বৈধব্য কি মেয়েদের দোষ!!

অনন্যা নন্দী:
কেবল একটা বার কল্পনা করে দেখুন তো অাপনার জীবন সাথীটি অাপনাকে একা রেখে সংসারের সব দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। প্লিজ এক মিনিটের জন্য হলেও চোখটা বন্ধ করে ভাবুন।
কেমন লাগছে? পৃথিবীটা অন্ধকার লাগছে না?
অনন্যা নন্দী

এবার অারেকটু ভাবুন, অাপনার স্বামী না থাকার কারণে অাপনি কোনো পুরুষের হেসে কথা বলতে পারছেন না। সুন্দর করে সেজে কোনো বিয়েতে যেতে পারছেন না। অাপনার চাকরি নিয়েও সবাই প্রশ্ন তুলছে। কেমন লাগে জীবনটা, বলুন তো?

উপরের প্রতিটা অবস্হার মধ্যে অামি অামার মাকে যেতে দেখেছি…।
অামার মা’র ৩৬ বছর বয়সে স্বামী মারা যায়। তখন থেকে অাজ পর্যন্ত অামার মা সমাজের এই কটুক্তিগুলো সহ্য করছে। কিন্তু কেন? অামার মা তো ইচ্ছা করে বিধনা হয়নি। স্বামী হারানোর দুঃখ সবার চাইতে অামার মা’র বেশি। তবুও অামার মা কেন ভিকটিম?
এই কাহিনী কেবল অামার মা’র না। এই কাহিনী সমাজের সকল বাঙালী বিধবা মেয়েদের। অামরা এমন একটা সমাজে বাস করি যে সমাজ একজন পুরুষের বৌ মারা যাওয়া মাত্র বিয়ে করানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে। অনেক পুরুষ তো বৌ মারা যাওয়ার ৪০ দিনের মধ্যেই বিয়ে করে। তাহলে একজন একজন নারীর ক্ষেত্রে বৈষম্য কেন?
একজন মেয়েকে কেন বিধবা হওয়া মাত্র সমাজের নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়? দুঃখজনক ব্যাপার হলো একজন বিধবা মেয়ের সৎপথে কামানো অায়কেও মানুষ বেশ্যাবৃত্তি করে কামানো বলে মন্তব্য করতে কুন্ঠিত হয় না। বিধবা হওয়া মাত্র ননদ-দেবরের মতো মানুষগুলোর কাছে মায়ের মতো ভাবী হয়ে যায় ঝি-চাকরের সমতুল্য। একটা বিধবা মেয়ে দেবরের সাথে কথা বললেও বলা হয়, “ছলাকলা করে দেবরকে ভুলাচ্ছে।”
খুব কম সংখ্যক মেয়ে বৈধব্য জীবনে বাপের বাড়ির সহায়তা পায়। কারণ বোনের জামাই মরে যাওয়ার পর অাপন মায়ের পেটের ভাইও হয়ে যায় তালতো ভাই। একজন বিধবা মেয়ের বাচ্চাদের তো কতোটা তুচ্ছ করা হয় তা বলতে গেলে রচনা লিখা যাবে।
একদিকে স্বামী ছাড়া একাকী জীবন, অন্যদিকে চোখের সামনে সন্তানদের নিপীড়িত হতে দেখা একজন বিধবা মেয়ের জন্য কতটা কষ্টের তা কেউ অনুমানও করতে পারবে না, যদি সে নিজে ওই অবস্থার মধ্য দিয়ে না যায়। কষ্টের বিষয় হলো অামরা অাধুনিক হচ্ছি, কিন্তু অামাদের মানসিকতার উন্নতি হচ্ছে না। অামরা ছেলের বৌকে মেয়ে করে ঘরে অানি, কিন্তু সেই মেয়ে বিধবা হওয়া মাত্র তাকে ময়লার ঝুড়ির মতো ফেলে রেখেই শান্তি পাই।
ওই যে কথায় বলে না, মেয়েরাই অাসলে মেয়েদের বড় শত্রু, এরকম ক্ষেত্রে এটা যেন আরও বেশি করে প্রমাণ হয়। মেয়েরা নিজের বিধবা জা, ভাইয়ের বৌ, ননদ এদের সাথে যে ব্যবহার করে তা বোঝার জন্য শাবানা-অালমগীরের কেবল একটা বাংলা ছবি দেখাই যথেষ্ট।
খুবই অবাক লাগে এই ভেবে অামরা নিজেদের অাধুনিক দাবি করি, কিন্তু একজন বিধবাকে নিয়ে অামাদের এতো গোঁড়ামি কেন? মাঝে মাঝে মনে হয় “সতীদাহ প্রথা ” অাসলেই খুবই দরকার এই সমাজের জন্য। অন্ততপক্ষে একজন বিধবাকে এতো কষ্ট তো পেতে হতো না। অামৃত্যু জ্বলার চাইতে অল্প কিছুক্ষণ একেবারে জ্বলেপুড়ে ছাই হওয়াটাই ভালো।
অার কতো অাধুনিক হওয়ার পর অামরা একজন স্বামীহারা নারীকে বলবো, “তুমি অনেক স্পেশাল বলেই ভগবান বুঝতে পেরেছে যে এই পৃথিবীতে তুমি একা চলতে পারবে। “
শেয়ার করুন: