‘ফেস টু ফেস’ এখন অনলাইনে

সুমন্দভাষিণী: শাহবাগের আইল্যান্ডে বসে চা খেতে খেতে ছোট ভাই শাহাদাত রাসএল গল্পটি শুনিয়েছিল। তখনই মনে হয়েছিল, দারুণ কিছু হবে বিষয়টা। ও যেভাবে গল্পের আর ডায়ালগের বর্ণনা দিচ্ছিল, তাতে সাথে সাথেই সায় দিয়েছিলাম, এই ছবির কিছুটা ফিনান্স আমি করবো। গরীরে ঘোড়ারোগ আরকী! তা আর করা হয়নি। কিন্তু রাসএল থেমে থাকেনি। কয়েকদিন পরই শুনলাম ছবির শুটিং হয়ে গেছে। ডায়ালগের সারমর্ম জানা ছিল। তাই অপেক্ষায় ছিলাম, ছবিটি দেখার।

Face to Face 2‘ফেস টু ফেস’ যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘মুখোমুখি’। কিন্তু কীসের মুখোমুখি? সত্যের? মিথ্যার? রাষ্ট্রের? বিচারহীনতার? সংস্কৃতিহীনতার? একজন কবি ও একজন যৌনকর্মীর দেখা হলো রাতের আঁধারে, এখানে কে কার মুখোমুখি হলো? তাদের দুজনের কথোপকথন বেশ মনোগ্রাহী, প্রতিবাদের ঝাঁঝ আছে, কিছু বলিষ্ঠ উচ্চারণও আছে। তারপরও বেশ হালকা মনে হলো চিত্রায়ণটাকে। এটা যদি রাসএল এর প্রথম ছবি হয়ে থাকে, তবে বলবো, খুবই ভালো হয়েছে, ওর ভবিষ্যত আছে। আর যদি নতুন না হয়, তবে বলবো, এখানে আরও অনেক কিছু করার ছিল। আমি যদি সাহসী উচ্চারণই করবো, তবে এখানে এরকম একটা শেষ না এনে একে আরও কিছুটা দূর টেনে নেয়া যেতো। শেষটা ওরকম হতো না।

আমি সিনেমা ক্রিটিক নই, বোদ্ধাও নই। তাই সমালোচনায় যাবো না। তবে স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির যেটুকু বুঝি, খুব কম সময়ের মধ্যে একটা মেসেজ দিতে হয় দর্শকদের। সেটা হয়তো কিছুটা হলেও সফল হয়েছেন রাসএল। সমাজের অধ:পতন, নড়বড়ে রাষ্ট্রীয় কাঠামো, সামাজিক অব্যবস্থাপনা, সামান্য হলেও উঠে এসেছে আলাপচারিতায়। যৌনকর্মীর চরিত্রে মেয়েটি উৎরে গেছে, তবে কবি অনেকটাই নিষ্প্রভ ছিলেন। আজকের দিনে এমন শুদ্ধ ভাষায় খুব কম মানুষই কথা বলেন। তাছাড়া তার প্রেমিকার গর্ভের সন্তানটিকে তিনি মেনে নেননি, সেটার কারণ আরেকটু বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। পরবর্তীতে তার অনুশোচনা এবং সেই পাপবোধের কাহিনী একজন যৌনকর্মীকে শোনানোর চেষ্টা কিছুটা বিরক্তি আনে। কবির সংলাপ বলার ঢংটা অতোটা শক্তিশালী ছিল না।

তবে ভালো লেগেছে এই স্বল্প পরিসরেই দেশের সমাজ ব্যবস্থা, পুরুষের চরিত্র, ধর্ম, সমাজের স্খলনগুলো ভালোভাবে উঠে এসেছে।

facetoface 3যেহেতু এটাকে বলা যেতে পারে বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ প্রযোজনা, কাজেই সাবটাইটেল দরকার ছিল এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য বলেই তার প্রয়োজন। সাউন্ডের জায়গাটাতে আরো কাজ প্রয়োজন ছিল। যাই হোক, নির্মাতার নির্মাণশৈলী যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার। সেইসাথে তার ব্যক্তিগত জীবনবোধের জায়গাটাও উঠে এসেছে চলচ্চিত্রটির ডায়ালগের মধ্য দিয়ে। তা থেকে নির্মাতাকে পাশের মানুষটিই মনে হয়, দূরের কেউ নন। আমাদের সুখে-দু:খে, প্রতিবাদে, নারীকে সম্মানের প্রশ্নে তিনি আমাদেরই ভাই এবং বন্ধু। হয়তো এজন্যই একটু বাড়িয়ে বলা তার সম্পর্কে। ভবিষ্যতে আরও অনেক এমন সাহসী কিছু দেখতে চাই।

আরেকটা কথা, এমন ছবি এই ‘অসময় বা দু:সময়ে’ যত বেশি হবে, ততোই মঙ্গল আমাদের জন্য।

https://www.youtube.com/watch?v=UuFoZo4DiwU&feature=youtu.be

 

শেয়ার করুন: