একজন ‘বন্ধু’ দরকার, ‘নিয়ন্ত্রক’ নয়

ফাহরিয়া ফেরদৌস: ভালোবাসা আর অত্যাচার বা অনধিকার চর্চার মাঝে পার্থক্য বুঝতে শিখতে হবে। কাউকে ভালোবাসার মানে এই নয় যে, সে কার সাথে কথা বলবে, কতক্ষণ কথা বলবে, কখন কথা বলবে ঠিক করে দেয়া।

অনেক ছেলে- মেয়েই তার গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডকে ঠিক করে দিচ্ছে কখন ফেসবুক ব্যবহার করবে, কয়টা পর্যন্ত ব্যবহার করবে! যে ছেলেটি বা মেয়েটি একটি ভালো চাকরি করছে বা কোনো প্রফেশনে আছে, তাকে যদি কেউ এভাবে কন্ট্রোল করতে চায় তাহলে বুঝতে হবে তার মাথায় সমস্যা আছে, অথবা তার যোগ্যতা কম, তাই আসলে সে ভীত।

Fahriya 2
ফাহরিয়া ফেরদৌস

যদি সত্যিই মানুষটাকে হারানোর ভয় থাকে তাহলে তাকে কন্ট্রোল করা বাদ দিয়ে নিজেকে তৈরি করুন তার জন্য, যেন সে আপনাকে ছেড়ে না যায়, আপনাকে সম্মান করে, আপনার ফোন দেখলে যেন আতঙ্কিত না হয়, বিরক্ত না হয়!!

কাউকে কখনো কন্ট্রোল করা যায় না! নীলকররাও একদিন বিদ্রোহ করেছিল, আর আপনি যে মানুষটিকে কন্ট্রোল করতে চাইছেন সে তো অলরেডি আত্মনির্ভরশীল একজন মানুষ, তাই আপনি কেন এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বসে আছেন যে আপনি কন্ট্রোল করতে চাইলেই সে কন্ট্রোলড হবে!! একসময় সে ঠিকই আপনাকে ত্যাগ করবে, আর যদি ত্যাগ না করে তবে বুঝবেন কেবল তার শরীরটাই উপস্থিত আছে। এই যে কন্ট্রোল করার মনমানসিকতা, আপনি যদি এটিকে সায় দিন তবে দেখবেন এক সময় আপনার সবকিছুই কন্ট্রোল হচ্ছে সেই ব্যক্তির দ্বারা। আপনি হয়ে যাবেন একা।

অনেক ঘটনায় দেখেছি, এই ঘটনাগুলো যে মানুষটি করে সে নিজে অসৎ, তাই সে ভাবে তার মতো সকলেই অসৎ। আপনাকে একা করে রাখছে সবার থেকে, কিন্তু নিজে সবই ঠিক রাখছে। অনেক সময় এই ধরনের কন্ট্রোল করার মন-মানসিকতার মানুষরা একটি সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারে না, তারা যখন চলে যায়, আপনি তখন একদম একা হয়ে যাবেন। তারা সবসময় খুঁজে বেড়ায় “লয়াল” মানুষ।

তাদের এই “লয়াল” এর সংজ্ঞা এক এক সময় এক এক রকম; আবার কখনো কখনো এতো কঠিন যে এই সমস্ত শর্ত মানা কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব না।  

৩০ বা ৩২ বছর বয়সে একটা ছেলে বা মেয়ের যদি কারো সাথে সম্পর্ক হয়, আর তখন সে যদি ঠিক করে দেয়া শুরু করে যে কে তার বন্ধু হবে, আর কে তার বন্ধু তালিকা থেকে বাদ যাবে, তাহলে সেই সম্পর্ক তখনই শেষ করে দিন!

কারণ ধীরে ধীরে আপনি আপনার বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সবার কাছ থেকে সরিয়ে দিবে। একসময় আপনি ভুলে যাবেন যে আনন্দ কী জিনিস, শুধু শারীরিকভাবেই আপনি একজন মানুষ থাকবেন, সম্পর্ক হয়ে যাবে বোঝা!

জীবন কখনো ছকে বাঁধা হতে পারে না। যে বন্ধুটি বিপদের দিনে আপনার পাশে ছিল, কোনো কারণে আপনার নতুন গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড এসে তার সাথে মেলামেশায় বাদ সাধছে, তাহলে বলতে হবে, এরকম কাজ যে করছে তার মাথায় তো সমস্যা আছেই আর আপনি নিজেও ব্যাক্তিত্বহীন; কারণ ভালোবাসার মানে, না দেখলে খারাপ লাগা নয়, দেখলে শরীরে উত্তেজনা হওয়া নয়, ভালোবাসার মূল বিষয় হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মান আর বিশ্বাস।

যেখানে পারস্পরিক সম্মান আর বিশ্বাস এ দুটি নেই সেখানে ভালোবাসা না, হয়তো অন্য কিছু আছে, আর এই সম্পর্ক তেলবিহীন গাড়ির মতো ধুকে ধুকে চলতে চলতে একসময় বন্ধ হয়ে যায়, তখন একটা শ্রেণী সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে জীবিত অবস্থায় মৃত হয়ে যায়, আর কেউ কেউ জড়িয়ে পরে পরকিয়া নামক এডভেঞ্চারে।

যে মানুষটি জীবনের একটি লম্বা সময় একা একা পার করে এসেছে, অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে এসেছে, যে সময়টি কারো সাপোর্ট হলে ভালো হতো, সেই কঠিন সময় একা একা পার করার পর যখন সে একটি ভালো জায়গায় পৌঁছানোর পর কেন তাকে একটি মানুষ কন্ট্রোল করতে আসবে; কীসের ভিত্তিতে একটি মানুষ ঠিক করে দিবে যে কোনটি ঠিক, আর কোনটি বেঠিক!!

যখন একজন মানুষ তার বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের নির্দেশ মেনে অন্যের দ্বারা কন্ট্রোল হওয়া শুরু করবে, বুঝতে হবে সেদিন থেকে তার জীবন বেঠিক হওয়া শুরু হলো। বেরিয়ে আসুন এই ধরনের ভালোবাসা নামের অত্যাচার থেকে!! জীবন একটাই, বেছে নিন যোগ্য মানুষটিকে বন্ধু হিসেবে, আপনি কোন গৃহপালিত পশু নন যে আপনার একজন রাখাল দরকার, যে আপনি কখন খাবেন, কখন ঘুমাবেন তা ঠিক করে দিবে।

আপনার একজন সঙ্গী দরকার, বন্ধু দরকার, যে আপনার ভালো লাগার – খারাপ লাগার সাথী হবে, সে আপনাকে সবার চেয়ে বেশি বুঝবে।      

আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

শেয়ার করুন:

আপনার লেখাটি ভালো লাগলো।

আমাদের সাত বছর প্রেম ও বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় আমার স্ত্রী আমাকে ডিভোরস দিয়ে চলে যায়।

আমাদের এই ১২ বছর সময়ের ভিতর কখোনো আমি আমার প্রেমিকা/স্ত্রী এর কোনো বিষয়ে কখোনো কোনোদিন ইন্টারফেয়ার করি নাই, ঠিক তেমনি সেউ করে নাই। বিয়ের পরেউ সে বহুদিন/রাত বাড়ি ফিরেনাই, তেমোন আমিও। কেউ কখোনো কাউকে জিগাসাউ করিনাই কইগেছিলো, কিকরছিলো। সে চাকরি করে আর আমি ব্যবসা, তাই দুজনের কাজের প্রয়োজনে বাহিরে থাকাটাই সাভাবিক।

সে আমাকে ডিভোরস দেওয়ার আগে তাকে আমি সাইক্রিয়েট্রিকয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে ছিলাম, ডাক্তারের ক্ছে তার অভিযোগ আমি খুব সত ও ভালো, কিন্তু আমি সামী হিসাবে ভালনয় ব্ন্ধু হিসাবে ভালো। তাই আমার সাথে সে আর সযসার করবে না, কিন্তু সারাজীবন আমার ব্ন্ধু থাকবে। এখন বিগত চার বছর ধরে আমরা কোনো প্রার স্পর্শ ছাড়া ব্ন্ধু আছি। প্রাই আমরা বেরাতে যাই, ডিনারে যাই যার যার খরছ সে সে বহন করি।

এখোন আমান প্রশ্ন – আমার কি অন্যয় ছিলো যে আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলেগেলো?

কেউকি দয়া করে আমার প্রশ্নেরর যবাব দিবেন?

অসাধারণ একটা লেখা । লেখক কে ধন্যবাদ । আমরা আসলে ভেতরে ভেতরে অনেকখানি মরে যাই কিন্তু সেটা টের পাই না । কারণটা হল সব কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে পরা । আমরা শুধু টিকে থাকতে এবং টিকিয়ে রাখতে অভ্যস্ত ।