আরিফ নূর: জার্মানিতে বসে ঢাকায় চুমু খাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা। শুনেই কেমন খটকা লাগলো। ইভেন্টে ঢুকে দেখলাম অনন্য আজাদ ও শাম্মী হক এই দুজন মিলে এটি করেছে। ইভেন্টটা দেখে ও তাতে বিভিন্ন লোকের কমেন্ট পড়ে কয়েকটা প্রশ্ন না করে থাকতে পারলাম না।
বিশেষ করে শাম্মীকে নিয়ে নানান জনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেখে হা হয়ে গেলাম। ইভেন্ট খুললো অনন্য আর শাম্মী, কিন্তু যত গালাগালি, হুমকি-ধমকি, ধর্ষণ, জুতাপেটা সবই যাচ্ছে শাম্মীর উপর দিয়ে। কেন ভাই শুধু শাম্মীর দোষ দেখছো? এখানে অনন্য আজাদের কোন দোষ নাই? পুরুষ বলে তার সব দোষ মাফ! দোষ যদি হয়ে থাকে তবে দুজনেই সমান দোষী। এদেশে নারীর প্রতি তথাকথিত পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কি তা ঐ ইভেন্টের কমেন্ট গুলো পড়লেই বোঝা যায়।
এবার আসল কথায় আসি। ওরা দুজনে একটা ইভেন্ট খুলেছে। প্রতিদিন কত মানুষ কত ইভেন্টইতো খোলে। যেটা আপনার পছন্দ হবে তাতে আপনি গোইং দিবেন, লাইক দিবেন। যা পছন্দ হবে না তা এড়িয়ে যান। কিন্তু না, আপনার চিন্তা কিংবা বিশ্বাসের বাইরে কেউ কিছু বললেই যেসব কথা কিংবা আচরণ করেন তা আপনার বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। আপনার ভিন্ন মত বা যুক্তি থাকলে তা উপস্থাপন করুন, যার যুক্তি সঠিক লোকে তা গ্রহণ করবে আর যা যুক্তিহীন তা বর্জন করবে। এখানে হুমকি ধমকির কি আছে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না।
শাম্মী ও অনন্য……… এখন আপনাদের কাছে প্রশ্ন। বাংলাদেশে কি আর কোন সমস্যা আপনারা খুঁজে পেলেন না! প্রকাশ্যে চুমু খেতে না পারাটাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা? যে দেশের মানুষ তার মৌলিক অধিকার গুলোই এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। যেখানে রাস্তা-ঘাটে হাজার হাজার শিশু না খেতে পেয়ে মারা যায়। যেখানে মেয়দের শিক্ষার হার ৫০% এর কম। যে দেশের ধর্মান্ধ মানুষ গুলো এখনও সাঈদীর মত রাজাকারকে চাঁদে দেখতে পায়। যেখানে বই লেখা ও প্রকাশের দায়ে লেখক প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
তেমন একটি দেশে আপনারা এমন একটি ইভেন্টের ডাক দিয়েছেন এটা সত্যি হাস্যকর। তাও যদি নিজেরা এ ইভেন্টে উপস্থিত থাকতে পারতেন তবে ভাবতাম, আপনারা অনেক সাহসী, অনেক বড় দেশ প্রেমিক। দুই একদিন রাস্তায় কে আপনাদের পিছনে হেঁটেছে আর অমনি লেজ গুটিয়ে জার্মানি চলে গেলেন।
ওখানে বসে হয়তো বাঘের মত গর্জন করছেন তা আমাদের কানে আসতে আসতে শেয়ালের হাঁক হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন এমন অসখ্য ইভেন্ট খুলে বসে থাকা যায় কিন্তু একটা ধর্মান্ধের চাপাতির সামনে দাঁড়িয়ে ওর ছানি পড়া চোখে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকতে বুকে সাহস লাগে। বলতে সাহস লাগে যে, ‘এ দেশ তোর নয় এদেশ আমাদের’। চিৎকার করে এ কথা বলতে বুকে দম লাগে যা আপনাদের নেই। পালিয়ে গিয়ে ভাল থাকেন এই কামনাই করি। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যদের হুমকির মুখে ঠেলে দিবেন না দয়া করে।
তথাকথিত ভালবাসা দিবস কি উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচয় করানো হয়েছে এবং কারা করেছে তা নিশ্চই আপনারা জানেন। তারপরেও সেই দিবস কে কেন্দ্র করে আপনাদের ইভেন্ট কাদের ঘরে ফসল তুলে দেবে তা একটু ভাবলেই মানুষ বুঝতে পারে।
মুক্তচিন্তা মানে নিজের আচার নিজের ঐতিহ্য অস্বীকার করা নয়। হাজার বছর ধরে বাঙ্গালীর যে অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য রয়েছে তাতে আমি কখনই আমার বাবা মায়ের সামনে আমার প্রেমিকার ঠোঁটে চুমু খেতে পারবো না। আমি এও জানি তা আপনাদের পক্ষেও স্বম্ভব নয়। যে কাজে নিজের ভেতর থেকে সমর্থন নেই তা অন্যকে করতে বলা মানে প্রতারণা করা। কে কখন কাকে কিভাবে ভালবাসা প্রকাশ করবে তা একান্ত্য তাদের নিজের ভাবনা হয়েই থাক না। আপনি আমি কে? যে, কে কখন কাকে কিভাবে চুমু খাবে তা বলে দেয়ার!
এ দেশ যতটুকু পুরুষের ঠিক ততটুকুই নারীর। সবাই এক সাথে হাতে হাত রেখে পথ চলতে চাই। আর কোনো সহযোদ্ধাকে যেন এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে না হয় আসুন তার জন্য লড়াই করি। সে লড়াইয়ে আমরাই জয়ী হব।
জয় বাংলা……………।
একমত। লেখাটা ভালো লাগছে।