শিল্পী জলি: কাল একজনকে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই একেবারে প্যান্ট খুলে ফেললো। বোঝার সুযোগই পেলাম না কী ঘটতে যাচ্ছে। জনাব ডায়পার পরাই ছিলেন, কিন্তু বয়ো:বৃদ্ধিজনিত কারণে জীবন বেতাল হওয়ায় যন্ত্রপাতি সব ডায়পারের বাইরে। হাত দিয়েই তিনি অঙ্গটি আবার ডায়পারের মধ্যে ঠিকঠাক করে রাখলেন। চোখের সামনেই হাতটি তাঁর ভিজে গেল।
দেখলাম, ডায়পারটি তাঁর প্রস্রাবে ফুলে-ফেঁপে চপচপ করছে। পূর্ণ বয়স্ক একজন মানুষের গোপন অঙ্গ মাত্র তিন হাত দূরে থেকে লাইভ দেখলাম।
‘কারবারটা কী হলো ‘ ভাবতেই হঠাৎ হাসির উদ্রেক হলো মনে। কিন্তু সেকেন্ডেই ছিঃ বলে নিজেকে সামলে নিলাম। মানব ধর্মের কাছে গোপন অঙ্গ দর্শন, আকর্ষণ-বিকর্ষণ, লাজ-লজ্জা- ঘৃণা, মনের খুঁতখুতি কিছুই বেশীক্ষণ টেকে না। এক সময় তাঁর ঐ অপরিস্কার হাত দু’টিও ধরতে হলো। মন একটু কেমন কেমন করলো বটে, কিন্তু নিজেকে বোঝালাম ওটাই তো আমার কাজ। রিজিক। তাহলে কেন অবহেলা?

কিছুদিন আগে আমেরিকার একটি কোম্পানি থেকে একদল ইঞ্জিনিয়ারকে ছাঁটাই করা হয়েছিল। অফিসে গিয়ে কাজের বদলে তারা পর্ন দেখতো, আর একজন বসে বসে অনলাইনে শপিং করতো। ব্যস, চাকরি খতম। তাদের কর্ম দেখে কোম্পানিটি ভেবেছে, যাও বাসায় গিয়ে দিনরাত যত পারো পর্ন দেখো, শপিং করো, আমরা টাকা দিয়ে তোমাদের এসব করাতে পারবো না।
তাই বলে এই নয় যে আমেরিকার পূর্ণবয়স্ক ছেলেরা পর্ন দেখে না, বা এখানকার কালচারে পর্ন দেখাকে ভয়ঙ্কর কিছু মনে করে। তবে পর্ন দেখো বা ড্রিঙ্ক করো সবই যথা সময়ে, উপযুক্ত বয়সে, এবং লিমিট রেখে। যেনো আবেগের কাছে বিবেক হারিয়ে না যায়, কাজ-কর্ম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, যেনো অন্যের বিপদ না বাড়ে।
সম্প্রতি ফেসবুকে বেশ কিছু লেখা চোখে পড়লো। তারানা হালিম নাকি বলেছেন, যারা পর্ন সাইটে যায় তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। খবরটি পড়তেই নাকি একদল লোক বেতাল হয়ে গিয়েছে । তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে।
ভাবলাম, তিনি যদি নাম প্রকাশও করেন ক্ষতি কোথায়? বরং উপকারই তো হবার কথা। অপ্রাপ্তবয়সী কেউ ঐ সাইটে গেলে তাদেরকে যেমন বোঝানো যাবে এখনও সময় হয়নি ওসব দেখার, আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আবার পরিণতরাও যদি দিনরাত ঐ পর্ন নিয়েই মেতে থাকেন তাদেরও বলা যাবে, জীবনে অন্য কাজও কিছু আছে মশাই– সারাক্ষণ এসব কী?
দেশের লোকের পায়ে পায়ে এতো বদনামের ভয় সব কিছুতেই কেমন মুশকিল বাঁধিয়ে দেয়।
যাই হোক, সম্প্রতি কিছু লেখালেখি থেকে জানলাম সমাজের একটি শ্রেণী মনে করেন মেয়েদের সংক্ষিপ্ত পোষাক পরিধান এবং ছেলেদের পর্ন দেখার কারণে দেশে রেপ বাড়ছে। তাই নাকি ব্যক্তি স্বাধীনতার ঐ বিষয়গুলোতেও বেড়ি পরিয়ে লাগাম টানতে হবে। সেই হিসেবে আমেরিকার ১৮ বছরের প্রতিটি ছেলেরই তো রেপ করার কথা।
এখানে সংক্ষিপ্ত পোষাক পরা এবং পর্ন দেখা একেবারে ডাল-ভাত, অথচ রেপ হাতে গোণা। যখন পর্ন পৃথিবীতে আসেনি, তখনও রেপ হয়েছে, এখনও হয়। তাই এর জন্যে পোষাক-আশাক বা পর্ন দেখা দায়ী নয়।
রেপ হয় মানসিক বিকারগ্রস্ততা, কুশিক্ষা, মানুষকে মানুষ মনে না করা, অন্যায়ভাবে কাউকে কন্ট্রোল করতে চাওয়া, কাউকে দমিয়ে রাখা বা শোষণ করার প্রবণতা থেকে। এছাড়া জবর দখল, ক্ষমতা প্রদর্শন, ধর্মীয় সংঘর্ষ, আরেকজনের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া, নিজের প্রভুত্ব খাটানো, এবং পৈশাচিক আনন্দ উপভোগের বিকৃত মনোভাব থেকেও কোন কোন সমাজে রেপকে টেকনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রেপিস্ট সমাজের কোন সুস্হ মানুষ নয়, বরং সমাজের জঞ্জাল, অভিশাপ।
কখনও-সখনও পর্ন দেখা, এক আধবার চুপি চুপি নারী-পুরুষের নগ্ন ছবি দেখা, টুকটাক মদ পান করা, সিগারেট ফোঁকা ইত্যাদির সাথে প্রকৃত অর্থে নেইম বা শেইম তেমন জড়িত নয়, এগুলো বয়সজনিত ঝুঁকিপূর্ণ কৌতূহল। এক্ষেত্রে দরকার পরিমিতি বোধের মাত্রা ঠিক রাখা, যেন সমাজের এবং নিজের কোন ক্ষতি না হয়।
আমরা যখন জাবিতে পড়তাম তখনও শুনতাম ছেলেদের হলে ভিডিও ভাড়া করে এনে তারা পর্ন দেখতো। তারা সবাই দলে দলে রেপ করতে ছুটেছিল বলে কখনও শুনিনি।
একজন নারী লিখেছেন, ছেলেরা পর্ন দেখলে নাকি প্রেমিকা বা স্ত্রী’দের উপর সুন্দর হবার বা ভালো সেক্স পারফরমেন্স দেখাবার চাপ বেড়ে যায়। না হেসে পারলাম না। মেয়েদের প্রকৃতিগত কারণেই তাদের উপর চাপ বেশী থাকে। এই চাপ একগামিতার ধাক্কা সামলানো– আজীবন একটি মানুষকে নিজের করে রাখতে চাওয়ার। কেননা মনের সংযুক্তি ছাড়া তাদের শরীর কারও প্রতি আকর্ষিত হয় না। ওদিকে ছেলেদের চোখে ঐশ্বরিয়ার মতো খেতাবধারী সুন্দরীও কিছুটা পুরোনো হলে ফিকে হয়ে যায়, তখন তাদের চোখে পেত্নীর মত কুৎসিত নতুন কোন মেয়েকেও অপ্সরা মনে হতে পারে।
কেননা সেক্স সঙ্গীর পরিবর্তনে তারা আকর্ষিত হয়। তাই ছেলেদের ওসব পর্ন দেখাদেখিতে মেয়েদের ঝুঁকি খুব বেশি বাড়ে/কমে না। তাছাড়া বাঙালী ছেলেরা কখনও প্রেম বা বিয়েতে সেক্স বিষয়ক এক্সপার্টিজ খোঁজে বলে শুনিনি। দেখিওনি। বরং মেয়েরা যত আনাড়ী হয়, ততই তাদের জন্যে ভালো। নইলে সম্প্রতি মেয়েদের বিয়ের বয়স নামিয়ে একেবারে নাইতেই আনা হতো না। মেয়েরা পারফরমেন্স দেখায় না বলেই আজও হয়তো বাংলার ঘরে ঘরে বিয়ে টিকে আছে।
দেশের মেয়েরা যদি একবার নিজেদের পারফরমেন্সের উপর নজর দেয়া শুরু করে, তাহলে ক’টি সংসার টিকবে বলা মুশকিল।
দেশে বেশী ঢাকঢাক গুড়গুড় করার কারণে ছেলেরা যতোটা সময় মেয়েদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, পর্দা, পর্ন, ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করে নষ্ট করে, ঐ সময়টিতে তারা যদি গঠনমূলক কোন কিছু করতো, তাহলে হয়তো ভুবন বিখ্যাত হতে পারতো। কিন্তু বাঙালী জাতি মেয়ে প্রজাতির উপর এতো বেশী লজ্জা এবং পর্দা ঢেলে দিয়েছেন যে, তাদের পর্দার খবরদারি করতেই অনেকের দিন যায়। আর পর্দার ভারে মেয়েদের মানুষের পরিচয়টি দিন দিন হারাতে থাকে, পিছিয়ে পড়ে নারী সমাজ। অতঃপর হাঁটে রঙিন পাগড়ী পরে চুলে চুলে লজ্জায় রাঙা হয়ে।
দেশে এইচএসসি’তে বায়োলজি পড়ে এসেও আমেরিকায় মেডিকেল ফিল্ডে পড়তে গিয়ে দেখলাম, জবা ফুলের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং পরাগায়ন মুখস্ত করলেও মানব শরীর সম্পর্কে কিছুই পড়িনি।
মানুষের শরীর নিয়ে লজ্জিত হয়ে অতি লজ্জায় শিক্ষাবোর্ড পড়ালেখাতেও পর্দা কষে টেনেছে। এমনই টান দিয়েছে যে, দেশে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত অনেক ছেলেমেয়েরই ধারণা থাকে না, তার পার্টনারের বডিটি কেমন, তার প্রকৃতি কী, এবং তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ধরন কী?
তাদেরকে সুস্হ এবং সঠিক পন্হায় এই বিষয়ে ধারণা দেবার কোথাও কোন সুব্যবস্হা নেই। তাই তারা যেকোনো মাধ্যম থেকে লুকিয়ে-চুরিয়ে যা কিছু সম্ভব দেখে নেয়। তাদের কোনটি সঠিক পন্হা বা গ্রহণযোগ্য মাধ্যম সেটি যাচাইয়ের পথ বা বোধ কিছুই থাকে না। তাই সীমাহীন কৌতূহলের কাছে হার মানে অনেকেই, কেননা অল্প বিদ্যার ফল ভয়ঙ্করী।
মনে পড়ে, ছোটবেলায় আমরা ভাইবোন মিলে বাবা-মায়ের সামনে গলা ফাটিয়ে গান ধরতাম, ‘জীবনটা করে দিল পাখির নীড়ের মতো সুন্দর, মনোরম, ওভাকন…সেই সাথে উচ্চস্বরে আবৃত্তি করতাম, ওভাকন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই…।
এমনকি মানুষের বাড়ির আশপাশ থেকে সবাই মিলে কনডম কুড়িয়ে এনে মুখ দিয়ে ফুলিয়ে হাওয়ায় উড়িয়ে ঠোকাঠুকি খেলতাম । বাবা-মা বা প্রতিবেশীদের সামনেই। অথচ কেউ কখনও বলেনি, সব গান গান নয়, সব বেলুন বেলুন নয়। এমনকি যৌনবাহিত রোগ ছড়াবার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা চুপ থেকেছেন। অনেকটা যেন লজ্জাই যেখানে সভ্যতা, নীরবতা সেখানে ধর্ম।
দেশে কথায় কথায় বলা হয়, বাবা-মা যা কিছু করেন সবই সন্তানের মঙ্গলের জন্যে, অতএব কখনও তাঁদের অবাধ্য হবে না। কখনও বলা হয় না, বাবা-মা হলেও অনেক ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, দৃষ্টিভঙ্গি অবৈজ্ঞানিক এবং ক্ষতিকর হতে পারে, সিদ্ধান্তে ভুল থাকতে পারে, বাবা-মাও দোষগুণে মেশানো সাধাণন মানুষ।
আজও দেশের সিংহভাগ বাবা-মা নিজেদের জন্যে সেক্সকে শতভাগ প্রয়োজনীয় মনে করলেও, সন্তানদের জন্যে বৈধ সেক্সকেও অপকর্ম হিসেবে গণ্য করেন। সন্তানদের বিয়ে হলে নানা রকম কূট-কৌশল চালেন, বৌ’কে ছেলে থেকে দূরে রাখতে ভালোবাসার নামে বৌ’কে পাশে বসিয়ে রেখে রাতে হাত-পা টেপাতে থাকেন।
নিজেরা সন্তানের জন্ম দিয়ে লাইন লাগিয়ে দিলেও যেন তাঁরা বিবাহিত নারী-পুরুষের সম্পর্কটি একেবারেই বোঝেন না। তাঁদের আচার-আচরন দেখে কোন কোন সন্তানও বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, সে হয়তো নোংরা কাজের ভাগিদার, দিন দিন বউয়ের সাথে দূরত্ব বাড়াতে থাকে। তাই বউয়ের সাথে দশ মিনিটের বেশী আর কোনো কাজ তাদের থাকে না।
আমাদের দেশে ঘরে ঘরে বউদের একই অভিযোগ, নিঃসঙ্গতা– স্বামী সময় দেয় না। কেননা তারা মনে করে ভাত, কাপড়, আর মাথার উপর একটি ছাদ থাকলেই নারীর জন্যে যথেষ্ট। প্রেমে, দু’তিন ঘন্টা সময় পেলেও মেয়েরা পাগল হয়ে যায় বিয়ে করতে। হয়তো ভাবে বরটি আরও বেশী সময় পাশে থাকবে। ঐ ঘোরে অনেকে আবার ঘর ছেড়ে পালিয়েও যায় বিয়ে করতে। অতঃপর ঘুম বাদে ১০ মিনিট সময়ই হয়তো বরাদ্দ থাকে তার জন্যে।
তাও আবার দরজা বন্ধ হতে না হতেই ডাক পড়ে, বাবা আমার কই রে? আর ঐ এক ডাক শুনতে না শুনতেই ছেলেও মা আ আ আ আ বলে দরজা খুলে দৌঁড় দেয়।
দেশের অনেক মেয়েই মা হয়, কিন্তু বিবাহিত সন্তানের মা হতে শেখে না। তাই আমাদের দেশের বেশিরভাগ ঘরই মা-বোন বা থার্ড পারসন সিঙ্গুলার শ্রেণীকে খুশী করতে গিয়ে ভাঙে।
সময়ের সাথে মানুষের শারীরিক এবং মানসিকভাবে বড় হওয়া জরুরি। ন্যায় -অন্যায় বোধ অনুধাবন করতে পারা জরুরি। প্রতিটি মানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। কিছুদিন আগেও পড়লাম, মেডিকেলে পড়া একটি প্রেমিকার ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মাঝে মাঝেই পড়ি, যত্রতত্র ভিডিও করে করে মেয়েদেরকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। এ যুগেও কাউকে এভাবে শোষণ?
আমেরিকায় বিবাহ বহির্ভূত সেক্স বৈধ, পূর্ণ বয়স্কদের পর্ন দেখা সম্মান হানিকর নয়, কিন্তু স্ত্রী বা প্রেমিকার ভিডিও করে ছেড়ে দেয়া বা রেপ করা জঘণ্য অপরাধ। পর্ন দেখা নিয়ে দেশে যত হৈ চৈ হচ্ছে তার চেয়ে বেশি জরুরি যারা মেয়েদের ভিডিও করে ব্লাকমেইল করে, রেপ করে, মেরে ফেলে, কোপায় তাদের উপযুক্ত সাজা দেয়া ।
যতদিন জনগণের দরবারে হিউম্যান বডি, সেক্স, নিরাপত্তা, নারী-পুরুষের শারীরিক এবং মানসিক বন্ধন সম্পর্কিত তথ্য সঠিক পদ্ধতিতে সরবরাহ না করা হবে, নারীকে সম্মানের চোখে দেখতে শেখানো না হবে, ততদিন সমাজে রেপ, খুন-খারাবি চলতে থাকবে।
ছেলেদের মানবিকতা অনেক ক্ষেত্রেই চর্চিত, প্রকৃতিগত নয়। তাই প্রতিটি ছেলেরই উগ্রবাদী ধ্যান-ধারণাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত মানবিকতার চর্চা করতে হয়। আর কাউকে বঞ্চিত করে কখনও সঠিক মানবিকতার চর্চা হয় না।
অমানবিকতা একটি সমাজের ক্যান্সার–তাকে সময়ে কেটে ফেলা জরুরি।