ধামাচাপা’র কৌশল কিংবা জনমানুষের শক্তি সমর্থন!

Demo 1শারমিন শামস্: আমি ঠিক জানি না লেখালেখি করে কিছু ঘটিয়ে ফেলার বা পরিবর্তন আনার আর কোন অবস্থা আছে কীনা! নিতান্ত ছাপোষা এক নাগরিক হিসেবে এটা সত্যিই আমার বোধ বুদ্ধির বাইরে চলে গেছে যে, দেশে চলমান জঙ্গি-সন্ত্রাস আর উগ্রপন্থীদের দাপট সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে কীনা। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট থেকে আমার দেশকে আলাদা করার কোন সুযোগ নেই।

সরকার প্রধান কিছুদিন আগেও বলেছেন, দেশকে সিরিয়া বানানোর চেষ্টা চলছে। সরকারের প্রধান ব্যক্তিরা তথ্যউপাত্ত ছাড়া কথা বলেন, এটা আমি মনে করি না। সেক্ষেত্রে সিরিয়া বানানোর এই অপচেষ্টা প্রতিরোধে আমাদের অবস্থা কী, তা সাধারণ নাগরিক হিসেবে জানার অধিকার বা সুযোগ কি আমাদের আছে?

দেশকে যদি আসলেই সিরিয়া ইরাক বানানোর পাঁয়তারা থেকে থাকে, তবে সরকার কতোক্ষণ তা ঠেকা দিয়ে রাখতে পারবে?  
কত কয়েক মাসে দেশে যে বীভৎস হত্যাকাণ্ডের ধারা চালু হয়েছে সেই ধারা প্যারিসে বা বৈরুতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত। এদেশের সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ লেখক ব্লগার প্রকাশক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আগাম কোন আভাস দিতে পারে নাই। তাদের নিরাপত্তা দিতে পারে নাই। বইমেলা রক্তাক্ত হয়েছে।

২০০৫ সালে জেএমবি’র উত্থান আর ক্রমাগত বোমা গ্রেনেড হামলা আমাদের এতোটাই আতঙ্কিত করে তুলেছিল যে, বাসে-ট্রেনে উঠলে যে কাউকে আত্মঘাতী বোমাবাজ বলে ভ্রম হতো। ক্রমাগত আমরা সেই পরিস্থিতির দিকেই এগোচ্ছি আবার। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের হামলা কি আসছে আমাদের দিকেও?

নাকি প্যরিসের হামলা আর বাংলাদেশের উগ্রপন্থীর উত্থান, নৃশংসতা-এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা? কোনটা? সরকার একই সঙ্গে দুই ধরনের কথা বলছে। সরকার একইসঙ্গে নানান ধরনের কথাও বলছে।
পুরো পৃথিবী অস্থির। আমরা চোখের সামনে দেখছি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন। আইসিস আতংক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। বিশ্বের কোনো দেশেই কোনো নাগরিকই নিরাপদ নেই।

কে কোথায় কখন জিম্মি হবে, খুন হবে, কেউ জানি না। আইসিস কখন কার ধড় আলাদা করবে, কখন কার মাথায় ফ্রান্স কিংবা রাশিয়ার ছুঁড়ে ফেলা বোমা পড়বে, আমরা জানি না।  যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব, এ সময় বাংলাদেশ কি সবকিছুর বাইরে থেকে গা বাঁচিয়ে চলতে পারবে? সেটা কি সম্ভব?
বিশ্ব রাজনীতির জটিল-কুটিল গোলকধাঁধা ধরে ফেলা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এটা সত্য যে, জনগণের শক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের সচেতনতা আর দেশপ্রেম অনেক বড় প্রতিকূলতা জয় করতে পারে। সরকারকে এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। কিন্তু এর জন্য চাই সঠিক তথ্য।

Moonmoon
শারমিন শামস্

মানুষকে বিভ্রান্ত করে বারবার তাদের হতাশার অন্ধকারে ঠেলে দিলে সরকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে জনমানুষের কাছ থেকে। সরকারকে কিছুটা হলেও তুলে ধরতে হবে প্রকৃত অবস্থা। দেশ চালাতে গেলে অনেক ঘোরালো রাজনীতি আর কূটনীতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, এ আমরা জানি। কিন্তু জনগণের শক্তিকে কাজে লাগাতে হলে কী উপায়ে তাদেরকে সরকারের শুভ ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত একাত্ম করে তোলা যায়, তা খুঁজে বের করতে হবে।

পুরাতন গৎবাঁধা দোষ চাপানোর রীতি আর ‘সবাই একযোগে এগিয়ে আসুন’ এই বাণী এই পরিস্থিতির উত্তরণে কতটা কার্যকর তা ভেবে দেখা দরকার। ১৯৭১ এ আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল আমাদের ঐক্য, আমাদের জনমানুষের শক্তির বিস্ফোরণ। মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুললে, সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেললে খুব সহজ হয়ে উঠতে পারে দেশকে কারো হাতে ক্রীড়নক করে তোলা। সেক্ষেত্রে সবার আগে ধড় আলাদা হবে ঐ সরকারেরই।

ইরাক বা লিবিয়ার উদাহরণ যেন আমরা ভুলে না যাই। সরকার যেন মনে রাখে, জনগণের সম্মিলিত শক্তি ও সমর্থন সরকারকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে যাবার শক্তি ও সাহস দিতে পারে। তাই বিভ্রান্তি দূর করুন।

ধামাচাপা দেবার মানসিকতা অভ্যন্তরীন রাজনীতি বা আন্তর্জাতিক প্রতিকূল পরিস্থিতি কোনটাই মোকাবেলার ক্ষেত্রে কার্যকর কৌশল নয়, বরং তা আত্মঘাতী।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.