মৌনী, বেশি বয়স না মেয়েটির। যে বয়সে মেয়েরা ইউটিউবে গান শুনে, মুভি দেখে, সে বয়সে সে ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে দেখে কাগজ দিয়ে বিভিন্ন জিনিষ বানান শিখেছে মেয়েটি। শিল্পের ভাষায় যাকে অরিগ্যামি । এই অরিগ্যামি দিয়ে শুরু করেছে তাঁর অনলাইন বিজনেস শপ Mouni’s Creation. এইসব নিয়েই কথা হলো মৌনীর সঙ্গে।
অরিগ্যামি নিয়ে অনলাইন বিজনেস একদমই নেই , আপনিই হয়তো প্রথম, তাই এটা নিয়ে আগ্রহের শুরুটা জানতে চাই।
অরিগ্যামি নিয়ে বিজনেস আগেও ছিল, আমিই ফার্স্ট না। তবে অরিগ্যামি বা ক্রাফটিং একসাথে দেখিনি আমি। আগ্রহের শুরুটা প্রায় বছর দুয়েক আগের। শখের বশেই প্রথম শুরু। বলতে গেলে হঠাৎ করেই শুরু। একদিন মনে হলো, শখের এই ব্যাপারটা যেহেতু মানুষ বেশ ভালভাবেই গ্রহণ করছে, তো একে বাণিজ্যিকভাবে কোন রূপ দেয়া যায় কিনা।
কি কি কাজ করছে মৌনী’স ক্রিয়েশন ?
অরিগ্যামি, কিরিগ্যামি, ক্র্যাফটিং, বিভিন্ন মেকাপ অর্গানাইজার যেমন লিপস্টিক অর্গানাইজার, জুয়েলারি অর্গানাইজার ইত্যাদি কাজ আমরা করে থাকি। সাথে সাথে ঢাকার এক প্রখ্যাত অ্যানিমেশন স্টুডিও এর ডেকোরেশন ও আমরাই করেছি।
নতুন নতুন জিনিষ বানানোর আইডিয়াগুলো কোথা থেকে জেনারেট হয়, নেট বা পড়াশুনা, বা ট্রেনিং কিছু কি করেছেন ? না সম্পূর্ণ নিজ থেকে আইডিয়া।
নেট থেকে আইডিয়া নিতে হয়, তবে হাতের কাছে সবসময় সব জিনিস পাওয়া যায় না বলে, মাঝে মাঝেই নিজের ক্রিয়েটিভিটি ও কাজে লাগানোর প্রয়োজন হয়। আর এর জন্য ট্রেনিং বলতে গেলে ইউটিউব থেকেই যা নিয়েছি, আর বাকিটা পুরাটাই নিজের ক্রিয়েটিভিটি আর নিজের ইচ্ছা।
কাস্টমারদের নেগেটিভ রেস্পন্স কি পেয়েছেন ? খারাপ লাগে?
নেগেটিভ রেসপন্স বলতে গেলে, কিছু তো পেয়েছিই। অনেকেই বলে যে আমার পণ্যের দাম বেশি, অথচ আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি দাম কম রাখার। আর এজন্য অন্যান্য ক্র্যাফটিং পেজ যে ধরনের দাম রাখে, তাদের থেকে দাম কম রেখে চেষ্টা করি প্রোডাক্ট এর মান ভাল রাখতে। এরপর ও মানুষের কেন যে মনে হয়, আমাদের পণ্যের দাম বেশি, জানি না।
ফ্যামিলি , ফ্রেন্ডস কেমন সাপোর্ট করে?
প্রথম দিকে পরিবার বা বন্ধুরা ভাবতো, আমি সময়ের অপচয় করছি। কিন্তু পরে আমার কাজ নিয়ে মানুষের প্রশংসা ও উৎসাহ দেখে তারাও এখন সাপোর্ট দিচ্ছে, উৎসাহ দিচ্ছে।
পাশাপাশি পড়াশুনাও চলছে?
হোম ইকোনমিক্স কলেজ এ পড়ছি। স্কুল ও কলেজ ছিল মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়।
মৌনী’স ক্রিয়েশন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ?
পরিকল্পনা অবশ্যই আছে, তবে তা নির্ভর করছে ক্র্যাফটিং নিয়ে মানুষের মূল্যায়নের উপর। সঠিক মূল্যায়ন না পেলে কোন কাজই আসলে বেশি দূর আগানো সম্ভব না। সঠিক মূল্যায়ন পেলে, আমার কাজ সারা বাংলাদেশ ব্যাপী ও ছড়ানোর এক ইচ্ছা ও আছে। আর তাছাড়া মাত্র তো যাত্রা শুরু, আরো অনেক দূরের স্বপ্ন তো দেখিই। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী যদি আউটলেট করার প্রয়োজন হয় তো, সেটা অবশ্যই করবো।
অনেক নারীর প্রচুর আইডিয়া আছে, কিন্তু বিজনেস শুরু করতে ভয় পায়। কি মনে হয় , বিজনেস শুরু করতে আসলে কি দরকার ? তাদের জন্য কোন পরামর্শ ?
আইডিয়া নিজের ভেতর থাকলে, সেটা ঐ ভেতরেই থাকবে, বাইরে সেটা কখনও প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব না। এজন্য মাঠে নামতেই হবে। তবে এটা ঠিক, যে কোন কিছু একা শুরু করাটা কিছুটা ভয়েরও ব্যাপার। তবে ভয় পেয়ে কাজ না করাটা অলসদের কাজ। বিজনেস শুরু করতে হলে, তাই সবার আগে প্রয়োজন একটা শক্ত নেটওয়ার্কিং, আর এজন্য নারীদের কোন প্ল্যাটফর্ম আমি খুঁজে পাইনি। যদি সেরকম কোন প্ল্যাটফর্ম থাকতো, তাহলে সকল নারীই তাদের আইডিয়াগুলো সবার সামনে নিয়ে এনে তাকে বাণিজ্যিকীকরণের উৎসাহ পেত।
আর আমার প্রডাক্ট আসলে যেহেতু ক্র্যাফটিং এর পর্যায়ে পরে, আর সেটা কিন্তু শৌখিন মানুষদেরই পছন্দ। চেষ্টা আছে, আমার প্রডাক্টকে সবস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানোর, একারণে আমাদের নিত্যদিনের অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস ও হাতের কাজের মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা আছে।
Mouni’s creation এর ফেসবুক লিংকঃ https://www.facebook.com/mouniscreation/?pnref=story
ইন্টারভিউটি লেখকের Feminism Bangla- ফেমিনিজম বাংলাতে প্রকাশিত।