উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: সিলেটে ছাত্রলীগ নেতার চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের বাঁচার সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে। চিকিৎসকরাও বলেছিলেন, ওর বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র পাঁচ ভাগ। সেই আশংকাকে উড়িয়ে দিয়ে শতভাগ সুস্থতার পথে এখন খাদিজা।
প্রায় দুই মাস চিকিৎসা শেষে রিহ্যাব ফিজিওথেরাপি দেওয়ার জন্য রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল থেকে সাভারের সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) এ স্থানান্তর করা হয়েছে।সোমবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে খাদিজাকে সাভারের সিআরপিতে নেওয়া হয়।
সিলেটের এমসি কলেজ চত্বরে খাদিজাকে যেভাবে কুপিয়েছিল ছাত্রলীগ নেতা বদরুল, যে ভিডিওটি দেখে আমরা সারাবিশ্বের মানুষ আতংকিত ছিলাম ওর জীবন নিয়ে, শিওরে উঠেছিলাম মানুষের নৃশংসতা দেখে, সেই আমাদের বুকেই আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে খাদিজা। টানা দুই মাস নানা সংশয়-শংকার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর রোববার গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার সহাস্য ছবি যেন জীবনের জয়গানেরই অপর নাম।
খাদিজার চিকিৎসক ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন জানান, পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য ভালো কোথাও রিহ্যাব ফিজিওথেরাপি করানো উচিত বলে মেডিক্যাল বোর্ড পরামর্শ দিয়েছিল। সে কারণেই সকালে খাদিজাকে সিআরপিতে পাঠানো হয়েছে।
স্কয়ার হাসপাতাল ছাড়ার আগে খাদিজা বলেন, ‘আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। যেন আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরতে পারি। আর আমার জন্য আপনারা যে কষ্ট করেছেন তার জন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
গত ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে চাপাতির কোপে আহত হন খাদিজা। মূমুর্ষু অবস্থায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া হয় সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেই রাতেই রওনা দিয়ে পরদিন ভোরে তাকে আনা হয় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। চাপাতির আঘাতে খাদিজার মস্তিষ্কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কয়েক দফা অস্ত্রোপচারের পর খাদিজা ধীরে ধীরে স্মরণশক্তি ফিরে পেতে শুরু করে।
পাকিস্তানের কিশোরী মালালা ইউসুফজাইও প্রতিপক্ষের গুলি খেয়েও বেঁচে উঠেছিল। শুধু বাঁচাই নয়, সে হয়ে উঠেছে সারাবিশ্বের কন্যাশিশু ও কিশোরীদের অন্যতম প্রেরণা। নারী শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও আমরা চাই, খাদিজাও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠুক, ফিরে যাক তার পড়াশোনায়, স্বপ্ন পূরণ হোক তার, আর পাশাপাশি বদরুলদের মতো ঘৃণ্য পিশাচদের বিরুদ্ধে সে হয়ে উঠুক জ্বলজ্বলে প্রতিবাদ, বিশ্বজুড়ে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সে হয়ে উঠুক মোক্ষম উদাহরণ, এটাই আমাদের একান্ত চাওয়া।
জয়তু মানবপ্রাণ। জয় হোক নারীর।