পাহাড়ের কান্নার সমাধান ইকো ট্যুরিজমে?

অনুপম সৈকত শান্ত: উইমেন চ্যাপ্টারে বন্ধু দিলশানা পারুলের কেমন হতে পারতো পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন শিরোনামের লেখাটি চোখে পড়লো। লেখক আমার রাজপথের বন্ধু, যে রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিলাম- সেটি থেকে দুজনেই দূরে সরে গেলেও- রাজপথ থেকে কেউই পুরোপুরি সরতে পারিনি বলে রাজপথ-আন্দোলন-সংগ্রামের বন্ধুত্বটি টিকে আছে। নানা কারণে রাজপথে পুরোদস্তুর না থাকতে পারলেও অনলাইনে সে তার সংগ্রাম জারি রেখেছে বিধায় তার লেখাজোকা মন দিয়েই পড়ি … ফলে, এই লেখাটাও পড়লাম। পড়ে বেশ হতাশ হলাম এবং আমার এই রাজপথের বন্ধুটির লেখা বলেই- ফেসবুকে তার ওয়ালে গিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এলাম:

hill-track-1সরি, দিলশানা পারুল- তীব্র দ্বিমত জানাইয়া গেলাম … পার্বত্য অঞ্চলকে পর্যটনের স্বর্ণ খনি বানানোর এই উদ্দেশ্য এবং লক্ষের সাথেই আমার তীব্র বিরোধ। যাই হোক- মূল আলাপে যাওয়ার আগে একটা কথা মনে পড়লো … আমাদের বাংলাদেশে ইকো পার্কের বলির নাম আছে তোর? মধুপুর অঞ্চলের? মনে না থাকলে- ইকো পার্ক মধুপুর দিয়া গুগল কর … “ইকো ট্যুরিজম”- হইতেছে এই ব্যবসার আধুনিকতম সংস্করণ- যেইটা এইমুহুর্তে সবচেয়ে বেশি প্রফিটেবল বলে গণ্য হইতেছে … তোর “ইকো” শব্দটা শুনলেই পীরেন স্নাল – চলেশ রিসিলদের নাম মনে পড়ে … ব্যবসায়ীদের কাছে- সেইটা প্রাইভেট ব্যবসায়ী হোক কিংবা আর্মি বা রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ী হোক- ইকো বলতে গাছপালা- পশু পাখি এইসব, ঐ খানকার মানুষ মোটেও না … নিশ্চয় ভুলিস নাই মধুপুরের ইকো পার্কের জন্যে আদিবাসীদেরকে প্রাণ – প্রকৃতির জন্যে ক্ষতিকর সাব্যস্ত করে- ঐ সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে উচ্ছেদ করার জোর চেস্টা হয়েছিল …

khagrachari-23-08-2016-678x381আলোচ্য লেখাটির শেষ প্যারায় লেখার মূল উদ্দেশ্যটি পরিস্কার হতে পারে: বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের যে সৌন্দর্য, এর যে রঙিন সাংস্কৃতিক অবয়ব আমরা চাইলে এইটা পযর্টনের স্বর্ণ খনি হতে পারে …, বাস্তবে পার্বত্য অঞ্চলের সৌন্দর্য আর রঙিন সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে ট্যুরিজম বা পর্যটন ব্যবসার লোভ অনেক বাঙালির দীর্ঘদিনের, যে লোভের জায়গাটি থেকে ক্ষমতাদণ্ড হাতে থাকায় বাংলাদেশ আর্মি যথেচ্ছ পর্যটন করে চলেছে এই পার্বত্য অঞ্চলে। তার লেখায়- যখন এই যথেচ্ছ পর্যটনের বিরোধিতা করে, কিছু নিয়ম মাফিক ও সুন্দর তথা ইকো ট্যুরিজমের জন্যে আহবান জানানো দেখি- তখন এর ভয়ানক বিপদের দিক চোখে ভেসে ওঠে। পাহাড়ীদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কিছু লাইন আছে বটে এই লেখায়, কিন্তু যখন কারণটা বলা হয় মিলিটারির যথেচ্ছ পর্যটন ব্যবসা- আর সমাধানও জানানো হয়- ইকো ট্যুরিজম, তখন খুব মুশকিলে পড়ে যাই।

পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড় হচ্ছে খনি … হোটেল ব্যবসা, কাঠের ব্যবসা, পাম ব্যবসা, রাবার ব্যবসা … এইসব নানা কারণেই অনেকদিন ধরে পাহাড় কেনা-বেচা হচ্ছে, একরের পর একর পাহাড় বাঙালি হর্তাকর্তা ব্যক্তিদের কাছে লিজ দেওয়া- এইসবের জন্যে পাহাড়িদের উচ্ছেদ জরুরি … এসবের সাথে আর্মির পর্যটন ব্যবসাও যুক্ত হয়েছে মাত্র। এই পর্যটন ব্যবসা যুক্ত হওয়ার মেলা আগে থেকেই পাহাড়ীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, পাহাড়ীদের দুর্বল করতে সমতলের বাঙালিদের পার্বত্য অঞ্চলে অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে- সেটা ভুললে কিভাবে চলে?

kaptai-1এমনকি- এই লেখার শুরুর প্যারায় উল্লেখিত কাপ্তাই লেক- তা ভ্রমণরসিক বাঙালির চোখে অপার সৌন্দর্যের হোক না কেন- তার সাথে হাজারো উচ্ছেদ হওয়া পাহাড়ির কান্না মিশে আছে (যে কান্নার কথা লেখাটিতেও উল্লেখ আছে), সেই কাপ্তাই লেক কিন্তু বাঙালির পর্যটনের উদ্দেশ্যে বানানো হয়নি যে ইকো ট্যুরিজমের পথে গেলেই এরকম উচ্ছেদ বন্ধ করা সম্ভব হবে   … আর্মি পরিচালিত পর্যটন, পাহাড়কে ন্যাড়া করে প্রমোদ হোটেল তৈরি করা পর্যটন নিয়ে অনেক আপত্তি আছে, থাকাটাই স্বাভাবিক, সেটার সমাধান হিসেবে যদি ইকো ট্যুরিজমের পথ বাতলে দেই, কেমন হয় ব্যাপারটা?

তাতে পাহাড়ের- বনের সামাজিক মালিকানা নিয়ে আদিবাসীদের যে সংগ্রাম সেটাকে কি গৌণ করা হচ্ছে না? রাষ্ট্রের অন্যায় দখলদারিত্ব- তার আর্মি উপস্থিতি এবং পাহাড়ে পরিকল্পিতভাবে বাঙালি পুশইনের মাধ্যমে অব্যাহত উচ্ছেদ চলে এসেছে বিগত দশকগুলোতে- সেসব বাদ দিয়ে ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে পাহাড়ি উচ্ছেদ বন্ধ হবে কি?

লেখকের ইকোট্যুরিজমের লোভনীয় প্রস্তাবটির দিকে যদি একটু চোখ দেই, তাহিলে দেখিঃ পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট কটেজ যত আকর্ষণীয়, তৈরি করা যত সহজ এবং যতখানি কস্ট ইফেক্টিভ, বড় বড় দালান সেটা কখনই হতে পারে না। পাহাড়ে থাকবে পাহাড়ি রেস্তোরা, যেটা চালাবে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠি, যেটায় সেবা প্রদান করবে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠির ছেলেমেয়েরা। তাতে স্থানীয়ভাবে এমপ্লয়মেন্ট যেমন জেনারেট হবে, তার চেয়েও বেশি সেটা টুরিস্টকে আকর্ষণ করতে পারবে স্থানীয় বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির কারণে। কেন্দ্রীয় কোন পাহাড়ের পাদদেশে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠির মেলা বসবে প্রতিদিন, যেটা দেখার জন্যই টুরিস্ট আসবে, সন্ধ্যায় সেখানে পাহাড়ি নাচ গানের আসর বসবে প্রতিদিন!

pahariআমি একদম নিশ্চিত যে, এরকম করতে পারলে সেটি আরো বেশি ট্যুরিস্টদের আকর্ষণ করবে … পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে কটেজ, পাহাড়ি স্বাদের খানাপিনা, পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড়ি গানা- বাজনা- একদম পরিপূর্ণ প্যাকেজই বটে … পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরও পকেটে কিছু টাকা-পয়সাও ঢুকবে সন্দেহ নেই … কিন্তু পাহাড়িদের স্বকীয় জীবনযাপন, তাদের সংস্কৃতি এইসব উবে যে যাবে সেটাও নিশ্চিত।

আর আগে যে উচ্ছেদ বন্ধের কথা বলা হলো- উপরি হিসেবে সেটা হবে আরো বেশি করে … কেননা এখন একটা দুটো পাহাড়ে বহুতল প্রমোদ হোটেলের বদলে পাহাড়ের কোলে কোলে কটেজ বানানোর জন্যে বেশি পাহাড় লাগবে- সেগুলার আন্ত সংযোগের জন্যে – আধুনিক সুযোগ সুবিধার জন্যে বেশি অবকাঠামো লাগবে – সবই পাহাড়িদের উচ্ছেদে ভূমিকা রাখবে … লেখককে চিন্তা করতে মানা করি, কেননা বিডি আর্মি বা সরকার ধীরে ধীরে এরকম ইকো ট্যুরিজমের ব্যবসার দিকেই ঝুকবে, কেননা তাতে আরো অনেক বেশি ট্যুরিস্টকে আকর্ষণ করা সম্ভব হবে …

ফেসবুক পোস্টেই এই লেখার সমর্থনে একজন লিখেছে (যে কমেন্টকে আবার লেখক সমর্থন জানিয়েছেন), বিডি আর্মির এরকম ট্যুরিজম কনসেপ্টকে ডিলিট করে সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট করা গেলে পাহাড়ীদের অনেক হেল্প হবে। বিডি আর্মিকে ডিলিট না, তাদের ট্যুরিজম কনসেপ্টকে ডিলিট করে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের সহায়তা হবে- এসব সাসটেইনেবল ডেভলোপমেন্ট প্রজেক্ট দিয়ে? বাহ ভালোই! তো, এই হেল্পটা কারা চাচ্ছে? পাহাড়ীরা? নাকি- এসব বাহারি ডেভলোপমেন্ট প্রজেক্টের ফেরিওয়ালারাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হেল্পও ফেরি করে বেড়াচ্ছে? এরকম “হেল্প” এর ফেরিগিরি অবশ্যই সব ডেভলপমেন্টিস্টরাই করে … রামপালের স্থানীয় জনগণের কত কি হেল্প হবে, কত এমপ্লয়মেন্ট হবে … এসব হেল্পের গালগল্প অবশ্য নতুন না … কিন্তু নিজেরা রামপাল- ফুলবাড়ী সহ, বিভিন্ন উন্নয়ন বিরোধী আন্দোলনের লোক হয়ে কিভাবে পাহাড়ের ডেভলপমেন্টের মাধ্যমে হেল্পের গালগল্পরে প্রচার করতে পারে, সহসা বুঝে আসে না …  

hill-track-2পাহাড়ে বা বনে- আদিবাসীদের জমির উপর যে সম্পূর্ণ অধিকার তাদের- যেই অধিকারের দুর্বল, কিন্তু প্রাণপন সংগ্রামটা তারা করছে- একদম অসম যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তারা যাচ্ছে- সেইখানে তাদেরকে এই রকম ডেভলোপমেন্টের গল্প শুনালে মেজাজ খারাপ লাগে …এসবে তাদের নাকি হেল্প হবে … লেখক গল্প শুনালেন ইকো ট্যুরিজমের … পাহাড়িদের তাতে নাকি এমপ্লয়মেন্ট হবে … অবস্থার উন্নতি হবে … মনে হচ্ছে- এই উন্নতির জন্যে পাহাড়িরা খুব লালায়িত … ইংরেজরাও এসে ভারতবর্ষের প্রভূত উন্নতি করে গেছে বটে … আমরা বাঙালিরাও এখন পাহাড়ে এইসব ইকো ট্যুরিজম ব্যবসা খুলে তাদের খুব উপকারই করতে চাই বটে … তাদের রঙ্গিন সংস্কৃতি – নাচা গানা – এইসবের মাধ্যমে বাঙালিদের ব্যবসাও হবে আর আদিবাসীরা বাবুর্চিগিরি করে, ট্যুরিস্টদের নাচা গানা দেখিয়ে শুনিয়ে, জিনিসপাতি বেঁচে (এখন গেলেই দেখা যাবে, পাহাড়ি জিনিসপাতি কারা বেঁচে)- কিছু ইনকাম করতে পারবে … খুব ভালো বুদ্ধিই বটে …

ফেসবুক পোস্টে আমার সমালোচনার জবাবে লেখক বলেছেন: বাস্তব অবস্থা কি? খাগরাছড়িতে এখন ট্যুরিজমের নামে ব্যাপক উচ্ছেদ চলছে। এই লেখার একটাই পয়েন্ট ছিলো যে, টুরিজমের নামে উচ্ছেদের দরকার পরে না! তুই কালকে আরমি সরাতে পারবি? কালকের মধ্যেই সকল আদিবাসী দলগুলোকে একত্রিত করতে পারবি? নাতো? কিন্তু উচ্ছেদ কিন্তু আজকেরই ঘট ! এইটা একটা বাস্তব সমাধান। যে টুরিজমর নামে উচ্ছেদের দরকার নাই! আর যে বিচিত্র টুরিজম পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে তাতে আগামী দশ বছরের মধ্যে পাহাড় আর পাহাড় থাকবে কিনা সন্দেহ। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে আন্দোলন যারা করছে তাদের সাথে সম্পূর্ণ সলিডারিটি নিয়েই লিখাটা

খাগড়াছড়িতে আলুটিলা পর্যটন সম্প্রসারণের নামে পাহাড় দখলের কাজ চলছে- সেটার সমাধান যখন ইকো ট্যুরিজম দেখানো হয়, তখন আরো দশটা উন্নয়ন প্রকল্পেও যে পাহাড় দখলের কাজ অব্যাহত চলছে- সেই উদাহরণটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। এমনকি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নামেও পাহাড় দখল ও পাহাড়ীদের উচ্ছেদ- এটাও পাহাড়ীদের এরকম কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করার কারণ। বিজিবি সদর দপ্তর, আর্মি গ্যারিসন- এইসব নানা নামেই পাহাড় দখল চলে, উচ্ছেদ চলে।

evictionএগুলো হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় ভাবে ও বৈধভাবে। তাছাড়া তো আছে- ওখানকার বাঙালিদের লেলিয়ে দিয়ে (পেছনে আর্মি ব্যাকিং থাকে, মাঝে মধ্যে আর্মিও কথিত দাঙ্গা বন্ধের নামে পেছন থেকে সামনে চলে আসে) পাহাড়ীদের মেরে কেটে জ্বালিয়ে উচ্ছেদ ও দখল করা হয়। কাপ্তাই বিদ্যুৎ প্রকল্পের সময়ে উচ্ছেদ হয়েছে লাখের মত পাহাড়ী। ১৯৭৯ থেকে বাঙালি অনুপ্রবেশ শুরু করার পর থেকে নিয়মিত হামলা- আক্রমণে (বাঙালি মিডিয়ায় এর নাম দাঙ্গা) উচ্ছেদও নিয়মিত চলছে। পার্বত্য চুক্তির সময়েই ১২ হাজার শরণার্থী পরিবারের কথা বলা হয়েছিল। লাখ লাখ মানুষ উচ্ছেদ হওয়া উদ্বাস্তু (তাদের ভূমির মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে শক্তিশালী ভূমি কমিশন করার কথা ছিল, সেই ভূমি কমিশন নামেমাত্র করে সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের গালগল্প দেয়), এদের কত অংশ যথেচ্ছ পর্যটন ব্যবসার বলি?

হ্যাঁ, লেখক নিজেও বলেননি যে- কেবল পর্যটনের কারণেই উচ্ছেদ হয়, বরং তিনি বলতে চাচ্ছেন, বর্তমানে পর্যটনের নামে এই উচ্ছেদ সেটি ঠেকানো সম্ভব ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে। আর এই জায়গাতেই বিরোধিতা করি- কেননা এই উচ্ছেদের সমস্যাটি পর্যটন কিভাবে হবে তার নয়- বরং এই পাহাড়ে, পাহাড়ের জমিতে পাহাড়ীদের মালিকানার অধিকার হারিয়ে ফেলার।

এই কমেন্টে বা মূল লেখায় লেখকের এমন একটা অবস্থান দেখি যে- তার কথিত ইকো ট্যুরিজম হলেই পাহাড়ীদের উচ্ছেদ করা হবে না, যাবে না … ইত্যাদি, বাস্তবে এই জায়গাটিতেই ভীষণ আপত্তি করি। তার এই লাইনটাও খুব সিগনিফিকেন্টঃ আঞ্চলিক জনগোষ্ঠীকে ভূমিহীন করে, তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে আর যাই হোক, লাভবান পর্যটন শিল্প হয় না/ … যাই হোক আমার আপত্তির জায়গা মোটাদাগে কয়েকটি পয়েন্টে তুলে ধরছিঃ

১/ পর্যটনের নামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করার যে চক্র চলছে … সেটার কাউন্টার হিসাবে ইকো ট্যুরিজমকে সামনে আনা, পাহাড়ীদের সংস্কৃতি, তাদের বৈচিত্র এইসবকে দেখিয়ে লাভজনক ট্যুরিজমের লোভ দেখানো, পর্যটনের স্বর্ণ খনি বানানোর লোভ দেখানো- আমার কাছে চরম অমানবিক, পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর জন্যে অমর্যাদাকর, এবং পাহাড়ীদের নিয়ে মশকরা সমতূল্য মনে হয়। শেয়ালরে বুঝানো হচ্ছে- মুরগীটারে মেরে কেটে না খেয়ে, তারে একটু আদর যত্ন করলে- ডিম পারবে … বাচ্চা দিবে … লাভ অনেক বেশি হবে … এমনে করে শেয়ালরে বুঝিয়ে লেখক ঐ মুরগীর ইমিডিয়েট মরার হাত থেকে বাঁচানোর মহান ব্রত নিয়া শেয়ালকে লাভজনক ব্যবসা বুঝাচ্ছে, যেখানে মুরগীরা বাঁচার অধিকার নিয়ে আন্দোলন করছে …

২/ উচ্ছেদ ঠেকানোর একটাই উপায়- এইরকম উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম … তার জমির অধিকার তাকে ফিরিয়ে দেয়ার সংগ্রাম … সেটা বাদ দিয়ে, এবং এরকম উচ্ছেদ করা- অমানবিক ও অনৈতিকই কেবল না – আন্তর্জাতিক আইনানুসারে অন্যায় ও অবৈধ- এই ভয়েসটা বাদ দিয়ে, উচ্ছেদ না করেই তো এইসব পাহাড়ীদের ইউজ করে আরো লাভজনক ব্যবসা তোমরা করতে পারবা– এমন ছবকও বাস্তবে, অকার্যকর (আপত্তিকর ও অবমাননাকর তো বটেই)। আলুটিলায় পর্যটন সম্প্রসারণের যে প্লান- সেটার সাথে নীলগিরি ধরণের প্লানের সংযোগ একটু কমই … এই সব হর্তা ব্যক্তিরা ইদানিংকার ইকো ট্যুরিজমের কথাও জানে, তারা সেসবই করতে চায় … এবং তার জন্যে তাদের পাহাড়ীদের জায়গা জমি দরকার … তাদের ইকো ট্যুরিজম দেখানো হলে, ইকো ট্যুরিজমের নামেই তারা উচ্ছেদ অব্যাহত রাখবে। মধুপুরের উদাহরণ সেকারণেই এনেছিলাম … সেটা কাগজে কলমের প্লান হিসাবে দেখলে কিন্তু মনে হবে, আহা কত ভালো প্লান ছিল- প্রাণ প্রকৃতি রক্ষার জন্যে- এই সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা- এই রকম ইকো পার্ক করা খারাপ কিছু ছিল না … কিন্তু, আগেও বলেছি- আবারো বলি- ইকো ট্যুরিজম পশু পাখি পাছপালা পরিবেশ প্রতিবেশ প্রাণ প্রকৃতির জন্যে যতখানি ফ্রেন্ডলি- ঐখানকার স্থানীয় গরীব অধিবাসীদের জন্যে ততটা না, আর প্রান্তিকতম আদিবাসী অধিবাসী হলে তাদের জন্যে তো সম্পূর্ণই বৈরী … মধুপুর ইকো পার্ক ঠেকানো গেছে- উচ্ছেদ হতে যাওয়া আদিবাসীদের জান প্রাণ দিয়ে লড়াইয়ের মাধ্যমে … ইকো পার্কের মধ্যে তাদেরকে ইনকরপোরেট করে কিভাবে- আরো লাভজনক ব্যবসা করা সম্ভব হবে- এইসব ছবক দিয়া নিশ্চয়ই নয় …

৩/ পাহাড়ী সংস্কৃতি- শুনতে ভালো লাগে … কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখতে বলবো- পাহাড়ীদের মেলা, উৎসব, গান বাজনা- এসব দেখিয়ে বাঙালিরা ব্যবসা করে যাবে- ব্যাপারটা কতখানি তাদের জন্য মর্যাদাকর? আফ্রিকান আদিবাসীদের দেখতে এরকম সাদা চামড়ার ট্যুরিস্টরা যেত … সেসবরে কাউন্টার করে পোস্ট কলোনিয়ালিস্ট লেখাজোঁখা বেশ আছে, ফিল্ম টিল্মও আছে … দেখার আহবান জানাই। পাহাড়ী রঙিন সংস্কৃতি দেখিয়ে পর্যটন ব্যবসা ফাঁদা কিংবা এই সংস্কৃতি আমাদের বাঙালিদের আকর্ষিত করে- করবে, বিদেশীদের আকর্ষিত করে- করবে, ট্যুরিস্টদের প্রধান আকর্ষণে পরিণত হবে- সেই জায়গা থেকে আদিবাসীদের বাচিয়ে রাখতে হবে, আদিবাসীদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে- নাকি, তাদের স্বাভাবিক বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকার, সাংস্কৃতিক- সামাজিক জীবন অক্ষুন্ন রাখার অধিকার নিয়ে কথা বলবো? তাদের সংস্কৃতি, তাদের গান বাজনা, ঐতিহ্য, পোশাক আশাক, থামি- বেতের বাঁশের কাজ- কুটির শিল্প, এসব যে প্রধানত তাদের নিজেদের জন্যে- এই ব্যাপারটি আমাদের প্রগতিশীলরা কেন যে ভুলে যায়!

৪/ লেখক পাহাড়ীদের কর্মসংস্থানের কথা বলেছে। অবস্থার উন্নয়নের কথা বলেছে। পাহাড়ী রেস্টুরেন্ট- পাহাড়ীরা চালাবে (বাস্তবে যেটা হবে- বাঙালিরা পাহাড়ী রেস্টুরেন্ট দিবে- যেটায় কিছু পাহাড়ী সস্তা শ্রমে বাবুর্চি হিসেবে কাজ কাম করবে), পাহাড়ে পাদদেশে পাহাড়ী মেলা বসবে- গান বাজনা হবে (নাচা গানা বাজনার আয়োজন করলে সেটার সম্মানিবাবদ কিছু আয় হবে হয়তো- কিন্তু হাট-মেলা এসবের ক্ষেত্রেও বাজারের দখল বাঙালিদের হাতেই থাকবে- বিশ্বাস না হলে এখনো পার্বত্য অঞ্চলের বাজারগুলো ঘুরে আসতে বলবো) … আর, ঐদিকে ফেসবুক পোস্টে লেখকের আলোচনার সমর্থনে একজন তো এক কাঠি সরেস! তার মতে (এবং লেখকের মতেও কি? কেননা তিনি সমর্থনসূচক লাইক দিয়েছেন দেখলাম)- জমির মালিকানা যেহেতু পাহাড়িদের- সেহেতু পাহাড়ীরা নাকি ব্যবসারও অংশীদার হবে (হাসবো না কাঁদবো বুঝি না … তো- ইকো ট্যুরিজমের কোন জায়গায় এইসব হয়- হয়েছে বা মালিকানার শর্তাবলী এরকম থাকে- সেটা জানতে পারলে ভালো হতো …মূল ব্যাপার হচ্ছে- জমির মালিকানা পাহাড়িদের নাই, সেই মালিকানার দাবিতে তারা প্রাণপন লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে- এবং প্রতিনিয়ত বিদ্যমান মালিকানা হারাতে হারাতে প্রান্তিকতর অবস্থানে যাচ্ছে … যে জায়গা থেকে বাইরে থেকে নেওয়া প্রতিটা উন্নয়ন প্রকল্প – ব্যবসা প্রকল্প – যেকোন কিছুর বিরুদ্ধে তাদের মরিয়া হয়ে দাড়াতে হয় … আর, এরকম প্রান্তিক লোকজন – যারা এখনো ঠিক মত কেনাবেচার নিয়ম কানুন বুঝে উঠতে পারেনি বলে প্রতিনিয়ত এমনকি ছোট স্কেলের বাঙালি ব্যবসায়ীদের হাতেও প্রতারিত হয়- তারা হবে অংশীদার? পাহাড় তো পাহাড়- আমাদের প্লেন ল্যান্ডেও এরকম কিছু আছে?) … আগের কমেন্টের কথাটা আবার উল্লেখ করছি … পাহাড়িদের অবস্থার এই সব উন্নতির কথা- তাদের ভাবতে বলেছে কে?

৫/ মোদ্দাকথায় আসি … আমি পাহাড়ীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষের দাঁড়াইতে চাই … আমি চাই পাহাড়ীদের জমির উপর তাদের সম্পূর্ণ অধিকার ফিরে আসুক – তাদের উপর উপনিবেশিক নিপীড়ন বন্ধ হোক – সেইখান থেকে আর্মি তুলে দেয়া হোক, তাদের হারানো জমিও তাদেরকে ফিরায় দেয়া হোক … তাদের উন্নয়ন, তাদের অবস্থার উন্নতির ভার ও সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারও তাদের হাতে ন্যস্ত করা হোক … এইসব পর্যটন ব্যবসার নামে (সেইটা ইকো হোক আর নন-ইকো হোক) উচ্ছেদ বন্ধ হোক, উন্নয়ন ব্যবসা- এমনকি শিক্ষা উন্নয়ন তথা মেডিকেল কলেজ- বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে যখন তারা দাঁড়ায়- তখনও যেসব প্রগতিশীল বাঙালিরা পাহাড়িদের উন্নয়নের গল্প শুনাতে গিয়েছিল- তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াই … পাহাড়ীদের উপর সেনাবাহিনী চাপিয়ে দিয়া (গোটা বাংলাদেশে প্রতি ১৭৫০ জনে একজন সেনা আর পার্বত্য অঞ্চলে ৪০ জনে একজন), প্রতিনিয়ত পাহাড়ীদের উচ্ছেদ করে করে বাঙালিদের পুশ করার অব্যাহত ধারা বজায় রাইখা (১৯৪১ সাল-পাহাড়ি ৯৭.০৬% বাঙালি ০২.৯৪% ১৯৫১ সাল-পাহাড়ি ৯৩.৭১% বাঙালি ০৬.২৯% ১৯৬১ সাল-পাহাড়ি ৮৮.২৩% বাঙালি ১১.৭৭% আর ২০১১ সাল পাহাড়ি ৫১% বাঙালি ৪৯%), ঐখানে বাঙালিদের- বাঙালি সেনার বা বাঙালি সরকারের যেকোন ব্যবসারেই পাহাড়ীরা যেরকম সন্দেহের চোখে দেখে- আমিও দেখি … এই সব ব্যবসাকে যতই ইকো ফ্রেন্ডলি বা আদিবাসী-পাহাড়ী ফ্রেন্ডলি হিসেবে রঙ চড়ানো হোক না কেন …

৬/ উইমেন চ্যাপ্টারের লেখাটিতে একটি বড় ভারকেন্দ্র হচ্ছে- পাহাড় নষ্ট হয়ে যাওয়া! তার ভাষাতেঃ সভ্য পৃথিবী প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে যে টুরিজম সেইখান থেকে কিন্তু সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এখন কিন্তু আর সেই যুগ নেই যে পাহাড়ের মধ্যখানে গ্র্যান্ড সুলতানের মতো একটা হোটেল করবেন, আর বিদেশিরা সব ভীড় করবে সেইখানে!”..যে পাহাড়ে এসে বিরিয়ানি খেতে চাইবে সে পুরান ঢাকার রাজ্জাক হোটেলে যাক, পাহাড়ে কেন? যে ধুম মাচালে গান বাজিয়ে নাচতে চাইবে, সে কোন ডিস্ক ক্যাবারে যাক, পাহাড়ে কেন? এইটা আধুনিক টুরিজম না। আধুনিক টুরিজম ইকো টুরিজমে বিশ্বাস করে

সাধারণভাবে, এর সাথে দ্বিমত করি না। আমাদের কক্সবাজার, আমাদের কুয়াকাটাকে যেভাবে নষ্ট করে ফেলেছে, ফেলছে লাগামহীন পর্যটন ব্যবসা, তাতে কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেন্ট মার্টিনে ওরকম যত্রতত্র বড় বড় হোটেল, কটেজ – ইট পাথরের দালানের চাইতে ওখানকার পরিবেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কুড়েঘরে ট্যুরিস্টদের থাকার ব্যবস্থা থাকলে, আধুনিক জীবনের সুবিধাহীন তাবুতে ক্যাম্প করে থাকার ব্যবস্থা থাকলে- সেটার যে আলাদা আবেদন- তার তুলনা নেই।

কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে এরকম কোন তরিকার কথা বাতলে দেয়ার বিরোধিতা করছি, কেননা পাহাড় নষ্ট করে কিংবা নষ্ট না করেই ট্যুরিজম- বা যেকোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পার্বত্য অঞ্চলে কান্নাই কেবল নিয়ে আসে। পাহাড় নষ্ট করা নীলগিরি যেমন চাইনা, পাহাড়ের মাঝখানে বেখাপ্পা বেঢপ গ্রান্ড সুলতান হোটেল যেমন চাই না যেমন, তেমনি পাহাড়কে ঠিক রাখা পর্যটন- সেটা সরকারের পর্যটন কর্পোরেশনের বা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানের বা বাঙালির ব্যবসার উদ্যোগেই হোক- চাই না।

সেনাবাহিনীকে বলি না, নীলগিরিকে ন্যাড়া করে হেলিপ্যাড ওয়ালা হোটেল বানানোর বদলে পাহাড়ের প্রকৃতিকে অক্ষুন্ন রেখে- পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট কটেজ বানাও। তাদের বলি, পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে এসব পর্যটন ব্যবসা বন্ধ করো। (নীলগিরির ন্যাড়া পাহাড় দেখে যত না মন খারাপ হয়েছিল- তার চাইতেও কষ্ট পেয়েছিলাম- ঐ এলাকা থেকে প্রান্তিক আদিবাসী পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর আরো গহীনে সরে পড়ার গল্প শুনে …, গল্পটি শুনেছিলাম আর্মির এক সৈনিকের কাছেই, যে বলছিলো- এই অঞ্চলের আশেপাশে আগে অনেক পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর বাস ছিল যারা উন্নত পাহাড়ীদের থেকে আলাদা, তাদের মহিলারা এমনকি উর্ধাঙ্গ অনাবৃত রাখে- এমনই জংলী টাইপ … এরা সবাই আরো গহীনে চলে গেছে …)

৭/ পার্বত্য অঞ্চলকে পর্যটনের খনি বানানোর কথা শুনলেই আঁতকে উঠি। পর্যটন একটি ব্যবসা। দুনিয়ার অনেক দেশই এই ব্যবসায় প্রভূত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে বিধায় আমাদের দেশেও এটা একটি ভালো ব্যবসার ক্ষেত্র হতে পারে বলে অনেকের অভিমত। অনেক বিনিয়োগকারীই পার্বত্য অঞ্চলে বিনয়োগ করার জন্যে এক পায়ে দাঁড়া। তারা মনে করে, বিশ্বাস করে- পার্বত্য অঞ্চলকে পর্যটনের খনি বানানো সম্ভব। একদম রিমোট অঞ্চল পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ক্যাবল কারসহ এডভেঞ্চারাস রাইড, পর্যাপ্ত গাইড, দূর-দূরান্তে রাত্রিযাপনের সুব্যবস্থা, পাহাড়ীদের হাতে তৈরি জিনিসপত্র বিপণনের ব্যবস্থা, তাদের বিভিন্ন উৎসবকে প্রমোট করা – এসব পরিকল্পনার কথা অনেক আগে থেকেই আলোচিত। সেই সাথে লেখকের কথিত ইকো ট্যুরিজম, ভারতের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট লোকেশনের আদলে পর্যটনের সুযোগ সুবিধাগুলো যুক্ত করা- এগুলোও নতুন কিছু না। আমার ধারণা, এসবই আমাদের সরকারের, সেনাবাহিনীর, বাঙালি ব্যবসায়ীদের নজরে আছে, পরিকল্পনাতেও ভালো করেই আছে। পাহাড়ীদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মী একজনের মুখ থেকে যখন এমন কথা বের হয় এবং অনেক আদিবাসী পাহাড়ী যখন এই লেখাটি (লেখক তার কমেন্টে যেটি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন) শেয়ার করেন- তখন পুরো স্তম্ভিত হয়ে যাই। তারা পার্বত্য অঞ্চলকে এরকম পর্যটন ব্যবসার খনি বানানোর ফল দেখতে পারছেন না?

আমাদের মিডলক্লাস- আপার মিডলক্লাস, যারা ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে- পাহাড়ে ট্রেকিং, নিরিবিলি কটেজে এডভেঞ্চার, আদিবাসীদের উৎসবগুলোতে দুদিন ঘুরে আসতে পছন্দ করে- যারা ভারত- নেপাল – ভূটান ঘুরে এসে, বাংলাদেশেও এইরকম নৈসর্গিক জায়গাগুলোরে মেলা ফিল করে- তারাই মাঝে মধ্যে এসব ইকো ট্যুরিজম, পর্যটন নিয়া চিল্লাফাল্লা করে, এগুলা আসলে নিজেদের মানে, এইসব মিডলক্লাস বাঙালির মনের খোরাক মেটানোর উদ্দেশ্যে … কিন্তু পাহাড়ে যেহেতু কিছু “সমস্যা” চলছে- সেইজন্যে তারা ওখানকার আদিবাসীদের কী কী উপকার হবে- সেই ফিরিস্তিও যুক্ত করে দেয় … এসবকে একরকম হিপোক্রেসিই মনে হয়।

শেয়ার করুন: