শাশ্বতী বিপ্লব:
সুপ্রীম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য অপসারণ আমাকে ততটা আতঙ্কিত করে না, যতটা আতঙ্কিত করে রোজার মাসে হোটেল বন্ধ রাখার হুকুম, জোর করে সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার আয়োজন।
আমাকে বেশি আতঙ্কিত করে আমার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলের প্রশ্ন, “মা, তুমি হিজাব পরো না কেন?” আমাকে আতঙ্কিত করে এই প্রচণ্ড গরমেও সারি সারি হিজাবের মিছিল।
আমাকে আতঙ্কিত করে “হারাম” আখ্যা দিয়ে ছোট্ট মেয়েটিকে পুতুল নিয়ে খেলতে না দেয়ার মানসিকতা।
আমাকে আতঙ্কিত করে একজন প্রধান বিচারপতিকে তার ধর্মের কারণে অসম্মান করার ধৃষ্টতা।
আমাকে আতঙ্কিত করে পাহাড়ে আক্রমণ, মন্দিরে ধ্বংসলীলা, মসজিদে বিকৃত বয়ানে চুপ করে থাকা শিক্ষিত মুসুল্লীর মানসিকতা।
আমাকে আতঙ্কিত করে শহরে, নগরে, গ্রামে, গঞ্জে, আমার চারপাশের মানুষগুলোর চোখে ক্রমশঃ জেঁকে বসা সাম্প্রদায়িক ঘৃণার আগুন। যা থেকে মুক্ত নয় আমার রাজনীতি, আমার রাষ্ট্র।
রাষ্ট্রতো সমাজেরই একটা বৃহত্তর প্রকাশ। রাষ্ট্র যারা চালায় তারা এই সমাজেই বাস করে। তাই সে সমাজের মানসিকতাকেই ধারণ করেছে। আমাদের রাজনীতিবিদরা তার উর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা করেনি কোনদিন!!
থেমিসের অপসারণ এই ক্রমশঃ বদলে যাওয়া সংস্কৃতির একটি ক্ষুদ্র বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আমি দেখতে পাই, ফেসবুকের বাইরে খুব অল্প সংখ্যক মানুষই এই অপসারণে আহত।
এর প্রতিবাদ শক্ত ভিত পাবে না যতদিন পর্যন্ত না অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করবে, মানুষই মানুষের বড় পরিচয়। ধর্ম নয়, বিত্ত নয়, লিঙ্গ নয়, বর্ণ নয়।
কোনদিন মানুষ বদলালে, মানুষের মানুষ পরিচয় ধর্মকে ছাপিয়ে উঠতে পারলে বদলে যাবে সব।
ততদিন পর্যন্ত এটাই আমার দেশ…ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক, অন্ধকার এক গহ্বর!!