উইমেন চ্যাপ্টার: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা (জিএসপি) সাময়িকভাবে বাতিল করাতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশ ১৯৭৬ সাল থেকে এই সুবিধা ভোগ করে আসছিলো। যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধার অন্তর্ভুক্ত শিল্পপণ্যের মধ্যে সিরামিক, প্লাস্টিক পণ্য, উলের তৈরি পাপোষ, তাঁবু, চশমা অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক ঘোষণায় বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার পাশাপাশি এর কারণ হিসেবে বলেন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কিংবা নিচ্ছে না।
এদিকে ওবামার এমন ঘোষণায় অনেকেই বলছেন, পোশাক খাতের কিছু দুর্ঘটনার জন্য অন্য খাতের জিএসপি সুবিধা বাতিল করাটা কিছুটা উদ্দেশ্যমূলক। জিএসপি বাতিলের কারণে বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্র অনেকটা ইমেজ সংকটে পড়বে বলে আশংকা করছেন অনেকে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শ্রমিকরা, এমন আশংকাও করছেন অনেক শিল্প মালিক।
তবে সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক খাতে ক্ষতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। তাদের মতে, বাংলাদেশ কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পোশাক তৈরি করে বলেই বিশ্ববাজারে সুনাম ধরে রেখেছে। সেকারণেই অন্য শিল্পের জিএসপি বাতিল করলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কোন প্রভাব পড়বে না বলেও ধারণা করছেন অনেকেই।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ইমেজ সংকটের কারণে তৈরি পোশাক খাতে দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ প্রভাবের আশংকা করে বিজিএমইএ সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, জিএসপি বাতিলের বিরূপ সিদ্ধান্তের ফলে তার কোনো সুদূরপ্রসারি নেতিবাচক প্রভাব পড়লে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শ্রমিক ভাই-বোনেরা। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংক, পরিবহন, নৌ ইত্যাদি খাতও।
আতিকুল ইসলামের আশংকা সত্য হলে ওবামা জিএসপি সুবিধা বাতিলের যে কারণ উল্লেখ করেছেন সেটিই আরো প্রকট হবে। সেক্ষেত্রে ওবামার সিদ্ধান্ত স্ব-বিরোধী হিসেবেই গণ্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এই বাণিজ্যিক সুবিধাটি বাংলাদেশ কখনো ভোগ করতে পারেনি বলেও উল্লেখ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই প্রোগ্রামে অন্তর্ভূক্ত থাকলেও আমরা কখনই এর বাণিজ্যিক সুবিধা ভোগ করতে পারিনি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রফতানির প্রায় ৯৯ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক দিয়েই প্রবেশ করে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা শুল্ক বাবদ ৭৪৬ মিলিয়ন ডলার দিয়েছি।
বিগত আড়াই বছরে তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছার প্রশংসা করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২০১০ সালে বর্তমান সরকার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি করে। আর মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে আমাদের অনুরোধে সরকার পোশাক খাতের জন্য নতুন বেতন কাঠামো গঠন করেছে।
বাংলাদেশের শিল্প অবকাঠামো যখন স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের দিকে এগুচ্ছিলো এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন একতরফা সিদ্ধান্তে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তটি সাময়িক বলেই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ওবামা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ আগামী দুই মাস কী পদক্ষেপ নেয় তারা সেটি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তি সিদ্ধান্ত নিবেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেন জিএসপি স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে সে ব্যাপারে কাজ করার কথা বলেন বানিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে আমাদের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে তবে আমরা এটি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করবো।