‘অধিকাংশ বীরাঙ্গনা পরিবারেই নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন’

বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের খুঁজে বের করে ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে আনছেন সুরমা জাহিদ। এ পর্যন্ত পাঁচশ’র উপরে বীরাঙ্গনার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। প্রকাশিত হয়েছে ৫টি গ্রন্থ। নির্বাচিত অংশ ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে বাংলা একাডেমি থেকে।

তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন

‘বীরাঙ্গনা’ শব্দটির অর্থ নেতিবাচক নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে যুদ্ধে নির্যাতনের শিকার নারীদের এই সম্মাননা খেতাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, শব্দটি ইতিবাচকভাবে সমাজ গ্রহণ করেনি। এটার কারণ আপনার কাছে কি মনে হয়েছে?

এই শব্দটার অর্থ ভালো, ঠিক আছে। কিন্তু আমরা একাত্তরের প্রেক্ষাপটে যাদের বীরাঙ্গনা বলছি, তাঁরা মনে করেন এটি খুবই ঘৃণার একটি শব্দ। তাঁরা এই শব্দ দ্বারা চিহ্নিত হলে লজ্জা পান। কারণ সমাজ শব্দটার সঠিক ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারেনি। পারেনি মানে চাইনি বলে পারেনি। আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে শব্দটা অন্য কোনো শব্দ হলেও একই সমস্যা হত। কারণ মানসিকতায় সমস্যা থাকলে ‘নাম’ বদলে তো কোনো সুফল আসবে না।

বর্তমান সরকার তো বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে কি কোনো সুফল আসবে?

আমার মনে হয় খুব একটা পরিবর্তন হবে না। কারণটা বলি, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একজন নারী সর্বোচ্চ ৯ মাস নির্যাতনের শিকার হতে পারেন, এর বেশি না। কেউ কেউ একদিনও হয়েছেন, কিংবা একঘণ্টাও। কিন্তু স্বাধীনতার পর তাঁরা আরো দীর্ঘসময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দেশ স্বাধীন হল ৪৫ বছর পার হয়ে গেল, এখনো তাঁদের নির্যাতন কিন্তু বন্ধ হয়নি।

একাত্তরের পরে নির্যাতনের প্রকৃতিটা কেমন ছিল? আপনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলে কি জেনেছেন?

আশি শতাংশ বীরাঙ্গনা নারী স্বাধীন দেশে পরিবারের ভেতরেই নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বলা হয়েছে, তোদের তো ইজ্জত চলেই গেছে! তারা কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারছেন না। কোনো কোনো রাতে এলাকার প্রভাবশালীরা তাঁদের তুলে নিয়ে যেত। একজন আমাকে বলেছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার দুইমাস পর থেকে প্রতি রাতে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। স্থানীয়রা সেই নির্যাতন চালিয়েছে। এটা এক ধরনের নির্যাতন। অন্য ধরনের নির্যাতনও আছে। অনেকের হয়ত বীরাঙ্গনা পরিচয়টা লুকিয়ে পরিবার বিয়ে দিয়েছে। সেটি পরে প্রকাশ পেয়ে গেলে স্বামী নির্যাতন করে বের করে দিয়েছে। তার আর কিন্তু বিয়ে হয়নি, হলেও সেই স্বামীর কাছেও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কুমিল্লার একটা ঘটনা বলি। একাত্তরে যখন তিনি নির্যাতনের শিকার হন, তখন তার বয়স খুবই কম। এত নির্যাতন করা হয়েছিল যে তার কোমরের হাড়ের জয়েন্ট খুলে গিয়েছিল। পরে তার বিয়ে হয়, বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় তার স্বামী আরেকটা বিয়ে করে। তখন তাকে আলাদাভাবে ছোট্ট করে একটা ঘর করে দেয় থাকার জন্যে। চাল-ডাল কিছু দেয় না। অথচ গ্রামে তার স্বামী বিত্তশালী মানুষ। বয়েস হয়েছে এবং কোমরের হাড়ের জয়েন্টের ব্যথাটা বাড়ার কারণে হাঁটতেও পারেন না যে ভিক্ষা করে খাবেন। এমন অসহায়ভাবে তিনি বেঁচে আছেন।

একটা পাহাড়ি অঞ্চলের ঘটনা বলি। খাগড়াছড়িতে চেন্নায় মারমা নামের এক উপজাতি মেয়েকে পাকিস্তানীরা ক্যাম্পে নিয়ে সাতদিন এমন নির্যাতন করে যে তার মৃতপ্রায় অবস্থা হয়। পরে একজন ক্যাপ্টেন তাকে চিকিৎসা করে তার আন্ডারে রক্ষিতা হিসেবে রেখে দেয়। সেই ক্যাপ্টেন তার প্রতিদিনই পাহাড়ি মেয়েদের তুলে এনে নির্যাতন করত। সেটি দেখে চেন্নায় মারমা ক্যাপ্টেনকে একদিন বলল, আপনি যত ইচ্ছে আমার ওপর নির্যাতন করেন, আমি বাধা দেবো না, শর্ত হল আপনি আর কোনো পাহাড়ি মেয়ের ওপর নির্যাতন করবেন না। পরে ক্যাপ্টেন তার কথা মতো আর কোনো পাহাড়ি মেয়েকে উঠিয়ে আনে নি। সে নির্যাতন সহ্য করে পাহাড়ি নারীদের রক্ষা করেছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন চেন্নায় মারমা গ্রামে ফিরে এলো সমাজ-পরিবার তাকে গ্রহণ করল না। বাবা বলল, তুমি থাকলে আমার আর মেয়েদের বিয়ে হবে না। তখন সে স্বেচ্ছায় জঙ্গলের ভেতর এক পাহাড়ের ওপর আশ্রয় নিলো। একা একা। আজ পর্যন্ত সমাজ তাকে গ্রহণ করেনি। এখনো সে সেই পাহাড়ে থাকে। আগে রাস্তায় পরিচয় গোপন করে দিনমজুরের কাজ করত। এখন বয়স হওয়ার কারণে তাও পারে না। আমি নিজে তার কষ্টের জীবন দেখে এসেছি। আমি পাহাড়ে উঠতে পারব না বলে একটা বাসায় নিয়ে কথা বলেছি।    

একেকটা ঘটনা একেক রকম। আর একটা ঘটনা বলি। গাজীপুর কাপাসিয়ায় মনোয়ারা বলে এক নারীকে যুদ্ধ-চলাকালে নির্যাতন করে পাক আর্মিরা। এক ক্যাপ্টেন তাকে পাকিস্তান নিয়ে যায়। সেখানেও তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাকে ফ্রান্সে চুক্তিভিত্তিক বিক্রি করে দেয়া হয়। সেখান থেকে আবার পাকিস্তানে আনা হয়। যখন তার বয়েস হয়ে যায় তখন তাকে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়। আধপাগল হয়ে পাকিস্তানে কয়েকজন বাঙালির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে। পরে তাকে সেই বাঙালিরা সুস্থ করে বাংলাদেশে পাঠায়। সময়টা বোধহয় ২০০০ সালের পরে। দেশে বাড়ি ফিরে মনোয়ারাকে তার পরিবার ঠিক মতো গ্রহণ করেনি। কোনোমতে থাকার একটা জায়গা দিয়েছিল। আমি দেখেছি, দেশের ফিরেও সে অমানবিক জীবন সে যাপন করেছে। সবসময় সে একটা বোরকা পরে থাকত। উর্দু-বাংলা মিশিয়ে কথা বলত। কিছুদিন আগে মারা গেছে।          

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নিশ্চয় আছে?

হ্যাঁ, বেশ কিছু ব্যতিক্রম ঘটনাও আছে। এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে বীরাঙ্গনা নারীদের পরিবার খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। বীরাঙ্গনা পরিচয় জেনেই বিয়ে করেছেন। যেমন কক্সবাজারের ওদিকে তারা মোটামুটিভাবে মেনে নিয়েছে। ওরা স্বীকার করে নিয়েছে যে, এটা একটা দুর্ঘটনা। টেকনাফে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ওরা গর্ববোধ করে। কয়েকজন আমাকে বলেছেন, আমি স্বামী হয়ে আমার স্ত্রীর এই পরিচয়ে গর্ববোধ করি।

সন্তানদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

সবখানে এক রকম না। জামালপুরের একটা ঘটনা বলি, উনার সামনে ধানক্ষেতে স্বামীকে মেরে ফেলে পাকিস্তানী সৈন্যরা। এরপর শিশুকন্যার সামনে তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। গ্রামে তখন একটা প্রচলিত নিয়ম ছিল, বাবা বেঁচে থাকতে ছেলে মারা গেলে তার বৌকে সম্পত্তির ভাগ দেয়া হবে না। অথচ ঐ বীরাঙ্গনার শ্বশুর তার নামে সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। তার ভাসুর আত্মীয় স্বজন সকলে মেনে নিয়েছে। তারপর ঐ বীরাঙ্গনা সেই জমি বিক্রি করে করে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। একটাই ছেলে। যখন নিঃস্ব হওয়ার অবস্থা তখন গ্রামের লোকজনই তার ছেলেকে গ্রামের স্কুলে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ছেলে যেই চাকরি পেয়েছে অমনি মাকে ‘নষ্ট’ বলে আলাদা করে দিয়েছে। ভাসুরের ছেলে তার এখন ভরণপোষণ দেয়।         

নেত্রকোনায়ও একটা পরিবার দেখেছি, যেখানে সন্তানরা মার পরিচয় দেয় না। তবে সিলেটে আবার উল্টো চিত্র দেখেছি। ওখানে এক ছেলে তার বীরাঙ্গনা মাকে খুবই শ্রদ্ধা করে। তার দুটি মা, দুজনই একাত্তরে নির্যাতনের শিকার হন। বাবা এখন মৃত। সে দুজন মায়েরই দেখাশুনা করে।

এক-পরিবারে মা তার তিন মেয়েসহ পাকিস্তানীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। দেশ স্বাধীন হলে তাদের পরিবার ও সমাজ গ্রহণ করেছি। বাধ্য হয়ে তারা পতিতাপল্লীতে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো তারা সেখানে আছে। এমন ঘটনা আমি আরো দেখেছি।  

এখানে তিন ধরনের সমস্যা দেখেছি। কোথাও পরিবার গ্রহণ করেছে, সমাজ করেনি। কোথাও আবার সমাজ করেছে পরিবার করেনি। আবার কোথাও কোথাও পরিবার-সমাজ কেউই গ্রহণ করেনি। তবে আমি চাইবো, সমাজে তাদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হোক, যেন তারা ‘নষ্ট’ হয়েছে, ‘ইজ্জত’ গেছে, এমন কথা আমরা ভুল করেও না বলি। এটা যেন আমাদের ভাবনা থেকেই দূর হয়ে যায়। বীরাঙ্গনাদের আসল খেতাব হবে এটাই।

কিছুদিন আগে পড়লাম, চট্টগ্রামে একজনের বীরাঙ্গনা পরিচয় জানার পর চাকুরী চলে গেছে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানও এই সত্যটা মেনে নিতে পারছে না।

এমন ঘটনাও অনেক ঘটেছে। আমি দেখলাম গাইবান্ধায় এক বীরাঙ্গনার ছেলে যেখানে যাচ্ছে সেখান থেকেই তাকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বীরাঙ্গনার ছেলে বলে তার চাকরি থাকছে না। বলে, তুই নষ্টের ছেলে, আরো মানুষকে নষ্ট করবি! একই চিত্র আমি অনেক জায়গায় দেখেছি।

বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আপনি কোনো সামাজিক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?

বহুবার হয়েছি। কিন্তু প্রকাশ করিনি, কারণ সেটা শুনলে আমার পরিবার আমাকে কাজ করতে দিত না। জামালপুর, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজারসহ বেশ কয়েক জায়গায় বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফে সখিনা নামের এক বীরাঙ্গনার সাক্ষাৎকার শেষে বেরিয়ে পড়ার সময় বাধা দেয় তাঁর মেয়ে। মায়ের সাক্ষাৎকার নেওয়ায় সে উত্তেজিত হয়ে আমাকে ছবি ও রেকর্ড মুছে ফেলতে নির্দেশ দেয়। তার দাবি অনুযায়ী ছবি মুছে ফেললেও রেকর্ড নষ্ট না করায় চিৎকার শুরু করে। এতে আশপাশের লোকজন জড়ো হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে বীরাঙ্গনার ছেলে এসে আমাকে নিরাপদে স্থান ত্যাগ করার ব্যবস্থা করে দেন। আর জামালপুর থেকে আমি নারী বলে কোনমতে ফিরে আসতে পেরেছি। মহিলা নিজে স্বীকার করছে, স্বামীও স্বীকার করছে, কিন্তু সমাজ বলছে এসব কথা আর তোলা যাবে না। আমার ক্যামেরা কেড়ে নিয়েছে লোকজন। পরে তিনদিন সেখানে থেকে গোপনে গোপনে ঐ বীরাঙ্গনা নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছি। উনি হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে মুসলমান এক পুরুষকে বিয়ে করেছেন। তিনিও স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। কিন্তু আশেপাশের লোকজন সেটা মানতে পারেনি।

এই বাধার মুখে ঐ মুক্তিযোদ্ধা নারী আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন কেন? অনেকেই তো কথা বলতে চান না।

তিনি বলেছেন যে, যা ঘটেছে তা তো আমি বদলাতে পারব না। আমার জীবনটা যদি ইতিহাস হয়, দেশবাসী সত্য জানতে চায়, তাহলে প্রকাশ করতে কোনো বাধা নেই। উনি কিন্তু আর্থিকভাবে সচ্ছল, উনার কারো কারে কোনো কিছু চাওয়ার নেই।

আপনি তো যুদ্ধশিশুদের নিয়েও কাজ করেছেন, সে প্রসঙ্গে জানতে চাচ্ছিলাম?

জ্বি। যেখানে যুদ্ধ হয়, সেখানে যুদ্ধশিশুও থাকে। আমাদের এখানে যুদ্ধশিশুদের নিয়ে খুব একটা কাজ হয়নি। যতটুকু হয়েছে বিদেশে চলে যাওয়া যুদ্ধশিশুদের নিয়ে, যারা আজ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু দেশে যারা কোনো রকম স্বীকৃতির অভাবে পশুর জীবনযাপন করছে তাদের নিয়ে সেইভাবে কোনো কাজ হয়নি।

দেশে আপনি কতজন যুদ্ধশিশুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন?

বিশ পঁচিশজনের মতো আমি পেয়েছি।

তারা কোন অবস্থানে আছে?

একজন মেয়ে কেবল স্বামীর সংসারে আছে। তাও তার মাকে একজন বিয়ে করে তার পিতৃপরিচয় দিয়েছে বলে সেটি সম্ভব হয়েছে। আর কারো সংসার টেকেনি। একাধিক বিয়ে হয়েছে কিন্তু কোনো যুদ্ধশিশু মা হয় নি। কারণ কোনো সংসারই মাস খানেকের বেশি টেকেনি।

আর পুরুষ যারা আছে?

তারাও সংগ্রাম করে টিকে আছে। কেউ কেউ অসুখে ভুগছে। তারা শুধু পরিচয়টুকু চায়। তারা যে বাংলাদেশের একথা তো সমাজ স্বীকার করে না। পিতৃপরিচয় নেই, কোনো পদবী, বংশ পরিচয় নেই। এমনকি সে হিন্দু না মুসলিম হবে, তাও সে জানে না। তার মা আছে, মায়ের পক্ষের সকলে আছে, কিন্তু সমাজ তো সেই পরিচয় গ্রহণ করছে না। আর তাছাড়া তার মাকেই তো সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে একজন যুদ্ধশিশুর দাঁড়াবার জায়গা থাকছে না। তারা কেউ শিক্ষিত হতে পারেনি, ভালো কোথাও চাকরি করতে পারেনি। ঠাকুরগাঁয়ের এক যুদ্ধশিশু বলল, আমাকে একজন অন্যায়ভাবে মারছে। আমি প্রতিবাদ করায় গ্রামের সকলে আমার ওপর চড়াও হল। সে বিচার চাইতে গেলে, বিচারকরাই তাকে জারজ বলে গালি দিচ্ছে। একজন বলল, সে গ্রামে কোনো কাজ পায় না। এখন সে অন্য গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে।

মোজাফফর হোসেন

এক্ষেত্রে আমি আপনাদের মতো সাংবাদিকদের বলবো, আপনার বিদেশ থেকে কোনো যুদ্ধশিশু দেশে এলে তাকে নিয়ে অনেক লেখালেখি করেন। তার যাবতীয় বৃত্তান্ত জাতির সামনে তুলে ধরেন। সেটির আমি বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আমার অনুরোধ দেশে যে সকল যুদ্ধশিশু আছে, বেঁচে থেকেও মৃতের মতো জীবনযাপন করছে, তাদের পাশে দাঁড়ান। তাদের খুঁজে বের করে একটা পরিচয় ধরিয়ে দিন। পিতৃপরিচয়-মাতৃপরিচয়-জাতীয়তা-ধর্ম পরিচয় এসব না জেনে বেঁচে থাকা যে কি কষ্টের তা তাদের চোখে চোখ রেখে অনুভব করুন।

শেয়ার করুন: