গোধূলি খান:
বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, একটা নাম একটা বিশ্বাস, একটা অহংকার। একটা দেশের পৃথিবীর মাথা তুলে দাঁড়ানোর নাম। শেখ মুজিব কোটি মানুষের বুকের মাঝে সযত্নে রাখা ভালবাসার নাম। শেখ মুজিব একটা মহানায়কের নাম যে, কোটি প্রাণে দোলা দিয়েছিল স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার। সব ধর্মের মানুষের মিলে মিশে একসাথে বাঁচার নাম ছিল শেখ মুজিব।

দিন দিন ক্রমশ দেশে ধর্মীয় বিভক্তিকরণ আরও পষ্ট হয়ে উঠছে। শেখ হাসিনা নিজে মদিনা সনদের পক্ষে কথা বলেন। তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অভিলাষে হেফাজতের মতো একটা দলকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন। আমাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে, আমাদের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে চলেছে হেফাজত। আর তাতে সায় দিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা সরকার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, এই কি ছিল আপনাদের নির্বাচনী ম্যান্ডেট? দেশকে কট্টর মৌলবাদী দেশ বানানোর? এই কি ছিল আপনার ওয়াদা অন্য ধর্মের মানুষ থাকতে পারবে না দেশে নিরাপদে? এই কি ছিল আপনার প্রতিশ্রুতি যে চোখের পানি ফেলে রাতের আঁধারে দেশ ছাড়বে অন্য ধর্মের বাংলাদেশী নাগরিক? এতো ক্ষমতা দিয়ে কী করবেন? পিতার সুনাম শুধু ব্যবহার করলেন, সেই মতো কোন কাজ করতে পারলেন না।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর এতো বছর পরে যে ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় মানুষ তাকে স্মরণ করে, তার ছিটেফোঁটাও আপনাদের কেউ করবে না। আপনাদের আজীবন ক্ষমতায় থাকার আকাংক্ষায় যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তা ভুল শুধু ভুল। আপনি কি জানেন না বা টের পান না, দুর্নীতি সমাজের সব ক্ষেত্রে! পরতে পরতে অন্যায়! চারদিকে চলছে লুটের মহা উৎসব, আমাদের পাঠানো রেমিটেন্স, আমাদের দেয়া ট্যাক্সের টাকা লুট হয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এগুলো আপনাকে বলে লাভ কী! আপনি যে জানেন, তা আমরাও জানি।
উন্নয়নের গল্প শুধু কাগজের পাতায়। এই কাগুজে বাঘের মত কাগুজে উন্নয়ন দিয়ে কী হবে? যেখানে জনজীবনের মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। দেশ ধর্ষক, লুটেরা আর দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ন্যায়বিচার জেলের কাল কুঠুরিতে বন্দি। আর অপরাধী ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকার নতজানু, সেনাবাহিনীর কাছে, সরকার নতজানু হেফাজতিদের কাছে, সরকার নতজানু ক্ষমতাবান ধর্ষকদের কাছে। সরকার নতজানু সৌদি আরবের কাছে। সরকার নতজানু লোভের কাছে।
এই আওয়ামী লীগ সরকারকে আমাদের বোঝার ভুল। আমাদের ভালবাসার ভুল। আমাদের অন্ধ বিশ্বাস আর ভালবাসারকে পূঁজি করে আমাদের সাথে চলছে অন্যায়, বারে বারে মিষ্টি কোথায় চলছে আমাদের ঠকানো। আমাদের আজ এই পরিণতি অতি বিশ্বাস আর ভালবাসা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রাঙ্গা মূলা ঝুলিয়ে ঠাকানো হচ্ছে পদে পদে।
ভাবতে অবাক লাগে একটা দল হেফাজত! সারাদেশে তাদের সদস্য সংখ্যা কত? আর আমরা কতজন? আমাদের পূর্বজন্মরা আমাদের জন্য একটা নিরাপদ, প্রগতিশীল, স্থিতিশীল, সেক্যুলার দেশের আশায়, পোলাও মাংস না হোক দুমুঠো ভাত-ডালের আশায়, নিজের ছোট ঘরে শান্তিতে আপনজনদের নিয়ে ঘুমানোর আশায় স্বাধীনতা এনেছিল হানাদার পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
কিন্তু কী নিষ্ঠুর রসিকতা! যে মত-পথের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন আমাদের পূর্বজনেরা, দেশ আজ সেই মত-পথের দিকে চলেছে। আর সেদিকে নিয়ে চলেছেন সেকুল্যার ধ্বজাধারী আমাদের আওয়ামী সরকার। হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের মূর্তি সরানোই প্রথম কথা নয়, প্রথম কথা ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মের হাতে ধর্মনিরপেক্ষতার হত্যার। আজ এই মূর্তি সরছে। অচিরে দেশের সব মূর্তি সরবে। সেই সাথে আমাদের সরিয়ে ফেলা হবে। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে আমাদের সরিয়ে ফেলা হবে। নিজের ভাষায় কথা বলার অপরাধে একদিন আমাদের সরিয়ে দেয়া হবে। সরকারের মধ্যে থাকা একদল ভয়ানক হেফাজত আমাদের সরিয়ে ফেলতে তৎপর হবে।
সেদিন আর বেশি বাকি নেই, আফগানিস্তানের আকাশে ওড়া তালেবান আল কায়দা নিধনের বোমারু বিমান, ড্রোন, আমাদের আকাশেও পাখা মেলবে হেফাজত-জিএমবি আর আইএস নিধনে। সৌদি প্রীতি বাঁচাবে না, মদিনা সনদ বাঁচাবে না, যেমন বাঁচাচ্ছে না পাকিস্তানকে, বাঁচেনি আফগানিস্তান। তোমারে বধিবে যে, গোকূলে বাড়িছে সে… তাই সাধু সাবধান!