বাকি বিল্লাহ: দুঃখিত অনিমেষ আইচ। সত্যিটা হচ্ছে, নিজেদের বানানো অহেতুক আত্মপ্রসাদের গণ্ডির বাইরে অন্য কোনোকিছু আপনারা কেউ দেখতেই পান না। আর তাই জানেন না যে সারাদেশে প্রতিদিনকার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ওই মানুষগুলোই থাকেন যাদেরকে আপনি টিজ করেছেন।
আর কীভাবেই বা জানবেন-আপনি এবং আপনার বন্ধুরা একদিনের জন্যেও রাস্তায় এসে দাঁড়াননি তো! সেটা পয়লা বৈশাখে টিএসসিতে নির্যাতিত মেয়েদের জন্যও যেমন নয়; তেমনি তনু, রিশা, পূঁজা, খাদিজা-কারো জন্যই নয়। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করলেই না দেখতে পেতেন যে কারা কারা দাঁড়াচ্ছে।
ব্লগারদের আপনি এক বাক্যে পলায়নপর বলে আখ্যা দিয়ে দিলেন-আচ্ছা দিতেই পারেন। কিন্তু ব্লগার-লেখকরা যখন লাইন ধরে মরছিলো; চাপাতির কোপে ছিন্নভিন্ন মগজ, থেতলে যাওয়া চোখমুখ; কুৎসিত, কদর্য মৃত্যু-তখন মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো মানুষগুলো আপনাদের মত বিশিষ্টদের একটু সমর্থন-সংহতির আশায় হাপিত্যেশ করেছে। দেশের মাটিতে নিরাপদে নির্ভয়ে বাঁচতে চেয়েছে। কিন্তু আপনারা পাশে দাঁড়াননি।
আচ্ছা ধরে নিলাম, নাস্তিক ব্লগাররা খুব খারাপ-আপনি তাদের পক্ষে দাঁড়াতে চাননি। কিন্তু কোনো কিছুর বিরুদ্ধেই তো আপনারা দাঁড়াননি। জুলহাজ মান্নান বা ফয়সাল আরেফিন দীপনের জন্যেও নয়। নাসিরনগর বা গোবিন্দগঞ্জের নির্যাতিত মানুষগুলোর জন্যেও নয়।
অবশেষে বহুদিন পরে আমরা আপনাদের প্রতিবাদে সরব হতে দেখলাম-আপনারা তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন সুলতান সুলেমান বন্ধ করার জন্যে। মিটিং, মিছিল, ঘেরাও কোনোটিই বাদ রাখলেন না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, নিজেদের বাইরে আর কোনো জনসমর্থন আপনারা পেলেন না। তার আসল কারণ এই নয় যে সবাই কেবল সুলতান সুলেমান দেখতে চায় বলে আপনাদের সমর্থন দিচ্ছে না-আসল কারণ হল, আপনারা কখনোই অন্য কারো পাশে দাঁড়াননি। এরপর আবারো আপনাদের সরব হতে দেখছি-সাজু খাদেমের পক্ষে। অর্থাৎ কেবল নিজেদেরটুকু ছাড়া আপনাদের আর কোনো ইস্যু নেই, কথা নেই বা অবস্থান নেই। তো, সেই আপনাকে অপরের ছিদ্রান্বেষণে নেমে পড়া এতোটুকুও মানায় না-ভীষণ বিশ্রী লাগে।
ডার্টি জোকস অনেক শুনেছি-মাত্রাগত বিচারে তার মধ্যে অনেকগুলি সাজু খাদেমের ওইটির চেয়ে কড়া। তবে সাজুরটি কোনো জোক ছিল না এবং যাদের সামনে সেটি তিনি করেছেন-তারা কেউই ওরকম কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাই ভিডিওটি দেখে আমি নিজেও শকড হয়েছি-মনে হয়েছে, করলো কী বলদটা! এই একই কারণে অন্য অনেকের কাছেও এটিকে কোনো জোক নয় কেবল সেক্সিস্ট বিহেভিয়ার বলে মনে হয়েছে এবং তারা আপত্তি করছেন, প্রতিবাদ করছেন। সেই প্রতিবাদ ভিত্তিহীন নয়-সেটিকে এক বাক্যে উড়িয়ে দিলে চলবে না।
শিল্প-সাহিত্য বা বিনোদন জগতের মানুষের কাছেও আজ গোষ্ঠী স্বার্থ ছাড়া বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক স্বার্থের কোনো গুরুত্ব নেই-একজন অনিমেষ আইচের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে উদলা হয়ে যাওয়া এই দিকটিই সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে।