সালমানকে গণধর্ষণের শিকার সুনীতার চিঠি

উইমেন চ্যাপ্টার: বলিউডের অন্যতম আলোচিত অভিনেতা সালমান খান  আবারও আলোচনার তুঙ্গে। তাঁর সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে নিন্দার ঝড় বয়েছে সমস্ত মহলেই। সেই ঝড়ে ইন্ধন জুগিয়েছে গণধর্ষণের শিকার একজনের একটি চিঠি।

sunitha-krishnan-Women-words‘‘সুলতান ছবির শ্যুটিংয়ে এতই খাটতে হতো, যে দিনের শেষে নিজেকে ‘ধর্ষিতা’ মনে হতো’’ —এমন মন্তব্য করে গত কালই বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন সালমন খান। সেই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আজ তাঁকে খোলা চিঠি লিখলেন সুনীতা। সুনীতা কৃষ্ণন, পদ্মশ্রী সম্মানপ্রাপ্ত একজন সমাজকর্মী।

৪৪ বছর বয়সী এই সুনীতার আরেকটি পরিচয় হলো, গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তিনি নিজে। তবে লড়াকু সুনীতা জীবনের সেই পর্ব কাটিয়ে ওঠেন স্রেফ মনের জোরে। সেই জায়গা থেকেই সালমানকে লেখা খোলাচিঠিতে রীতিমতো আক্রমণাত্মক তিনি।

কী লিখেছেন সুনীতা?

তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি ওর (সালমানের) নামও উচ্চারণ করতে চাই না, কারণ তাতে ওকে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি সম্মান দেওয়া হয়। আসল ব্যাপারটা হলো, ওর নিজেকে ধর্ষিত মনে হয়েছে। কথাটা এত সহজে বলে দিয়ে সে বোঝাতে চেয়েছে, এই ‘ধর্ষণ’ বিষয়টি আসলে খুবই সহজ আর গুরুত্বহীন।’’

চিঠিতে সুনীতার দাবি, সুন্দর চেহারা আর কিছু প্রতিভার জোরে আজ হয়তো ‘স্টার’ হয়েছে সালমান। তবে এই ভূমিকা পালন করতে গেলে প্রকাশ্যে কী বলা উচিত আর কী বলা উচিত নয়, তার দায়িত্ববোধও অনেকটা বেড়ে যায়।

সুনীতার আরও বক্তব্য, ‘‘ওই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে একজন ধর্ষিতার যে আতঙ্ক, ক্ষত, অপমান— তার সঙ্গে ওই সিনেমায় নিজের ভূমিকার তুলনা করেছেন তিনি।’’ তিনি জানিয়েছেন, শুধু পুরুষ নয়, অনেক নারীও ধর্ষণ নিয়ে হালকা চালে মন্তব্য করে থাকেন। যে কোনও রকম ঘটনা বা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তুলনা করে ফেলেন ধর্ষণের সঙ্গে। একথা বলার সময় তাঁরা ভাবেন না, এর অর্থ কতোটা গভীর।

সুনীতা বলেছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে সহজ মন্তব্যের মাধ্যমেই একটা ধর্ষণ সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে আমাদের চারপাশে। আমি এটুকুই বলতে পারি, নিম্ন রুচির মানুষেরাই এসব কথা বলতে পারে। আমাদের সকলকে অপমান করেছে ও। তাই ওই লোকটা এই সমাজের লজ্জার কারণ।’’

salman-khan-20aএদিকে সালমান খানের মন্তব্য নিয়ে গতকালই সরব হয়েছিল বিভিন্ন সংগঠন। তবে সালমানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি বলিউডের কেউই। ছেলের হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন দবঙ্গ-অভিনেতার বাবা সেলিম খান।

পরিচালক সুভাষ ঘাই ৫০ বছরের তারকার প্রতি সহমর্মিতায় বলেছিলেন, ‘‘ও একটা বাচ্চা। ভুলভাল অনুবাদের জন্যই যত বিতর্ক। একজন মহিলা ধর্ষিত হলে তাঁর যন্ত্রণার সীমা থাকে না। ও সেটাই বোঝাতে চেয়েছে।’’

সালমানের হয়ে সরব হয়েছিলেন অভিনেত্রী নাগমাও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছোটবেলা থেকে সালমানকে চিনি। মহিলাদের অপমান করতে ও ওই মন্তব্য করেনি।

ক্ষমা চাইবে কি না, এটা ওর সিদ্ধান্ত। তবে সেলিব্রিটি হিসেবে কথা বলার সময় ওর আর একটু সাবধান হওয়া উচিত।’’

আজ মুখ খুললেন কঙ্গনা রানাউত। সালমান এই অসংবেদনশীল মন্তব্য করে একেবারেই ঠিক করেনি, এ কথা জানিয়েও কঙ্গনা বলেন, ‘‘কিন্তু এভাবে একজন মানুষকে নিশানা করে আক্রমণ করাটা ঠিক নয়। অপরকে ছোট করে আমরা আনন্দ পাই। এটার দায় একা সলমনের নয়, আমাদের সমাজের।’’

কঙ্গনার দাবি, প্রত্যেক মানুষই এ ধরনের মন্তব্যের দায় নিতে বাধ্য। কারণ যে কোনও কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে ধর্ষণের তুলনা টানাটা আসলে একটি সামাজিক সমস্যা।

তবে আশ্বর্যজনক ভাবে সালমানের পাশে দাঁড়ালেন অভিনেত্রী পূজা বেদী। তাঁর মতে সালমানের এই মন্তব্যে ভুল কিছুই নেই। বরং অনেকেই অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্য জানাতে গিয়ে পূজা প্রথম টুইটে লেখেন, ‘এই বিতর্ক কি সত্যিই যুক্তিযুক্ত? যদি আমি বলি হাতির মতো মোটা তাহলেও কি আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হবে? ভারত কি একটু অধিক রক্ষণশীল হয়ে পড়ছে না?’

এরপরের টুইটে সরাসরি সলমনকে সমর্থন করে পূজা লেখেন, ‘সালমান ধর্ষিতা কথাটা ব্যবহার করে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যয়ের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন। এর মধ্যে ভুল কী রয়েছে?’

পূজার টুইটের পরই বিতর্ক ও নিন্দার ঝড় ওঠে টুইটারে। কিন্তু তাতেও দমে যাননি পূজা। বরং আরও আগ্রাসী হয়ে তিনি লিখতে থাকেন, ‘মানছি এটা সেরা উদাহরণ নয়। কিন্তু ধর্ষণ যদি সত্যিই সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে তাহলে সালমান ভুল কী বলেছেন? এমনকী এরপরের টুইটে এই বিতর্ক ও প্রতিবাদকে পূজা রাজনৈতিক লাভ ও মিডিয়ার টিআরপি বাড়ানোর উপায় বলতেও থামেননি। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

শেয়ার করুন: