বিষন্নতাকে অবহেলা নয়

তানিয়া মোর্শেদ:

বিষন্নতা এমন একটি অবস্থা খুব কম মানুষ নিজের কাউন্সেলিং করে পুরো সফল হোন। কেউ বিষন্নতায় ভুগলে সাইকোলজিস্ট, সাইক্রিয়াটিস্ট-এর সাহায্য নেওয়া জরুরি। সাইকোলজিস্ট আর সাইক্রিয়াটিস্ট দুটো আলাদা পেশা, দক্ষতা। কারো হয়ত সাইকোলজিস্টের কাউন্সেলিং-এই হয়। কারো হয়ত সাইক্রিয়াটিস্টেরও সাহায্য লাগে।

অনেক অসুখের সাইড এফেক্ট, কোন অসুখের পূর্বাভাস, কোন কোন ঔষধের কারণেও বিষন্নতা হতে পারে। সন্তান জন্মদানের পর অনেক নারী বিষন্নতায় ভোগেন। সময় মতো এর চিকিৎসা না হলে অনেক সময় মারাত্মক ঘটনা ঘটে। নিজের শিশুকে হত্যা করার মতো ঘটনাও ঘটে।”

বিষন্নতার অনেক মাত্রা আছে। মাত্রা ভেদে নির্ভর করে তা কে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কতোখানি। স্বল্প সময়ের (কিছুদিনের) মন খারাপ বা ডাউন থাকা আর বিষন্নতা এক জিনিস নয়। আমি দশ+ বৎসর ক্যান্সার যোদ্ধা। ক্যান্সার আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়েছে। অথচ আমি আমার মতো মানসিক শক্তিশালী মানুষ দেখিনি আজও। আমি কখনো বিষন্নতায় ভুগিনি। জীবন শুধু ক্যান্সার যুদ্ধই দেয়নি আমাকে, অন্য দশটা মানুষের মত অন্য যুদ্ধও আছে। তবুও আমি এখনও বিষন্নতায় ভুগিনি।

এমন মানুষও বিষন্নতায় ভুগতে পারেন যাঁর আপাত সেরকম কোন যুদ্ধ নেই! প্রায় সব মানুষেরই কোন না কোন যুদ্ধ থাকে। সবই আপেক্ষিক। আর এই আপেক্ষিকতায় অনেক কম (মাত্রায়) যুদ্ধ করা মানুষও বিষন্নতায় ভুগতে পারেন অথচ প্রচন্ড যুদ্ধ করা (মাত্রায়) মানুষ বিষন্নতায় কখনই নাও ভুগতে পারেন। তার মানে এই নয় যাঁরা বিষন্নতায় ভোগেন তাঁরা মানসিক ভাবে দূর্বল।

একবার এক ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন কথা প্রসংগে, বিষন্নতা হচ্ছে একটি বিস্ট! এটা ক্যান্সারের থেকেও খারাপ। সেই ডাক্তার নিজেও ক্যান্সার যোদ্ধা। আমি সেদিন তাঁকে বলেছিলাম, ক্যান্সার যুদ্ধও বিস্টের সাথেই যুদ্ধের মত! মানে তাঁর কথার সাথে পুরো সায় দেইনি। কিন্তু আজ আমার অভিজ্ঞতা আমাকে বলাচ্ছে, আসলেই বিষন্নতা একটি বিস্ট এবং এর সাথে যুদ্ধ ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধের থেকেও কঠিন মনে হয় কখনো কখনো!

আর বিষন্নতায় ভোগা এমন মানুষও আছেন, হাজার কাউন্সেলিং এবং বিভিন্ন ঔষধও কাজ করে না! সংখ্যায় তাঁরা কম হতে পারেন, কিন্তু তাঁরা আছেন। বর্তমান বিশ্বে এতো এতো মানুষ বিষন্নতায় আক্রান্ত! বাংলাদেশে হয়তো যে কারণ, অন্য দেশে হয়তো সে কারণ নয়। কিন্তু উন্নত, অনুন্নত সব দেশেই অনেক মানুষ বিষন্নতায় ভোগেন। বিষন্নতা কোন সহজ জিনিস নয়। এটা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এ যুগের জন্য ভীষণ জরুরি।

সব দেশেই এটা নিয়ে কথা বলা ট্যাবু। বাংলাদেশে পরিবার, সমাজের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার বা সমাজ নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে মানুষের। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে বা অন্যান্য স্থানে তা কেউ বলে না। ডিস্ক্রিমিনেশনের ভয়ে। ক্যান্সার নিয়েও কর্মক্ষেত্রে খুব কম বলে। তবে এখন কিছু কিছু মানুষ হয়তো বলছে। কিন্তু বিষন্নতা বা কোন মানসিক রোগ নিয়ে নয়! হ্যাঁ, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে সে বিষন্নতা বা ক্যান্সারের জন্য ডিস্ক্রিমিনেটেড হয়েছে, তাহলে লক্ষ লক্ষ ডলারের মামলা জিতে যাবে। কিন্তু তার আগে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ডিস্ক্রিমিনেটেড! কেউ সে রিস্ক নেন না।

শেয়ার করুন: