নারী, তুমি এতোটা দাসত্বকামী কেন?

জাকিয়া সুলতানা মুক্তা:

একসময় দেনমোহরের বিষয়টাকে যেমন শিখেছিলাম, তা ছিলো এমন~
এই রীতি নারীর মর্যাদা, সম্মান ও নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করে।
না বুঝে তা বিশ্বাসও করতাম আর এখনও স্বাবলম্বী নয় এমন নারীর জন্য তা বিবেচনা করার মতোন একটি পন্থা বলে আংশিক কার্যকরি মনেও করি (অবশ্য এটা শুধুই যারা স্বামীর দাসী হওয়ার মনোবৃত্তি পোষণ করে তাদের ক্ষেত্রে, কোনভাবেই যারা স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পায়নি, তেমন কোন অসমর্থ নারীর জন্যও প্রযোজ্য বলে মনে করি না)।

প্রশ্নটা তাই কেবলমাত্র স্বাবলম্বী মেয়েদের জন্য~
তাদেরও কী দেনমোহরের মতন একটা অবমাননাকর পন্থাকে বেছে নেয়ার বা মেনে নেয়ার কোনো কারণ আছে?
আমি তো মনে করি না এমন অসভ্য একটা রীতির প্রয়োগ এই সভ্য সমাজে থাকার কোনো প্রয়োজন আছে।

প্রায় সমবয়সী ছেলেটির প্রেমে যেদিন পড়েছিলাম, সেদিনও যেমন ভেবেছিলাম~
এক বিকেলের রেস্টুরেন্টে খাওয়ার বিল ও দিলে, আরেক বিকেলেরটা আমি দিবো!
তেমনি পড়াশোনার পার্ট চুকে যাওয়ার পর ভেবেছিলাম~
আমাকে যেমন প্রতিষ্ঠিত একটা অবস্থানের জন্য সংগ্রাম করতে হবে, তাকেওতো তাইই করতে হবে। সুতরাং কোনদিনই তাকে তাড়াহুড়ো করে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য তাড়িয়ে বেড়াইনি।

নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও, সে সম্পর্কের পরিণতির জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেয়ার জন্য দীর্ঘ সময় নিলেও সেই সময় দিতে কার্পণ্য করিনি।
ভেবেছি~
সবার মানসিক গড়ন এক হয় না আর দীর্ঘজীবনের সঙ্গী হিসেবে আজীবনের জন্য শপথ বাক্যে তাকে জীবনে মেনে নেয়ার মতন মানসিক সাহস একই ভাবে, একই সময়ে সমবয়সী দু’পক্ষের সক্ষমতায় পার্থক্য থাকতেই পারে।
সময় দিয়েছি এবং শত পরামর্শকে তাই বরাবরই উপেক্ষা করেছি।
কখনোই ভাবিনি যে~
আমারই সমবয়সী কারোর আমার মতন বা আমার চাইতে বেশি মানসিক-শারীরিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক সক্ষমতা স্বাভাবিক নিয়মেই থাকার কথা, শুধুমাত্র সে পুরুষ বলে!
আসলে কী তা সম্ভব হয়?
হয় না! হলেও সেটা ব্যতিক্রম।

আর সেখানে বিয়েতে সমবয়সী সেই পুরুষ সঙ্গীর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দেনমোহর কীভাবে চাওয়া যায়? কীভাবে অপ্রত্যাশিতভাবে সুন্দর সেই সম্পর্কের শুভ পরিণতি বিচ্ছেদে গড়ালে সেই পুরুষটির কাছে অপরিশোধিত সেই দেনমোহরের টাকাটা প্রাপ্য বলে দাবি করা যায়? 

আমার কোনভাবেই এটা মাথায় আসে না, যেখানে নারী সঙ্গীটি ভীষণভাবেই প্রতিষ্ঠিত!
কী প্রয়োজন? আর কোন রুচিতে?
কার টাকা নেবো আমি?
যাকে এবং যে সম্পর্ককে আমি আমার জীবন থেকে মুছে ফেলতে চাইছি, তার এবং সেই সম্পর্কের দোহাই পেড়ে!
হায়রে!
নারী তুমি নিজেকে কেন এখনও এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বিক্রিত বস্তুই মনে করো!
তুমি স্বাবলম্বী হও, নারী!
স্বাবলম্বী হোক তোমার মন ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান!

দেনমোহরের সোজা এবং পরিষ্কার অর্থ হলো~
যৌনদাসী হিসেবে কিনে নেয়া!
পুরুষ কোনো নারীকে বিয়েতে দেনমোহর পরিশোধ করে এজন্যই যে~
এর দ্বারা সে সেই নারীর লজ্জ্বাস্থানকে অধিকার বা কিনে নেয়ার সামর্থ্য ঘোষণা করে!
দু:খজনক হলেও এই বর্বর প্রথাটাই আসল সত্যি…।
এমন প্রথা নারীকে সম্মানিত করে না, অসম্মানিত ও দাস হিসেবে গণ্য করায়।
স্বাবলম্বী নারীর এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সুযোগ আছে, যখন তাদেরকেই দেখি এর স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করতে…তখন বাকরুদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোন পথই খোলা থাকে না!

আফসোস!

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ-

(উইমেন চ্যাপ্টার বিশ্বাস করে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এখনও নারীদের অবস্থান সেই পরিমাণ সমুন্নত হয়নি যে, দেনমোহর প্রথাটি তুলে দেয়ার সময় এসেছে। তবে শিক্ষিত, আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, কর্মজীবী নারীরা বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন)

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.