সুমন্দভাষিণী (১৪ জুলাই): ৪২টি বছর ধরে এই ভূখণ্ডের বাঙালীরা এই একটি দিন দেখার জন্য বেঁচে আছে। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল সোমবার। এদিন ঘোষণা করা হবে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান হোতা গোলাম আযমের মামলার রায়।
বাঙালি হত্যায় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী হিসেবে যার নাম সবার ওপরে উঠে আসে, সে গোলাম আযম, তৎকালীন জামায়াতে ইসলামির আমির। মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র, উস্কানি, পাকিস্তানি সেনাদের সাহায্য করা এবং হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেওয়ার পাঁচ ধরনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তার মৃত্যুদণ্ড কেবল ঘোষণাই নয়, তা কার্যকর করে জাতিকে দায়মুক্ত হতে হবে তিরিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ বীরাঙ্গনা মায়ের অপমানের। জাতি আজ সেইদিকে তাকিয়ে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটারদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই মামলায় অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারায় গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলেই তারা আশাবাদী।
কিন্তু প্রশ্ন থাকে যে, সাঈদীর রায়ের পর যে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল দেশের নিরীহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর, সেরকম কিছু হলে তা প্রতিহত করার যথেষ্ট প্রস্তুতি কি আছে সরকারের? যদি আবারও তাণ্ডব চলে, যদি আবারও গৃহহীন হয়ে মানুষের কাফেলা ছোটে সীমান্তের কাঁটাতারের দিকে, তা ফেরাতে আপনি-আমিও কি প্রস্তুত? আশা করছি, সরকার সেদিকটিও ভেবে দেখবে, ব্যবস্থা নেবে যথোপযুক্ত।
ট্রাইব্যুনালে এর আগে যুদ্ধাপরাধের চারটি মামলার রায় হয়েছে। প্রথম রায়ে জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। সাধারণ খুশি মনেই নেয় সেই রায়। কিন্তু সব ছক পাল্টে দেয় ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়। সেই রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারা বাংলা। তা এখন ইতিহাস। সেই ইতিহাস প্রভাব ফেলে পরবর্তী রায়গুলোতে। তৃতীয় রায়ে দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং চতুর্থ রায়ে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আবার উল্লাসে ফাটে বাঙালী।
একটু পিছন ফিরে দেখা যাক- গোলাম আযম ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন, যাদের সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সাত বছর লন্ডনে অবস্থান করার পর ১৯৭৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে আবার বাংলাদেশে আসেন এই জামায়াত নেতা। সেই থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার অবস্থান সুসংহত হয়ে যায়। যার রেশ টানছে বর্তমানের বাংলাদেশ, বর্তমান প্রজন্ম।