নারী উদ্যোক্তাদের পথচলা – ০১

lopa apiমারজিয়া প্রভা: নাজিয়া লোপা, ই-কমার্স সাইটে এক অনন্য নাম। “বৃক্ষ” দিয়ে শুরু করেছে তার অনলাইন বিজনেস। “বৃক্ষ” গাছপ্রেমিদের আস্থার নাম। নিজের পছন্দের গাছটি বৃক্ষের ফেসবুক পেইজে ছবি দেখে, অর্ডার করে কিনতে পারবেন যেকোনো গাছপ্রেমিরা। “বৃক্ষ” নিয়ে যত কথা লোপার সঙ্গে।

বৃক্ষর ভাবনা কোথা থেকে এলো?

ছোটবেলা থেকে আমি গাছ ভালবাসি। আমার বন্ধুরা যখন বাসায় আসতো, গাছগুলো এত সুন্দর করে রাখা দেখে খুব পছন্দ করতো। ফেসবুকে ছবি পোস্ট করতাম, সবাই বলত “ গাছগুলো দিয়ে দাও”। তো একবার এক বন্ধু আমার কাছে ১০ টা প্ল্যান্ট চাইলো। আমি ১০ টা প্ল্যান্ট রেডি করলাম। তখন ভাবলাম, এরকম ১০ টা প্ল্যান্ট রেডি করে আমি অনলাইনে বিক্রি করতেই পারি। তখন ওই ১০ টা প্ল্যান্ট ক্রিয়েট করে ছবি দিলাম। অভূতপূর্ব রেস্পন্স! ১ দিনেই সব গাছ বিক্রি হয়ে গেল, অর্ডার আসতে থাকল। আমি “বৃক্ষ” র যাত্রা শুরু করলাম ১৭ মার্চ, ২০১৫ তে।

উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন কবে থেকে ?

সবসময় আমি আমার জব করার পাশাপাশি ইনার স্যাটিশফেকশনের জন্য কিছু করতে চাইতাম। এমন কিছু করা, যেগুলো আউট অফ ট্র্যাক। আমি এমনিতেও ট্র্যাকে চলি না। বেশি পরিকল্পনা করে বিজনেসে নামি নাই অনেকের মত। প্ল্যান করে আসলে আমি কখনই কিছু করি নি।

একটু স্কুলিং, জব সম্পর্কে জানতে চাই ?

আমি এসএসসি পাশ করি খুলনার করনেশন গার্লস স্কুল থেকে, এইচএসসি পাশ করি বরিশালের গভঃ ওমেনস কলেজ থেকে। ২০০৪ সালে গ্রাজুয়েশন করি ঢাকার ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে। ২০০৪ সালেই জিপিতে জবে ঢুকি। এখন জিপির Senior Excutive হিসেবে আছি।

এই কাজে পরিবারের সহযোগিতা কেমন পেয়েছেন?

ফ্যামিলি মেম্বার বলতে আমি আর আমার হাজবেন্ড। ও খুবই সাপোর্টিভ , আইডিয়া দেয়, ক্রিয়েটিভ জিনিসটা ওর মধ্যে আছে। আমি বৃক্ষর কার্ডের চিন্তা করি একটু অন্যরকম ভাবে। ও-ই আমাকে বৃক্ষের কার্ডের আইডিয়া দেয়, পাতাশেপ করা কার্ডে আমার নাম লেখা।

কাজ করতে তো অনেক বাধা  অতিক্রম করতে হয়েছে ?

আমি খুব ফোকাসড হয়ে গিয়েছিলাম আমার কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই। আমাকে অনেকে বৃক্ষ বলেই চিনত। Worse একটা কেস বলি। আমি এর আগের বাসায় থাকতাম, মানে যে বাসা থেকে বৃক্ষ শুরু করি, সে বাসায় ফ্ল্যাট সোসাইটি বলল “ এত গাছ ফ্ল্যাটে রাখা  যাবে না, ব্যালকনিতে রাখলেও সমস্যা” । ফ্ল্যাট owner ফোন দিয়ে বলল এসব। ছাদে গাছ রাখা যাবে না, কারণ ওটা কেবল ফ্ল্যাট মালিকের জন্য ভাড়াটেদের জন্য না। আমি ফ্ল্যাট মালিককে বললাম “ বসুন্ধরায় বাসার অভাব হবে না”। এক মাস হবার আগেই বাসা ছেড়ে দিলাম। বাসা খুঁজার সময় একটা কথাই জিজ্ঞেস করেছি বাসায় ছাদ আছে কি না, ছাদে গাছ করতে দিবে কি না। এটাই ফার্স্ট কন্ডিশন ছিল। তো নতুন বাসার ফ্ল্যাট কমিটি দুই তিনমাস পরে বলল “ আমি গাছ রাখছি, তাই আমি পানি খরচ করছি বেশি”। অথচ আমরা মেম্বার তিনজন, আমি বর আর কাজের মেয়ে। পাঁচটা বাথরুমে, দুই বালতি পানি ভরলেও ১০ বালতি হয়। এত পানি লাগে না আমাদের। বাকি পানি গাছে আমি দিতেই পারি।

কাস্টমারের খারাপ ফিডব্যাক? মন খারাপ হয় ?

এই কারণে এখন হোম ডেলিভারি বন্ধ। গাছ নিয়ে যত্ন না করলে গাছ মরে যাবে। সেইটা অবশ্যই আমার দোষ না। তারপর গাছ ফেসবুকের ছবি দেখে পছন্দ করল, দুদিন পর নিবে এবং শর্ত জুড়ে দিল “ দুইদিন পর যেন পাতা ঠিক এইরকম থাকে”। এটা কীভাবে সম্ভব ? লিভিং অবজেক্ট, পাতা বড় হবেই। তাই এখন বলি ,আসুন, দেখে নিজের পছন্দে নিয়ে যান। আর দেখ, প্রতি গাছের জন্য ডেলিভারি চার্জ নিতাম ৬০ টাকা। ১৬০ টাকার গাছ পুরান ঢাকা থেকে অর্ডার করল, বসুন্ধরা থেকে পুরান ঢাকায় যেতে ৬০ টাকার বেশি লাগে, গাছগুলোকে ঠিক ভাবে বাসায় পৌঁছে দিতে। কাস্টমাররা এইগুলা বুঝে না। তাই অফ করে দিচ্ছি হোম ডেলিভারি। অথচ এটাই ছিল বৃক্ষতে প্রথম থেকে।

বৃক্ষতে কি ধরণের গাছ দেওয়া হয় ? দেশি বিদেশি সব ?

এটা সিজনস ডিপেন্ড করে, যেমন শীতকালে ফুলের গাছ বেশি হয়। মুলত বাংলাদেশে যেসব গাছ availaible সেইগুলাই দেই। যেমন এয়ারপ্ল্যান্ট available না। মাধবীলতা available , চাইলে কেউ এনে রাখি।

মানে কাস্টমার তার পছন্দের মত গাছ আনিয়ে রাখতে পারবে ?

একটা ঘটনা বলি, একবার একজন বাংলাদেশের বিভিন্ন রঙর শাপলা চেয়েছিল, আমি খুঁজে আনলাম, তাঁর খোঁজ নাই। তাই এখন কনফার্ম হয়ে গাছ এনে রাখি।

নির্দিষ্ট কোন নার্সারি থেকে কিনেন ?

না না ,নার্সারিতে ঘুরি। যে গাছ অন্যরকম, পছন্দ হচ্ছে আনি। আগে ইনডোরপ্ল্যান্ট নিয়ে কাজ করতাম, অন্যরকম গাছ কিনতাম বেশি। এখন ফাওয়ারপ্ল্যান্টের চাহিদা বেড়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ?

ডিপেন্ড করে মানুষ কীভাবে নিচ্ছে তার উপর।  বিভিন্ন অফিসে ইনডোরডেকরশন প্ল্যান্ট চায়, ওগুলো করে দিব। শপ বা নার্সারি করার ইচ্ছা নাই। দেশে অনেক আছে ওগুলো, লোকে এত দেখে বুঝে গিয়ে কিনতে চায় না ।

নতুন নারী উদ্যোক্তাদের কিছু বলুন।

বাংলাদেশের মেয়েরা এখন অনেক established, অনেক ক্ষেত্রে অনেক ভাল অবস্থানে আছে তাঁরা। তবে একলা একটা মেয়ে নার্সারি থেকে চারা কিনতে গেলাম, লোকেরা পেয়ে বসে “ আরে মহিলা আসছে, দাম বাড়ায় রাখি” এভাবে ফাজলামি করে। রুট লেভেলে কাজ করতে এগুলো দেখেছি। প্রব্লেম তো হয়, তারপর ফ্ল্যাটের সমস্যাো বললাম। তবুও এগুলো  জয় করেই এগিয়ে যেতে হবে। জাস্ট মাইন্ডসেট থাকা দরকার “ কিছু করা দরকার, কিছু করবই”।

বৃক্ষর ফেসবুক পেইজঃ https://www.facebook.com/brikkhobd/?fref=ts

ইন্টারভিউটি লেখকের  Feminism Bangla- ফেমিনিজম বাংলাতে প্রকাশিত।

 

শেয়ার করুন: