সেলিনা শিল্পী: বনশ্রীর দুটি অবুঝ শিশুর হত্যাকারী ওদের মা। টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজটা দেখার পর থেকেই বুকটা ভেঙ্গে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। আহা কী অভাগা সন্তানগুলো!
আমি সমস্ত ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছি আমার সাত বছরের অবুঝ ছেলেটার জন্য। আমার ছেলেটা আমাকে মা ডাকতে পারে না, ওর অভাব-অভিযোগ প্রকাশ করতে পারে না, সবকিছু আমাকেই বুঝে বুঝে করতে হয়। আমি ওর পাশে না থাকলেও কিছু আসে যায় না, কিন্তু আমার শান্তি আমি ওর পাশে আছি, আমি ওর গন্ধ পাচ্ছি, আমি ওকে ছুঁতে পাচ্ছি। গত সাতটা বছর সারাটা রাত একটানাভাবে আমরা ঘুমাই না। কারণ আমার ছেলে রাতে খুব কম ঘুমায়।
কতরাত জেগে থাকি। সারা পৃথিবী যখন ঘুমায়, তখন আমি আর আমার ছেলে জেগে থাকি। কষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু আমার চেয়ে আমার ছেলের কষ্ট তো বেশি। যে বুঝলোই না এই পৃথিবী সৌন্দর্য। তার মা-বাবার মুখখানা কেমন সে দেখলোই না। আমি ওর হাত দিয়ে আমার মুখখানা যখন স্পর্শ করাই, আমার ছেলেটা কী যে ভুবন-ভুলানো হাসি দেয় সেটুকু দেখে আমার সমস্ত কষ্ট এক নিমেষেই উবে যায়। তার জন্য মাত্র সাত বছর কেন সারাজীবন আমি না ঘুমিয়ে কাটাতে প্রস্তুত।
কাজের লোক যখন থাকে তখন জীবন কিছুটা সহজ হয়, কারণ কিছুটা ডিপেন্ড ওদের উপর করলেও ভরসা পাই না। মনে হয় এই বুঝি ওরা আমার ছেলেটাকে কষ্ট দিলো। বুক সবসময় ধুকপুক করে। এখন কোন কাজের লোক নেই, তাই নিজেদের কষ্ট হলেও নিরাপদ লাগে। আমার ছেলেটাকে ২৪ ঘন্টা সময় দেই। ওর সাথে খেলি। ওকে গান শুনাই, ছড়া শুনাই। আমার ছেলেটা অনেক গান কবিতা পছন্দ করে। এখনতো আর ভাবতেই পারি না ক্যারিয়ারের কথা।
অথচ চারটা ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে ১০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ছেড়ে দিব্যি হাউজওয়াইফ হয়ে গেলাম সাত বছরে। মাঝে মাঝ কষ্ট হয় আমার ক্যারিয়ারের জন্য, কিন্ত আমি যখন আমার অবুঝ শিশুটির দিকে তাকাই সব ভুলে যাই। কিসের ক্যারিয়ার, কিসের কী? সবসময় প্রার্থনা ওকে নিয়ে। ছেলেটা সুস্থ থাকলেই আমি আর ওর বাবা সুখে থাকি। ও একটু ঘুমালে আমাদের শান্তি ও একটু রুটিনমাফিক খাওয়া-দাওয়া করলেই আমরা খুশি থাকি। শুধু একটু সুস্থতার জন্য দিনরাত ওর পাশে থাকি। এরজন্য ওর বাবার অবদানও কম নয়। সে আমাকে সাপোর্ট করে বলেই কষ্টগুলো খুব বেশি আক্রান্ত করতে পারে না। আগলে রাখে বলেই সব কিছু ছেড়েছুড়ে দিব্যি সংসারি হয়ে জীবনটাকে পার করে দিচ্ছি।
অথচ ভেবে অবাক হচ্ছি আমার মতোই একজন মা তার সুস্থ দুটি সন্তানকে গলাটিপে মেরে ফেলল???? উফ্ফ্…… এত পাষাণ!!!!!!! যতবার দেখছি বুকটা ফেটে যাচ্ছে। সেও একজন মা???????? সেও একজন নারী???????
খবরে জানা গেছে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি অনুমানিক বিকাল ৫টার দিকে রামপুরার বনশ্রীর বাসায় দুটি শিশুকে হত্যা করা হয়।

ওইদিন রাতে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী নুসরাত জাহান অরণী (১৪) ও তার ছোটভাই আলভী আমানকে (৬) অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
চাইনিজ রেস্তোরাঁ থেকে আনা খাবার খেয়ে শিশু দুটির মৃত্যুর সন্দেহের কথা পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হলেও পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তে মেলে হত্যাকাণ্ডের আলামত।
এরপর বুধবার জামালপুর থেকে শিশু দুটির বাবা, মা ও খালাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসে র্যাব। তখন থেকে তারা র্যাব হেফজতেই আছেন।
ekhane jokhon lekhi, tarpor lekhata kothay jay ami jante pari na.pls amake janan.
begum jahan ara
আপনি এখন দেখতে পাচ্ছেন আপা আপনার লেখা?