ও-তে ওড়না চাই

তন্ময় কুমার হীরা: ও-তে ওড়না, ব-তে বাঙালি, ধ-তে ধর্ষণ। ওড়না বাঙালি ধর্ষণ। যেন তিনটি অবিচ্ছেদ্য শব্দ। একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্ষক জাতি বাঙালি। বাঙলায় নারীর সবচেয়ে বড় এবং সম্ভবত একমাত্র পরিচয় হচ্ছে নারী যৌনবস্তু। একদম পরিবার থেকে শুরু হয় নারীর এই বিশেষ ও একমাত্র পরিচয় পর্ব। তারপর চলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজ-রাষ্ট্রব্যাপী।

একদম শুরুতেই, বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে, যখন শিশুরা আসলে নারী বা পুরুষই হয়ে ওঠে না, তখনই ছেলে ও মেয়েদেরকে আলাদা বসানো হয়। তাতে কেবল যে শিশুদের ভেতরে অবচেতন ও গভীরভাবে নারী পুরুষের মধ্যকার বৈষম্যের ধারণাটি ঢুকিয়ে দেয়া হয় তা নয়, বরং তার চেয়েও বড়কথা ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নারীদেরকে বিশেষভাবে দেখা।

নারীরা একটি বিশেষ প্রজাতির প্রাণী। তাদের বিশেষত্ব পুরুষের যৌন সুখ উৎপাদনে। নারীরা পুরুষকে যৌনসুখ দেয়। যেন ওরা যৌনসুখের আকর, একপ্রকার সুন্দর আকর্ষণীয় বস্তু, যাদেরকে আলাদা করেই রাখা উচিৎ। এবং বিশেষ সময়ে ও পুরুষের প্রয়োজনে যেমন রাত্রিবেলা এক প্রকার বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে পুরুষের যৌনসুখে ঐ বস্তুটি ব্যবহার করতে হয় বা করা হয়, এরূপ একটি প্রতিষ্ঠিত পাশবিক বাঙালিসুলভ ধারণা থেকে নারীদেরকে আলাদা স্থানে রাখতে হয় ও রাখা হয়।

শুধু তাই নয় নারী নামক পুরুষের যৌনসুখ উৎপাদনকারী ঐ প্রাণীটি বা সপ্রাণবস্তুটির শরীরে যত বেশি করে পারা যায় পোশাক চাপানোর ব্যবস্থা করা হয়। এটা একটা নিয়ম। নারীর শরীরের প্রায় কোন অংশই যেন দেখা না যায় সেই চেষ্টায় পরিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমাজ ও রাষ্ট্রের চিন্তায় যেন ঘুম নেই। নারীর কোন অঙ্গ দৃশ্যমান হলে পুরুষদের বড় ক্ষতি হয়ে যায়। ওরা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে যায়। ধর্ষণে বাধ্য হয়। বিশেষ করে স্তনের মত উত্তেজক নারী-অঙ্গটি প্রকাশিত হলে যেন আর নিস্তার নেই। ধর্ষণ তখন বৈধ হয়ে যায়। পুরুষ তার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

পুরুষের স্বাভাবিক অপরিহার্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সুস্থ প্রত্যাশিত আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পেতে নারীদেরকে তাদের স্তন ঢেকে রাখতে বলা হয়। ওড়না নামক এক প্রকার অদ্ভুত বস্তুর আমদানি করা হয়। নইলে রক্ষা নেই। নারীদেরকে ওড়না পরতে হয় এই শিক্ষা তাদেরকে একদম নারী হয়ে ওঠার আগে থেকেই দেয়া শুরু হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একদম প্রথম শ্রেণীতেই এখন দেখা যায়, পাঠ্যপুস্তকে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে বর্ণ পরিচয়ের সাথে সাথে ওড়নার পরিচয়ও করিয়ে দেয়া হচ্ছে। ওড়নার প্রয়োজনীয়তা ও আবশ্যিকতা শেখানো হচ্ছে।

ওড়না নারীর জীবনের একটি অবশ্য প্রয়োজনীয় অংশ। ওড়না ছাড়া নারী হচ্ছে বেশ্যা, তাকে যে কেউ চাইতে পারে, যে কেউ তাকে যেকোনো সময় ধর্ষণ করতে পারে। পুরুষ নারীকে ধর্ষণ করবে এটা একটা স্বাভাবিক নিয়ম। ধর্ষণ বাঙালির একটি নৈতিমিত্তিক প্রয়োজনীয় কর্ম; জন্মগত ব্যাধি। ওই স্বাভাবিক পুরুষসুলভ কর্মের সাথে নারীকে মানিয়ে নিতে ও পুরুষকে পরিচয় করিয় দিতে একদম প্রথম শ্রেণীতেই বাঙলা পাঠ্য বইয়ের ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় পাঠ-১২ অংশে বর্ণ পরিচয় পর্বে ছোট্ট কোমলমতি শিশুদেরকে অশ্লীল ওড়নার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের কথা শেখানো হচ্ছে।

তন্ময় কুমার হীরা

সেখানে একটি ছোট্ট শিশু (মেয়ে) বাঙলা বর্ণমালার ‘ও’ বর্ণটি পড়তি গিয়ে পড়ছে ও শিখছে , “ও-তে ওড়না চাই”। ওড়না তার দরকার। পুরুষের হাত থেকে বাঁচার জন্য দরকার। পুরুষ বড়ই কামুক। পুরুষ ধর্ষক, জন্মগত ধর্ষক। ধর্ষণ ওদের প্রকৃতি-নির্ধারিত জন্মগত নৈতিমিত্তিক কর্ম। ধর্ষণ ছাড়া বাঁচেনা পুরুষ। ধর্ষণ করেই বাঁচে পুরুষ। ধর্ষণেই পুরুষের পুরুষত্ব। বাঙালি পুরুষের জীবন ধর্ষণময়। ধর্ষণ এবং বাঙালি পুরুষ সমার্থক।

পশ্চিম বাঙলায় নারীকে যৌনবস্তু ভাবার বাঙালিসুলভ প্রবণতা তুলনামূলক কমে এসেছে। ফলে ওখানকার নারীরা ওড়না নামক ধর্ষণপ্রবণতার প্রতীকাশ্রিত অশ্লীল কাপড়ের টুকরোটি ছুঁড়ে ফেলেছে। আর পূর্ব বাঙলায় মানে বাঙলাদেশে এখন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও ধর্ষণ আর বর্বরতার প্রতীক হিসেবে ওড়নার প্রয়োজনীয়তা ও পুরুষ কর্তৃক নারীকে ধর্ষণের স্বাভাবিকত্ব শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

আশা করি বাঙলাদেশ অচিরেই একটি প্রতিষ্ঠিত প্রমাণিত ধর্ষক জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতি পাবে। জয় ধর্ষক জাতির জয়। জয় ওড়নার জয়। জয় বাঙালির জয়।

শেয়ার করুন: