উইমেন চ্যাপ্টার: ফেসবুকে প্রতিদিন অনেক অনুরোধ চোখে পড়ে, কোনোটা শেয়ার করি, কোনোটা এড়িয়ে যাই। রক্তের প্রয়োজনে অনুরোধ তো হরহামেশাই শেয়ার করি। এবার একটু অন্যরকম আবদারই বলা চলে। আমাদের এক বন্ধুর ছেলে আবদার ধরেছে সৈনিক ক্লাবের মাঠে তারা বন্ধুরা মিলে ক্রিকেট খেলবে।
জানি, এই আবদার করাই রীতিমতো ‘অন্যায়’ এর পর্যায়ে পড়ে। সৈনিক মানে আর্মি, আর তারা তো আমাদের হয়েও দূর নক্ষত্রের বাসিন্দা। ক্যান্টনমেন্টে ঢুকতে গিয়েই কে ক্যারিকেচার করতে হয় আমাদের সাধারণের, সেখানে আমাদের সন্তানদের এমন একটি ‘আবদার’ কেমনে রক্ষা করি? কিন্তু যদি কোনো সহৃদয় আর্মি মামার দৃষ্টিআকৃষ্ট হয় এই লেখা, তবে অনুরোধ করবো, এই মা’কে উদ্ধারে এগিয়ে আসতে। আছেন কি কেউ? সেইসাথে এটাও জানি যে, এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও আছে অনেক। তারপরও মায়ের মন বলে কথা। অনুরোধ তো করতে পারি!
বন্ধু তামান্না সেতু তার ছেলের সাথে কথোপকথনটা তুলে ধরেছেন:
‘মা, তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে কি কোন আর্মি অফিসার আছে” ?
আরাফ এসেছে ক্রিকেট প্রাকটিস শেষ করে। ঘরে ঢুকেই এই প্রশ্ন। আমি অবাক না হয়ে হাসলাম।
তার ক্যামনে ক্যামনে ধারণা হয়েছে তার মা ফেসবুকে একজন সেলিব্রেটি। মার অনেক ফ্যান, ফলোয়ার। মা ফেসবুকে বসে বসে অনেক কাজ করে ফেলে এদের সাহায্যে।
আরাফের ক্রিকেট স্কোর জানতে ইচ্ছে হলে, কোন ঠিকানা লাগলে, কোথায় কোন খাবার পাওয়া যায় জানতে হলে সে আমার কাছে আসে। এসেই বলে -“মা একটা স্ট্যাটাস লিখো তো। লিখো যে, ভালো ফাইটিং মুভি কি আছে? আমি মুভি দেখবো, নাম মনে পড়ছে না। আমি লিখি, সে আমার ল্যাপটপ নিয়ে বসে বসে কমেন্ট দেখে দেখে মুভি দেখে।
এখন তার সেই রকম সাহায্য লাগবে, তাই এই আবদার।
– “মা, তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে কি কোন আর্মি অফিসার আছে” ?
– কি জানি বাবা। জানি না তো।
– আমার লাগবে তো মা। কোন আর্মি মামা নাই?
– কি দরকার বল। আর্মি মামা নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে।
– একজন আর্মি মামা লাগবে, তার বাসার ঠিকানা লাগবে?
– কেন মা?
– তার বাসায় আমার যেতে হবে। তার কাছ থেকে একটা অনুমতি পত্র লাগবে। সৈনিক ক্লাবের মাঠে আমরা ক্রিকেট খেলবো মা। আমাদের অনুমতি লাগবে।
আমি খানিক্ষন থম ধরে বসে থেকে বললাম- তোর মনে হচ্ছে এইটা আমি লিখলেই ব্যাবস্থা হয়ে যাবে?
– তুমি না ফেসবুক সেলিব্রেটি। কেন পারবা না ? না পারলে তোমার সাথে কথা নাই।
এই হলো অবস্থা। তার বিয়ের বয়স হলেও সম্ভবত স্ট্যাটাস লিখেই আমাকে পাত্রির সন্ধান করতে হবে।
মনে মনে আমি আজ ভীষণ ভীত। কেন জানি মনে হচ্ছে সৈনিক ক্লাবের মাঠের অনুমতি পাওয়া যাবে না এবং পুত্র কড়া চোখে আমাকে বলবে – “এই হইলো তোমার অবস্থা” !! মান ইজ্জত নিয়ে চিন্তার ভেতর আছি। পরিচিত আর্মি অফিসারদের ফোন দিচ্ছি, কেউ ফোন ধরছে না কেন কে জানে?
আর্মি মামারা কেউ কি আছেন? পোলার কাছে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাচ্ছে।
পারলে এই অসহায় মাকে উদ্ধার করবেন।