ঠেলে কাজ করা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হলো, তনু হত্যা বা আরও আরও নারী হত্যার বিষয়ে এইসব লেখালেখি করা নারীরা কখনও রাস্তায় নামেননি।

ষষ্ঠত: এই নারীরা মূলত: বেশ্যা। 
কর্পোরেট বেশ্যা। যা কিছু সুন্দর, সামাজিক তা তারা ভেঙে ফেলতে চান। মূলত যৌন স্বাধীনতা চান যা তসলিমা নাসরিন অনেক আগেই বলে গেছেন।

আগেই বলেছি একয়দিন নিউজফিড দেখে এবং নিউজফিডের বাইরের লোকদের সাথে কথা বলে এটুকু বুঝেছি। আরও কেউ কিছু যোগ করতে চাইলে স্বাগতম। নারীবাদ এর প্রাথমিক পাঠ বা অ আ ক খ শেখার সময় আমাদের এসেছে এখন। আর আসুন সকলে ভাবি, ভাবাটা প্রাকটিস করি। এইটা অবজারভেশন, এনালিসিস যদি কেউ করেন খুব খুশি হবো। সবাই ভালো থাকুন।

শেয়ার করুন: