অনন্য আজাদ: আমরা যে সমাজে বড় হয়েছি, সে সমাজ আমাদের গোপনীয়তা অবলম্বন করতে শিখিয়েছে। ছোটকাল থেকে আমাদের মস্তিষ্কে জোরপূর্বক ঢুকানো হয়েছে সবার সাথে মিশতে হয় না, সবার সাথে সব কিছু বলতে হয় না, সবাইকে সব কিছু দেখাতে হয় না। এই সমাজ ছোট্টকাল থেকে ছোট্ট শিশুর ছোট্ট মাথায় যে পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করে, সেটা অমানবিক।
ছোট্টকাল থেকে গোপন করতে করতে কখন যে আমরা নিজের পরিবারকেই দূরের মনে করতে থাকি তা নিজেরাও বুঝে উঠতে পারি না। গোপনীয়তা অবলম্বন করতে করতে আমরা পরিবারের কাছেই সব কিছু লুকাতে থাকি। বাইরে আমরা যাই করি না কেনো, পরিবারের কেউ যেন সাড়া শব্দটুকু না পায় সে ব্যাপারে আমরা ভালো করে লক্ষ্য রাখি।
আমাদের এই সমাজ স্বাভাবিক ও চমৎকার বিষয়গুলো ট্যাবু করে রেখেছে। তাই আমাদের লুকিয়ে লুকিয়ে সব করতে হয়। লুকাতে লুকাতে কখন যে আমরা হিংসাত্মক হয়ে উঠি সেটাও আমরা বুঝতে পারিনা।
এমন নয় যে বিষয়গুলো ট্যাবু করে রাখা হয়েছে, সেগুলো কেউ করে না। সেগুলো কেউ স্পর্শ করে না। সেগুলোর মধ্যে কেউ প্রবেশ করে না। যে বিষয়গুলো ট্যাবু করে রাখা হয়েছে সেগুলোই সবচেয়ে বেশি মানুষ করে। কিন্তু লুকিয়ে। প্রকাশ্যে করলে সম্মানহানি হয়। কিন্তু লুকিয়ে করলে সমস্যা নেই। এই শিক্ষাই আমরা পেয়েছি সমাজ থেকে।
আমরা কখনোই ভাবতেই পারি না, বাবা-মায়ের সাথে সেক্স নিয়ে কথা বলার। বাবা মায়ের সামনে টেলিভিশনে সামান্য চুম্বনের দৃশ্য এলেই চোখ মুখ বন্ধ করে হাত পা গুটিয়ে শক্ত করে এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় যা সন্ত্রাসীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সমান। অথচ এটা খুবই সহজ ও স্বাভাবিক। বাবা-মায়ের শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমেই আমরা পৃথিবীতে এসেছি। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে বাবা মায়ের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা, অন্য কারো সাথে কথা বললেও অশ্লীল অশ্লীল বলে চিৎকার করে উঠে। আবার এমনও নয় যে বিয়ের আগে কেউই শারীরিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে না। কমবেশি সকলেই শারীরিকভাবে মিলিত হয়েছে। এগুলো শুধু একেক সময়ের ঘনিষ্ঠ মানুষের সাথে শেয়ার করা যায়। কিন্তু সবার সাথে নয়। এই বিষয় সমাজে সব বেশি নোংরাভাবে প্রতিষ্ঠিত করে রাখা হয়েছে।
দরিদ্র দেশে, অশিক্ষিত দেশে, নামেমাত্র ধর্মপরায়ণ দেশে নারীদের ভোগের বস্তু করে রাখা হয়। শারীরিক সম্পর্ককে নোংরামি অশ্লীল হিসেবে বিবেচিত করা হয় বলেই এইসব দেশগুলোতে নারী যৌন নির্যাতনের সংখ্যা বেশি। ধর্ষণের সংখ্যা বেশি। অত্যাচারের সংখ্যা বেশি। বিকৃত মন মানসিকতার মানুষের সংখ্যা বেশি। এসিড নিক্ষেপের ঘটনা বেশি। হিংস্রতার সংখ্যা বেশি।
প্রেমের মত চমৎকার সম্পর্ক যেখানে অশ্লীল হিসেবে বিবেচিত হয় সেখানে সেক্স শব্দটি উচ্চারণ করাও অন্যায়। অশিক্ষিত সমাজ পাপ পাপ বলে ধ্বনি তোলে। অথচ যারা শারীরিক সম্পর্ককে নোংরামি হিশেবে চিহ্নিত করে তারাই মস্তবড় বদমাইশ। অদ্ভুত বিষয় হল, এখানে পতিতালয় উচ্ছেদের জন্য ধার্মিকেরা চিৎকার করে না। কিন্তু পতিতালয়ের নারীদের মাগী বলতে দ্বিধাবোধ করে না। পুরুষরা নিজেদের সুবিধার্তে পতিতালয় বানিয়েছে। ধর্মানুভূতির আশ্রয়ভূমি অর্থাৎ সৌদি আরবেও পতিতালয় আছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোন মুসলমান সাড়াশব্দ করে না। বাংলাদেশের সাথে সৌদির পার্থক্য হলো- সৌদি পতিতালয়ের আগে হালাল শব্দটি যোগ করেছে।
অনন্য আজাদ, ভাই; আপনার লেখা পড়ে আমার চোখ খুলে গেছে। ভাবতেছি আজকেই আমার গার্ল ফ্রেন্ড মানে প্রমিকাকে বাসায় এনে আব্বা-আম্মার সাথে কিছু ডিসকাস করবো। যেমন; যেমন যখন মিলনরত ভাবে থাকবো তখন কী সামনের সাইড ইউজ করবো নাকী পায়ু পথ? কোনটাতে বেশি আনন্দ? বীর্য খলন না করে কত বেশী সময় পর্যন্ত মিলন করা যায়? নারী সঙ্গীর স্তনে হালকা করে কামড় দিলে সে কী অনেক আনন্দ পাবে? সর্বোচ্চ শিখরে কী ভাবে পৌছানো যায়? এই সব ডিটেইলস ডিসকাস করা দরকার। আমার আব্বা- আম্মা খুব খারাপ। এতদিন পর্যন্ত এই সব বিষয় আমাকে শিখায় নাই, খালি স্কুক কলেজে পাঠাইয়া বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজী পড়া শিখাইছে। আপনি না বললেতো জানতেই পারতাম না।
এছাড়া কী ভাবে চুমু খেলে নারী সঙ্গীটার মাথা হট করে দেয়া যায় এটাও আমাকে শিখতে হবে। ভাবছি ড্যাডিকে বলবো যে; ড্যাডি, আপনি আমার গার্ল ফ্রেন্ডকে চুমু খান, আমি দেখি আর শিখি। শুধু জন্ম দিলেই হবে? কিছু শিখাইতে হবে না?
অনন্য আজাদ ভাই, আই লাভ ইউ।