বাংলা মাস সমাচার, উইমেন চ্যাপ্টারের ৪ বছর পূর্ণ এবং অভিনন্দন!

শিল্পী জলি:

সহপাঠী সিনার উৎসাহে গত এক বছর যাবৎ এই পোর্টালে লিখছি। এখানে যে কেউ, বিশেষ করে নারীরা লিখতে গেলেই বুঝবেন যে, ব্যাপক সাপোর্ট সিস্টেম রয়েছে। একজন লেখিকাকে আক্রমণ হতে না হতেই অন্য লেখক/লেখিকারা ঢাল-তলোয়ার নিয়ে হুঙ্কার দিয়ে সুরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর এতো বড় বাহিনীর সাপোর্ট পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে কলম আপনা-আপনিই ধারালো বর্ষায় পরিণত হয়, আঘাত হানে একেবারে বিপক্ষের কলিজায় গিয়ে–জ্বালাপোড়া ধরায়। 
এক কথায় মজবুত লেখক/লেখিকা হিসেবে গড়ে ওঠা অথবা ক্ষুরধার লেখা প্রকাশের জন্যে এর চেয়ে ভালো কোন স্থান পাওয়া মুশকিল। 
আপনারাও লিখুন।

আবার পাঠকরাও যদি কিছু না লিখেও এই পোর্টালটি নিয়মিত পড়েন, তাহলেও তারা ধীরে ধীরে মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন হবেন, আবার একটু একটু করে আত্মবিশ্বাসও বাড়বে অনেকের, যা ঘরের কিল-গুঁতা থেকে সুরক্ষায় সহায়ক হবে, কর্ম এবং রোজগারে উৎসাহ দেবে। তদুপরি কম বয়সী ছেলে-মেয়েরা পড়লে তাদের উদার মানসিকতার ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তীব্র।

তবে বেশী বয়সী পুরুষদের কেউ কেউ পোর্টালটিকে নারী আন্দোলনের আখড়া ভেবে হম্বিতম্বি করতে পারেন–এটাও স্বাস্থ্যসম্মতই। শরীরে কোষে কোষে রক্ত চলাচল চালু থাকবে–ডায়বেটিসেও হাতে-পায়ের কোষে পুষ্টি জোগাবে।

মাঝে মাঝে আমরা লেখিকারাও দ্বিমত পোষণ করি, নিজেদের মধ্যে যুক্তিতর্ক চালাচালি শুরু করি, অতঃপর সন্তুষ্টি অর্জন করে শান্ত হই। তবে আমাদের মধ্যে কোন ঘটনা এখনও আদালত পর্যন্ত গড়ায়নি– সেই পরিমাণ নিষ্ঠা, স্হিরতা, ধৈর্য, এবং সহনশীলতা আমাদের আছে। তাছাড়া ডায়বেটিস, ব্লাডপ্রেশারও নিয়মিত কন্ট্রোলে রাখি–স্বাস্হ্যই সকল সুখের মূল।

আমার আন্দাজে উইমেন চাপ্টারের মূল লক্ষ্য লেখক/লেখিকাদের লেখার মাধ্যমে জনগণকে বোঝানো, মানুষ কী, কেন, কারা, এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা! এখানে দু/একটি মাস বা শব্দের গুরুত্বের চেয়ে লেখার মূল বার্তাটিই মুখ্য। কেননা আমরা ধরে নেই সবারই বর্ণমালার সাথে পূর্বেই পরিচয় ঘটেছে। তাই ভাদ্র মাস না বৈশাখ অথবা কুকুর কোনো বিষয়ই না। শুধু লেখাতে একটু খোঁচা বাড়াতে তেনারা এসেছেন যেন অমনোযোগী পাঠক/পাঠিকার মনোযোগ টিকে থাকে, সহজে বিষয়ের গভীরে যেতে পারেন।

এখনও সমাজে মেয়েরা প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, নানাভাবে অত্যচারিত হচ্ছে, তথাপি তাদের উপরই চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে অন্যের পাপের দায়ভার। এমতাবস্হায় প্রতিটি নারী, শিশু এবং তরুণ-তরুণীদেরকে সচেতন করতে হবে। আমরা এখনও আমাদের নিজস্ব সংজ্ঞায় ফেলে অন্যদেরকে বিচার করি, নিজের ধর্মের আইনে ফেলে অন্যকে জাজ করি, কাপড়চোপড় এবং হাঁটাচলা দেখে আন্দাজে অন্যের চরিত্রের সার্টিফিকেট দেই, কিন্তু মনে রাখি না দেশের আইনই রয়েছে সেটি নির্ণয় করতে। তবে দেশীয় অনেক আইনই আছে যেখানে নারীকে একজন মানুষের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ঐ বিষয়গুলোতেও আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। পরিবর্তনের লক্ষ্যে ধৈর্য সহকারে কাজ করে যেতে হবে। চলার পথে বার বার ভাদ্র/আশ্বিন মাসের ধাক্কাও আসবে গতিরোধক হয়ে। তাতে কী? 
শক্তি অর্জন করতে হবে।

মানুষের মনোবলই তার আসল শক্তি, আর সাহস, কর্ম, শিক্ষা এবং একতাই শক্তির মূল উৎস। মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিটি নারী/পুরুষের অধিকার নিয়েই আমাদের সোচ্চার হতে হবে সে শিশু, মেয়ে, প্রেমিকা, বঁধূ, মা, রক্ষিতা, বা যৌনকর্মী, যেই হোক না কেন।

দেশে যেখানে আজও মানুষ মনে করেন মেয়েদেরকে ঘরে বন্দী করে কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে ধর্ষণ রোধ করার কথা, সেখানে আমাদের স্বপ্ন হওয়া উচিত একদিন দেশে মেয়েরা ঘরে-বাইরে দিনে/রাতে অবাধে চলাচল করবে, ধর্ষণের শিকার হলেও সমাজে দাপটের সাথে হাঁটতে পারবে, সমাজে তার জীবনধারা ব্যাহত হবে না, তার পরিবার অকারণ লজ্জিত হবে না, বরং ধর্ষকই সমাজ থেকে বহিস্কার হবে।

এখনও সমাজে মেয়েদের মানসম্মান এবং ইজ্জত তার বুক এবং যোনিতে বেঁধে দেয়া, কেন? এটা কি আমাদের রুগ্ন মানসিকতা? নাকি তাদের বঞ্চনা বাড়াতে সমাজের এই খেলা?

বুঝতে হবে একজন নারীর সম্মানও তার সততায়, শিক্ষায়, কর্মে, সৃষ্টিতে, দক্ষতায়, মানবতায়,….তার মেয়েলী দু’টি অঙ্গে নয়। মানতে হবে সমাজে পুরুষের যেই স্বাধীনতা রয়েছে নারীরও সেই একই স্বাধীনতা প্রাপ্য। নারীর শরীর এবং মনও তার নিজেরই দখলে।

সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন থেকে ফারহানা নিশোর চাকরিচ্যুতি ঘটনা যেভাবে ফলাও করে প্রচার করা হলো তার কারণ কী? 
তিনি একজন নারী, তাইতো? 
চরিত্রে দাগের ইঙ্গিতেই সমাজে সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন?

আমাদের ভাবতে হবে আমরা তার এসময়টিতে কতটা পাশে থাকতে পেরেছি?  আমরা কী জানি সে পুরুষের তৈরী কোন একটি ফাঁদে আটকা পড়ে আছেন কিনা? ব্যক্তিগতভাবে আমরা কোন নারীকে পছন্দ করি বা না করি প্রতিটি নারীর অধিকার সংরক্ষণে আমাদের একতা বাড়াতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে সমাজে নারীপুরুষের মাঝে সমতা ফিরে আসবে।

যাত্রাপথ পথ দীর্ঘ, কিন্তু আমাদের সবাইকে এক থাকতে হবে, এক লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। 
লক্ষ্য একটিই–প্রতিটি নারী/পুরুষের মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণ।
আর শোষণ নয়, মানবতার লক্ষ্যে আমরা এক হই।

 

শেয়ার করুন: