কর্নেলের বাসায় শিশু নির্যাতন, কে করবে বিচার?

উইমেন চ্যাপ্টার:

ছবিটি দেখে আঁতকে উঠবেন না কেউ। কর্নেল তসলিমের স্ত্রী আয়শা লতিফ আরও বেশি ক্ষমতাধর। তিনি মেয়েটিকে এমনভাবেই আদর করেছেন যে, সামান্য একটু দাগ লেগে গেছে শরীরে।

বলা হচ্ছে, সামান্য মারধর করা হয়েছে মাত্র! আমরাও তাই বলি, মেরে তো ফেলেনি তনুর মতোন! কর্নেলের বাসা বলে কথা! যে দেশে বিশেষ বিশেষ এলাকার মানুষজনের (?) কোনো অপরাধ হয় না, কাউকে খুন করে ফেললেও দিব্যি তারা বেঁচে যায় আইনের ফাঁক দিয়ে, সেই দেশে এই ঘটনারও কোনো বিচার হবে না, এটা নিশ্চিত। হীরক রাজার দেশ যেন একটা!

মেয়েটির নাম সাবিনা, সবে শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিয়েছে সে, বয়স ১৩ বছর। পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মেয়েটির বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি থানায়। বাবার নাম মো. বাদল। 

মিরপুর ডিওএইচএস এ বসবাসরত লে. কর্নেল তসলিমের স্ত্রী’র নির্যাতনের শিকার এই শিশুটিকে সম্ভবত প্রতিবেশী কেউ পল্লবী থানায় নিয়ে যায় এবং থানা থেকে এই শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে বর্তমানে। 

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট শামীম আরা নীপা লিখেছেন, “যারা এমন পাশবিক কাজ করে তাদের আদৌ কোন বিচার হবে কিনা জানি না… খুব ক্রোধ হচ্ছে, ঘেন্না হচ্ছে এই সমাজের সেইসব পশুদের উপর যারা প্রতিদিন শিশুদের উপর এমন নির্যাতন করে এবং বিনা বিচারে টাকা কিংবা ক্ষমতার বিনিময়ে শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়ে যায়…
আমার শুধু শিশুটির চেহারার জায়গায় নিজের সন্তানদের মুখ ভেসে উঠছে… খুব বীভৎস লাগছে…

এসবের সুবিচার আদায় করে নেয়া লাগে, কিন্তু কে করবে সেই আন্দোলন…? একজন দুইজন মানুষ তো এই প্রতিকার করতে পারবে না, দেশের লক্ষ কোটি জনতাকে এগিয়ে এসেই এসবের প্রতিকার ও ন্যায়বিচার ঘটাতে হবে… আমার কোন শক্তি বা ক্ষমতা নাই কিছু করার কিন্তু আপনাদের যাদের ক্ষমতা আছে তারা এই শিশুটির জন্য কিছু করেন অনুগ্রহ করে”।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এক প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, “মধ্যম আয়ের দেশে এখনো গৃহকর্মী মেলে। শিশুদের মেলে সহজেই। দারিদ্র‍্যের কারণে এসব শিশুদের মা বাবা বুকে পাথর বেঁধে কোন শিক্ষিত পরিবারে দিয়ে যান জান বাঁচানোর আশায়। কিন্তু জান যে বাঁচবে সেই ভরসা আজকাল আর কেউ দিতে পারেন না। বিধাতার ক্ষমতাও খর্ব হয়েছে বেশ কিছুকাল হলো।

আমাদের রাগ হয় বাসার আশ্রিত শিশুটি যখন নির্দেশ মেনে চলতে শেখে না। ভীষণ রাগ হয় সাধের কোন জিনিস ছুঁয়ে দিলে কিংবা ভেঙে দিলে। তাইতো বারান্দা থেকে ছুঁড়ে ফেলে, গরম তেল ঢেলে দিয়ে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে তাদের বুঝিয়ে দিতে চাই – জাতের মধ্যে না থাকলে কী হয়, শিক্ষার মর্ম না বুঝলে কী হয়, শিক্ষিতের মন না বুঝলে কী হয়! ঠিক সেরকমই ১৩ বছরের সাবিনা। এখন সে পল্লবি থানায়। কি হয়েছে তার সাথে? কেন সে থানায়? অনুমান করা কি খুব কষ্ট?”

শিশুটির পাশে দাঁড়ানো দরকার। এবং দ্রুত। যদিও জানি, এসব ঘটনার কোনো সুরাহা কোনদিন হয় না, টাকার নিচে ধামাচাপা পড়ে যায় সব, এমনকি শিশুটির বাবা-মাও চাপা পড়ে যাবে। তবুও চাই, লোকে অন্তত জানুক, চিনুক এই কর্নেল তসলিম এবং তার স্ত্রীকে।

শেয়ার করুন: