ইশতিয়াক ইসলাম খান: ভর্তি পরীক্ষার সিজন চলছে। এই সময়টায় গত কয়েক বছরে ক্রমবর্ধিষ্ণু টেনশান থেকে যেসব ছাত্রী পরামর্শ চেয়ে কথা বলেছে, অধিকাংশের ‘না টিকলে কি করবি?’-র উত্তরে একটা সাধারণ উত্তর পেয়েছি। ‘ভাইয়া, না টিকলে শিউর বাসা থেকে ঘাড় ধরে বিয়ে দিয়ে দিবে’ অথবা ‘কি আর করব? বিয়ে করে ফেলব সুন্দর বড়লোক দেখে কাউকে’।

প্রথম ধরনের উত্তরে আতংক মেশানো থাকে, আর পরেরটাতে নিখাদ আনন্দ। কথা বলার রুচিই নষ্ট হয়ে যায়, মনেপ্রাণে কামনা করতে ইচ্ছে করে, এরা কোথাও না টিকুক। যার জীবনের সব উদ্দেশ্য বিয়ের মোহনায় মিলিত হয়, তার চেয়ে সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য উপকারী কেউ উচ্চশিক্ষিত হওয়া উত্তম।
ভাবছেন এরা ছোট, অত শত না বুঝেই বলে? কিচ্ছু বোঝেনা মাম্মা, বিয়েটা কিন্তু ঠিকই বোঝে, এইতো?
বাদ দিলাম,যান। তাহলে আপনার আশপাশে তাকান, সত্যতা পাবেন। আপনি দেখবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার দু’বছর পর থেকেই তরুণী তার বিয়ের স্বপ্ন বা আতংকে বিভোর হয়ে থাকে। অমুক কমিউনিটি সেন্টার, তমুক ফটোগ্রাফার, হ্যান গয়না, ত্যান কাবিন ইত্যাদি নিয়ে তাদের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। অনার্সের পর জীবনে কি করতে চায়, এই প্রশ্নের উত্তরে আমতা আমতা করলেও বিয়ের দিন কোন শাড়ি পরলে কেমন হবে এ নিয়ে বিভিন্নমুখী বিশেষজ্ঞ মতামত পেতে আপনার দুই সেকেন্ডও অপেক্ষা করতে হবে না।
বিয়ে ও সংসার যেন বাংলাদেশের নারীদের অনিবার্য তীর্থ। গরীব নারীর জন্য সংসার হলো অবধারিত উৎপীড়নের লীলাক্ষেত্র, মধ্যবিত্তের জন্য সুখকর বন্দীশিবির আর উচ্চবিত্তের জন্য তা কাশিমপুর কারাগার থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর। সমস্যাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেচারী শিক্ষিত কিংবা ‘শিক্ষিত হতে চাওয়া’ তরুণীদের। বিয়ে ও সংসার তাদেরও জীবনের প্রধানতম লক্ষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া অনেকটা অপব্যয় আর খানিকটা ‘বিয়ে’ নামক লক্ষ্যপূরণের একটি সাইনবোর্ড স্বরূপ।
তিরিশ বছর আগেও শুনেছি আমাদের শিক্ষিত তরুণীরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখত। কিন্তু আজ প্রগতিবাদীরাও নিজের বোন বা মেয়েকে সতেরো বছর বয়েসে স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে পিতৃত্বকে সার্থক করেন। দুর্বার পশ্চাৎগামীতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা তরুণীদের সমস্যার সমাধানের বদলে হয়ে দাঁড়িয়েছে সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে তারা হয়ত বহু আগেই স্বামীর সংসারে যেয়ে জরায়ুর সাফল্য অর্জন করে ফেলতে পারতো, কিন্তু উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের কারণে তারা পাশ করার পূর্বে বিয়েও করতে পারে না, আবার পাশ করতে করতে ‘বুড়ি’ তকমা জুটিয়ে ফেলা হেতু ‘বাজার’-এ ভাল দামও পায় না।
চিকিৎসক বিধুমুখী, যামিনী, সুরবালা, হেমাপ্রভা বিয়ে করেননি, চন্দ্রমুখী বসু, কুমুদিনী, কামিনী রায়, ভার্জিনিয়া মেরি মিত্র বিয়ে করেছিলেন তিরিশেরও অনেক পরে। এদের কার জীবন ঠিক ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল তা আমার জানা নেই।
আমি বলছি না, বিয়ে করা অনর্থক কিংবা এটি অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু জীবনে সংসারব্রত উদযাপন করাই যদি প্রধানতম মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায়, তবে হয় আপনার মানসিক বন্ধ্যত্ব আছে, নতুবা আপনি নামেই শিক্ষিত, কামে না।
বিয়ে ‘বসা’ আর সংসার করাকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সার্থকতা ভেবে নেয়া তরুণীরা চিরকাল দাসীই রয়ে গেলে দোষটা কার ঘাড়ে দেবেন, ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে বোধহয়। বেগম রোকেয়া সাধে তো আর বলেননি, ‘নারীদের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী একমাত্র নারীরাই’।
Ishtiak you are fabulous
ধন্যবাদ। লেখাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তুলে ধরার জন্য। কিন্তু কিছু বিষয়ে একমত হতে পারলাম না।১। “সমস্যাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেচারী শিক্ষিত কিংবা ‘শিক্ষিত হতে চাওয়া’ তরুণীদের। বিয়ে ও সংসার তাদেরও জীবনের প্রধানতম লক্ষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া অনেকটা অপব্যয় আর খানিকটা ‘বিয়ে’ নামক লক্ষ্যপূরণের একটি সাইনবোর্ড স্বরূপ।” –গুটিকয়েক শিক্ষিত কিংবা ‘শিক্ষিত হতে চাওয়া’ তরুণীদের লক্ষ্য এমন হলেও এটা কোনোভাবেই সবার জন্য প্রযোজ্য নয়, বরং বাকিদের জন্য এমন সর্বজনীন উক্তি অপমানজনক। ২। বিয়ে করা আর উচ্চশিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানো, দুটি ব্যাপার পারস্পারিক বিরোধী হওয়া জরুরি তো নয়। উচ্চশিক্ষাকে ভালো বর পাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে বিবেচনা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়; কিন্তু বিয়ে করে একসাথে জীবনের বন্ধুর পথে চলাতে সমস্যা কোথায়? স্বামী তাদের জন্য ভাত কাপড়ের সংস্থান নয়, বরং জীবনে চলার পথে সঙ্গী মাত্র। প্রয়োজন শুধু নারীর আত্ম প্রত্যয় আর সঠিক জীবন সঙ্গীর। তাই একজন নারী বিয়ে করবে কি করবে না, তেইশে করবে না তেত্রিশে, সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিছু উদাহরন দিয়ে নারীর জীবন বা তার সিদ্ধান্ত কে ছকে ফেলার চেষ্টা নিতান্তই বাতুলতা।
ami o onek ke dekhesi biyer sopne thakte.. ami soho khub kom meye dekhesi jara atonke thake.. ato poralekha kore jodi nijer payei na daralam. nijer jiboner nijer jonno kono sopno na thaklo. tahole khamokha to seat noshto korar kono meaning nai..
110% true.. however it’s tough to balance between marriage and career for girls in this region .. I believed it’s not far when Gigi’s will come out of this Dillema
সমাজের নোংরা পুরুষগুলো থেকে বাঁচতে বিয়ে হলো নিরাপদ একটি সামাজিক আশ্রয়স্থল। কি আর করা? বিয়ে না করলে হাজারও পুরুষের নোংড়ামি থেকে রক্ষা করা কঠিন। বিয়ে করলে স্বামী, সন্তান ও সংসার সবই হবে …
লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। কিন্ত একটা মেয়েকে তার পুরো পারিপার্শ্বিকতা এভাবে ভাবতে বাধ্য করে। এভাবে যে মেয়েটা ভাবে না তাকে কি পরিমান মানসিক চাপের ভেতর দিয়ে যেতে হয় তা শুধু তিনিই জানেন।