সেবিকা দেবনাথ: এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নতুন কোনো ঘটনা নয়। তাহলে এই একই বিষয় নিয়ে ক’দিন পরপর কেন এতো মাতামাতি? যেসব ভাই-বোন এখনও এই গাজীর গীত নিয়ে লিখে যাচ্ছেন, প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন, তাদের কাছে মিনতি করছি, প্লিজ এসব নিয়ে লেখা বন্ধ করেন। প্রতিবাদ করা বন্ধ করেন। যারা নিজেদের রক্ষা নিজেরা করতে পারে না তাদের জন্য কথা বলে প্রতিবাদ করে কোনো লাভ নাই। প্রতি পদে পদে মার খাওয়া এই লোকগুলো নিজেদের রক্ষা করতে অক্ষম।
তাছাড়া ঘটনা যতটা না ঘটে আপনারা তার চেয়ে ঢের বেশি বাড়িয়ে বলেন ও লেখেন। এতে দেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। নাসিরনগরের ঘটনায় মাননীয় মন্ত্রীওতো সেই কথাই বলেছেন। সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক দাবি করেন, ‘নাসিরনগরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সাংবাদিকরাই পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করে তুলছেন।’ পাশাপাশি তিনি এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়াবাড়ি না করতে সতর্ক করেছেন।
কথা সত্য। এক সাথে থাকতে গেলে একটু-আধটু অশান্তি কোন সংসারে না হয়? আর এতো হলো জগৎ সংসার। একে এতো বড় করে দেখার কিছু নাই।
ওই যে প্রবাদে আছে না, দুই তিনটা বাসন এক সাথে থাকলে একটু ঠোকাঠুকি লাগবেই। এসব তেমনই ঠোকাঠুকি। দেশে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে, দেশ মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তিতে বহুদূর এগিয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এতো সাফল্যের মাঝে এই তুচ্ছ ঘটনাকে এতো বড় করে দেখার কিছু নাই।
আপনারা প্রতিবাদ করছেন, আর সংখ্যালঘু এবং তাদের নেতারা কী করছেন? বিবৃতি দেয়া বড়জোর প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধনে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। এর বেশি করার ক্ষমতা তাদের নেই। (এই লেখাটা শেষে জানলাম যে, তারা শুক্রবার প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন, যাক মন্দের ভাল)।


সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটলে প্রতিবারই ভোট বর্জনের হুমকি দেন তারা। কিন্তু একবারও কি ভোট বর্জন করার মতো সাহস দেখিয়েছেন? এসব যে ফাঁকা আওয়াজ তা আর বুঝতে বাকি থাকে না কারও। রুখে দাঁড়াতেও ক্ষমতা লাগে। কোমরে জোর থাকা লাগে। কোনোটাই যখন নাই তখন মার খান। মার খেতে খেতে মরে যান। বেদখল হলেও শ্মশানের কিছু অংশ এখনও অবশিষ্ট আছে। একদিন হয়তো শ্মশানের মাটিও কপালে জুটবে না।
বাধ্য হয়েই হোক আর স্বেচ্ছায়ই হোক সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করছে। এ নিয়ে এতো হাহাকার করার কি আছে? পারলে আপনারাও যান। কেউ তো আর পায়ে ধরে থেকে যেতে বলছে না। বলবেও না কেউ। নিজের ক্ষমতা নাই, তাই যাচ্ছেন না। পড়ে থেকে মার খেতে আর কাঁদুনে গাইতে আপনাদের ভালো লাগে। দেশপ্রেমের নাম দিয়ে নিজেদের এই অক্ষমতাকে আড়াল করতে পছন্দ করেন আপনারা।
শোনেন, দেশের জন্য যতই আপনি কাঁদেন, মুক্তিযুদ্ধে আপনার বাপ-দাদা-কাকা-জ্যেঠা শহীদ হোক, আপনার মা-বোন-মাসী-পিসী সম্ভ্রম দিক, এর কোনো দাম নাই। কেননা তখন সময়ের প্রয়োজনেই তারা যুদ্ধে গিয়েছিল। এ নিয়ে আপনি হয়তো গর্ব করতে পারেন, কিন্তু সবাইকে কেন করতে হবে?
হিন্দু শাস্ত্রে আছে, বাবা-মায়ের মুখাগ্নির অধিকার একমাত্র বড় বা ছোট ছেলের। মাঝখানে শত পুত্র থাকলেও তারা ফাও। ওই অধিকার তাদের নেই। এই দেশে সংখ্যালঘুরা হলো তেমনি ফাও। শুধু ফাও না, ফাও থেকে ফাওতর।
কালী পূজার পরপরই নাসিরনগরে প্রতিমা ভাঙ্গচুরের ঘটনা ঘটেছে। পত্রিকার পাতায় এসেছে ‘ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারা দেশে শ্যামা পূজা পালিত’- এর বেশি কী চান আপনারা? আপনাদের কষ্ট করে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হলো না। যত যাই ঘটুক ইতিবাচকভাবে নিতে শেখেন। বোঝেন না কেন আপনারা এই দেশের শত্রু। তাইতো আপনাদের পূর্ব পুরুষের সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি। অর্পিত সম্পত্তি বলে কয় জনে? অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে দূর্গা পূজার পাঁচ দিন আরতীর সময় যে নিয়ম মেনে মাইক ও ঢাকের বাজনা বন্ধ রাখেন, এর কোনো মূল্য নেই ওদের কাছে? শ্রদ্ধাকে ওরা দুর্বলতা ভাবে।
তবে, যতো যাই ঘটে যাক, এই দেশ কখনও সংখ্যালঘু শূণ্য হবে না। গণতন্ত্রের বৈচিত্র্য’র নামে কুমিরের ছায়ের মতো কিছু সংখ্যালঘু সরকার এমনিতেই জিইয়ে রাখবে। খেলায় যেমন ‘দুধভাত’ আছে, তেমনি সংখ্যালঘুরাও ‘দুধভাত’ হয়ে থাকবে। যারা প্রতি মূহুর্ত ভয়ে কুকড়ে থাকবে। তবুও ওরা দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে এই দেশে। মার খাবে, তবুও ওদের দেশপ্রেম ঘুচবে না। হায় রে!
এত যে বকছি, এরপরও কেন মনের ঝাল মিটছে না? ভাঙ্গা প্রতিমার বিভিন্ন অংশ ধূলিসাৎ হতে দেখে কেন চোখ ঝাপসা হয়? আমার কয়েক পূর্ব পুরুষ এ দেশে থাকার পরও দেশটা কেন আমার হলো না? সব থাকতেও কেন নিজেকে নিঃস্ব লাগে? কেন ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় আমাকে? আমি শ্রীমতি বলে?