অবশেষে ক্ষমা চাইলো ছেলেটি

Shahriar Tamimসুপ্রীতি ধর: একটি ছবি নিয়ে গত দুদিন ধরে বেশ তোলপাড় চলছে অনলাইনে। প্রথমে শুধুমাত্র ফেসবুকে শেয়ার, তারপর এ নিয়ে উইমেন চ্যাপ্টার এ একটি প্রতিক্রিয়া লেখার পর নিমিষেই তা ভাইরাল হয়ে যায় অনলাইনে। দেশে-বিদেশে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়তে থাকেন সেই লেখা। কেউ এর পক্ষে, কেউ বা বিপক্ষে মন্তব্য করেন। যারা পক্ষে লেখেন, তারা যার কভার পিক নিয়ে এতো তোলপাড় সেই কিশোর ছেলেটিকে গালিগালাজ করেন, রাষ্ট্রীয় সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আর যারা বিপক্ষে যান, তারা বলেন, এতো সবসময়ই ছিল। ওরা প্রকাশ করেছে, তাতে অসুবিধাটা কোথায়! আরেকদল মৌলবাদী। তারা বলেন, পথে-ঘাটে এমন নগ্ন-আবক্ষ মূর্তি থাকলে ছেলেপিলেরা তো খারাপ হবেই। 

এর মাঝে ছেলেটি যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত, তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তারা বলেন, তারা ছেলেটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আর আমরা উইমেন চ্যাপ্টারের পক্ষ থেকে বলি, ব্যবস্থা না, কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা হোক। যাই হোক, শেষতক ছেলেটির একটি ক্ষমা চেয়ে মন্তব্য চোখে পড়লো। সে তার কৃতকর্ম বুঝতে পেরে আমাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। বানানগুলো ঠিক করে তার কিয়দংশ তুলে দিলাম এখানে:

“প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি পুরো জাতির কাছে এবং ফেসবুক হোল্ডারদের কাছে।
আরো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার শ্রদ্ধেয় নারী জাতির কাছে।
আমি জানি আমিসহ বন্ধুরা মিলেযে কাজটি করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য।
তারপরেও আমাকে আপনাদের একজন সন্তান, আপনাদের একজন ভাই বা বন্ধু হিসেবে নিয়ে আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।
আমি জানি আমরা যে কাজটি করেছি এই জঘন্য কাজের জন্য আমাদেরকে হয়তো সন্তান, ভাই বা বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে আপনাদের অনেক কষ্ট হবে।
তারপরেও অামরা অামাদের কৃতকর্মের ভুল অনুধাবন করতে পারায় অামরা লজ্জিত। সেই সাথে লজ্জিত অামাদের পিতা মাতা এবং আত্মীয়- স্বজন।
অামরা বুঝতে পেরেছি, মানবতার অাদালতে অাপনাদের দেওয়া সাজা। এই সাজা যে এতো কঠিন হবে তা যদি অাগে বিন্দুমাত্র  উপলব্ধি করতে পারতাম, তাহলে এধরনের একটি জঘন্য কাজে জড়িত হতাম না।

অামরা কাজটি করার পর অামাদের ভুল বুঝতে পেরেছি। অামরাও এখন অাপনাদের সাথে একই সুরে প্রতিবাদের সাথে একমত পোষণ করছি এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কাজ অামাদের বা অন্য কোন পুরুষ দ্বারা সংঘটিত না হয় তার জন্য সতর্ক থাকবো বলে কথা দিচ্ছি। অাবারও অাপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অাশা করি অাপনারা অামাদের এই কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা করবেন। অাপনাদেরকে বিনয়ের সাথে শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি”। 

ছেলেটি আরও লিখেছে, “মেম, আমাদের বাবা-মা আমাদের এই ঘটনাটা নিয়ে আমাদের অনেক অপমান করেছেন। এমন কী তারা আমাদেরকে ছেলে হিসেবে বলতেও লজ্জা পাচ্ছেন। মেম, আজকে বাইরে বের হয়ে আমি মানুষকে মুখ দেখাতে পারিনি। সবাই নানান কথা বলছেন। সবার কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে গেছি। মেম, বিশ্বাস করেন, আমরা যদি জানতাম এই ছবিটা এমন প্রবলেম করবে আমরা কখনোই তা তুলতাম না। মেম, আপনি আমার মায়ের মতো। আজকে আমার মায়ের মনে যে কষ্টটা বইছে আমি আগে জানলে কখনোই এই কাজটা করতাম না। মেম, আমাদের ছবিটা দয়া করে রিমুভ করে আমাদেরকে ভুল শুধরানোর সুযোগ দিন। “।

ওর এই লেখার প্রত্যুত্তরে আমি বলেছি, “ঠিক আছে। কাল এটা সরিয়ে দেবো। তবে আমরা তোমাদের সাথে বসতে চাই। একটু কথা বলতে চাই। তোমরা কেন এমন কাজ করলে? এটা তো আশা করি না তোমাদের কাছ থেকে।
তোমরা চাইলে তোমাদের বাবা-মায়ের সাথেও কথা বলতে পারি। বলবো? ভুলটা বোঝাতে পারি”।
শেয়ার করুন:

যে সমাজে শিল্প সংস্কৃতি নেই, সে সমাজে এই ধরণের মানুষ তৈরি হবেই। একজন হয়তো নজরে এসেছে বলে সে তার ভুল শুধরাতে পারল, অন্যরা। যারা প্রতিনিয়ত নারীর প্রতি অবমাননামূলক বক্তব্য দ্বারা উস্কানীপ্রাপ্ত হয়, তারা কি করবে? যা হোক, আপনার সচেতনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ছেলেটিকেও নিজের ভুল বুঝতে পারার জন্য সাধুবাদ জানাই।