দিলশানা পারুল: Baishakh Celebration – Outrage over sex assault” – এই ছিল ১লা বৈশাখে যৌন সন্ত্রাস ঘটার পরে ডেইলি স্টার এর হেডিং। সবগুলো কাগজের খবর পড়ে মনে হচ্ছিলো, ও আচ্ছা যৌন নিপীড়ন বোধ হয় পহেলা বৈশাখ উদযাপনেরই অংশ।
নারীর যোনির উপর আক্রমণ সবসময়ই যুদ্ধের সময় একটা মোক্ষম হাতিয়ার ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, একাত্তর, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকাতে, সবসময়ই, সব জায়গায়। শত বছর পার হয়েছে, কিন্তু আক্রমণের কৌশলের কোন পরিবর্তন নেই।
সময় এগিয়েছে তাই সিসি ক্যামেরায় নারী সম্ভ্রমহানির চিত্র ধরা হয়। কিন্তু আমাকে সংজ্ঞায়িত করা হয় ওই যোনি দিয়েই। রমনী = রমন যোগ্যা যিনি, নারী = নর +ই, মেয়ে ছেলে = মেয়ে+ছেলে, যুবতী = যৈাবন বতী, তরুণী = তরুণ + ঈ . . . . হয় পুং লিংগের সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত করে নারীর অবস্থান, নয়তো যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারী কতখানি আবেদনময়ী, তার উপর ভিত্তি করে আপনার অবস্থান।

আপনি কার কাছে আপনার ‘সম্ভ্রম’ ভিক্ষা চাইবেন? কেন? আর ‘সম্ভ্রম’ই বা কী? আপনাকে ভিক্ষা চাইতে হবে কেন? দিনের শেষে এই পুরুষতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রত্যেকটা স্তরে স্তরে নিয়ন্ত্রক হচ্ছে পুরুষ। না পুরুষে আমার আপত্তি নাই, আপত্তি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায়। এমনকি এই সমাজের নারীরাও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাই ধারণ করে।
আমি বেগম রোকেয়ার মতো বলতে পারি না, নাহলে বলতাম, ভগিনীগন আপনারা রাগ করিয়েন না, যতদিন পর্যন্ত হাই হিল পরিয়া পরছি পর ধরছি ধর চরিত্রে নিজের সৌন্দর্য অবলোকন করিবেন, ততদিন পর্যন্ত আপনার যোনির উপর অবলা বলিয়া রাক্ষস গণ আক্রমণ করিয়াই যাইবে।
লৈঙ্গিক রাজনীতিটা বুঝতে পারা সবচেয়ে জরুরি আমাদের জন্য, আর বুঝতে না পারার সবচেয়ে ফায়দা পুরুষদের জন্য। তাই লৈঙ্গিক রাজনীতি আপনি যেন বুঝতে না পারেন তার সমস্ত আয়োজন গ্ল্যামারের রঙিন চষমা-ঠুলি সবকিছু নিয়ে সমাজ করে রেখেছে। যখনই কোনো নারী তাই স্বাধীনচেতা হতে চায়, তার স্বাধীনতার চর্চা করতে চায়; খুব যত্ন করে, আয়োজন করে তাকে দায়িত্বহীন, স্বেচ্ছাচারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যেন সমাজের অন্য কোনো নারী তাকে দেখে সামনে আসার উৎসাহ না পায়।

বাংলায় শব্দচয়ন অনেক শক্ত, তাই ইংরেজীতে বলি, “to me women vagina is the pathway to give birth of human species”। যোনি নারীর সম্ভ্রমের ইন্ডিকেটর না মোটেও। যোনি মানব প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার একমাত্র পথ। এই কারণেই নারী মানব জাতির মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই সুপিরিয়র, তুলনামূলক ক্ষমতাসম্পন্ন।
নারী যদি শক্তি, সাহস এবং ব্যক্তিত্ব নিয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেই শক্তিকে ওভারসিড করা এতো সহজ না। টিএসসিতে বাকি যে মেয়েরা ছিলো তারা কী করলো? নারীর ত্রাণকর্তা পুরুষকেই কেন হতে হবে? কয়টা মেয়ে এগিয়ে গেছি ওই মেয়েকে রক্ষা করতে? লৈঙ্গিক রাজনীতি যতদিন বুঝবা না, ততদিন ঘরে-বাইরে, টয়লেটে, রান্না ঘরে, গোয়াল ঘরে, এয়ারপোর্টে, বইমেলায়, চৈত্র মেলায়, বৈশাখী মেলায় সব জায়গায় শুধু শ্লীলতাহানি না, নারীর সকলই হানি হতে থাকবে।