নাদিয়া ইসলাম: ছাত্রলীগ নেতারে বাঁচাইতে পুলিশ যে এখনও কন নাই উনারে মঙ্গল গ্রহের এলিয়েনরা চুমা দিয়া মাইরা ফেলছেন তাতেই আমাদের এখন একশো একচল্লিশ রাকাত নামাজ পইড়া ফেলা উচিত!
ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল খায়ের মোহাম্মদ শফিউদ্দিন এবং পত্রিকার ছবি মারফত জানা যায় একমাত্র গলা বাদে আফসানার গায়ে আর কোনো দাগ পাওয়া যায় নাই৷ তবে ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বইলা চিৎকার শুনতে পাইছিলেন এমন দাবিও আছে৷
ভিসেরা রিপোর্টে নতুন কী গল্প বানান বাংলাদেশ পুলিশ সেইটা দেখার আগেই আমরা অবশ্য অনলাইনে পাওয়া ছবি এনালাইসিস করতে পারি৷ ছবিতে দেখা যায় আফসানার গলার সামনের অংশে প্রায় এক ইঞ্চি চওড়া ও প্রায় সাড়ে চার ইঞ্চি লম্বা একটা কালচে খয়েরি রঙের দাগ৷ ঘাড়ের কাছে কোনো দাগ নাই৷
আলোচনার সুবিধার্থে ধইরা নিলাম আমাদের পুলিশ ফোর্স ও ফরেনসিক টিমের মতো সৎ ও সুযোগ্য টিম সারা দুনিয়াতে আর একটাও নাই৷ ধরলাম, আফসানা আত্মহত্যাই করছেন!
আত্মহত্যা করার প্রচুর পদ্ধতি দুনিয়াতে এভেইলেবল, আমি আর সেইসব বর্ণনা দিয়া কাউরে উস্কায়ে দিতে চাই না! যেহেতু গলা বাদে অন্য কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নাই, তাইলে ধইরা নেওয়া যায় ইদার উনি ঘুমের ওষুধ বা বিষ খাইছেন, অথবা গলায় ফাঁস নিছেন৷ ঘুমের ওষুধ বা বিষ খাইলে গলার দাগের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, সুতরাং উনি মরার জন্যে ফাঁস বাইছা নিছিলেন ধারণা করা যায়৷ রক্তনালীতে বাতাসের বুদ্বুদ ঢুকায়েও দাগহীন আত্মহত্যা সম্ভব, কিন্তু সেই পদ্ধতি অসম্ভব আনকমন এবং তাতেও গলার দাগের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না৷
গলায় ফাঁস দিয়া মরারে ফরেনসিক মেডিসিনের ভাষায় সাধারণত বলা হয়, ‘এসফিক্সিয়া’, যেইখানে লিগেচার অর্থাৎ যেই দড়ি বা কাপড় দিয়া ফাঁস নেওয়া হইছে, তার দাগ থুতনির নিচ দিয়া থাইরয়েড কার্টিলেজের উপর দিয়া দুই কানের নিচে গিয়া শেষ হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দড়ির গিঁট থাকে অক্সিপিটাল এলাকায়, অর্থাৎ মাথার পিছন দিকে৷
ফাঁস দিয়া মরার ক্ষেত্রে এই দাগটাই সবচেয়ে জরুরি, এবং এই দাগের পুরুত্ব ও মাংসে ঢুইকা যাওয়া দাগ থিকা ফোর্স পার স্কয়ার ইঞ্চি, মারা যাওয়ার সময়, কোন ডিগ্রি এঙ্গেলে শরীর অর্ধেক বা সম্পূর্ণভাবে ঝোলানো হইছিলো ইত্যাদি বোঝা যায়৷ যদি সম্পূর্ণভাবে শরীর ঝোলানো হয়, তাইলে লিগেচার মার্ক খুব হালকা ভাবে শুরু হইয়া চোয়ালের হাড়ের নিচে গিয়া তীব্র হয়৷ এইটা ঘটে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে, যখন শরীর নিচের দিকে নামতে শুরু করে, তখনি দড়ির ফাঁস গলায় প্রবলভাবে চাইপা বসে৷ ফাঁসের গিঁট এক বাহুবিহীন এক ধরনের ত্রিভুজের মতো দাগ তৈরী করে, এবং সাধারণত যেকোনো কানের নিচে সেই দাগ পাওয়া যায়৷ গিঁট যেভাবেই দেয়া হোক না কেন, গিঁটের দাগ সবসময় তেরছাভাবে ফাঁসের দাগের থিকা উপরে থাকবে কোনো রকম এক্সেপশন ছাড়াই৷ শরীর যদি অর্ধেকভাবে ঝোলানো হয়, তাইলে একমাত্র গিঁটের দাগ বাদ দিলে সম্পূর্ণ গলাতে মাটির সাথে সমান্তরাল এক ধরণের দাগ তৈরী হয়৷
ফাঁস দিয়া মরার ক্ষেত্রে অন্য যেই চিহ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ, তা হইলো: ভিগাল ইনহিবিশন বা সেরিব্রাল রক্তস্বল্পতার কারণে হলদেটে সাদা হইয়া যাওয়া মুখ, বড় হইয়া যাওয়া চোখের মনি, নীল এবং ফুইলা যাওয়া জিহবা, যা অধিকাংশ সময় মুখ থিকা বাইর হইয়া আসে৷ যেই অংশটুকঃ বাইরে থাকে, তা আবার কালচে খয়েরি রং ধারণ করে৷
আফসানার যেই ছবি আমি দেখছি অনলাইনে, তাতে এই ধরণের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় নাই, আমি এমনকি কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই বলতে পারি, কেউ উনারে খুন কইরা ঝুলায়েও দেন নাই৷ ঝুলাইলে গলায় যেই দাগ হয়, তার কোনো রকম দাগই উনার শরীরে আপাতদৃষ্টিতে নাই৷ আপনারা সেই রকম কোনো দাগ দেখলে আমারে জানাবেন প্লিজ, আমার চশমা পাল্টানোর সময় হইছে!
বাংলাদেশ পুলিশ ভাবেন উনারা যেই পরিমাণ গাঞ্জা খান, তার সাপ্লাই বাংলাদেশের বাকি জনগণেরও আছে! তাই কোনো ডাহা মিথ্যা কথা মিডিয়ারে সাপ্লাই দেওনের আগে উনারা একটু যদি পড়ালেখা কইরা নিয়ে বৈজ্ঞানিক যুক্তি সহকারে মিথ্যা কইতেন, তাইলে ভবিষ্যতে জনগণের উপকার হয়তো বইলা আমি মনে করি৷ তনুৱে নিয়াও উনারা আগড়ুম বাগড়ুম কইছিলেন, জনগণ তা দুই দিনেই ধইরা ফেইলা প্রশাসনরে একটু লজ্জায়ও ফেলছিলেন, আফসানার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা না ঘটাইয়া একটু এফিশিয়েন্টলি মিথ্যা বলা প্রাকটিস করলে জনগণের উপকার হয় হে সরকার!
হে মাননীয় সরকার, আপনারা খুন করবেন, করেন, ধর্ষণ করবেন- করেন, কিন্তু ‘বিচার করবো’ বইলা মিথ্যা সাপ্লাই দিয়া আর দয়া কইরা লোক হাসায়েন না! প্লিজ, খোদার কসম লাগে! আমার হাসি আসলেই পেশাব পায়, সেইটা খুবই বিরক্তিকর অবস্থা! আমারে আর হাসায়েন না! প্লিজ!