মারজিয়া প্রভা: রক্ত দিয়েও প্রতিরোধ করবে সানির আগমন এই দেশে! যদিও সানি আসবে কি না বিষয়টি এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়াই হয় নি ! তবুও রক্তগঙ্গা বয়ে দিতে হবে! ইভেন্ট খুলতে হবে “পর্নস্টার সানি লিওনকে ঠেকাও” টাইপ! ট্রল করতে হবে, বেশ্যা গালি দিয়ে! নাইলে ধর্ম রক্ষা হবে কি করে ?
আমাকে বলো, এ দেশে পর্ণ দেখে নাই কোনদিন কোন ছেলেমেয়ে এইরকম একটা দেখাও! আমি তো ক্লাস থ্রি থেকে পর্ণ দেখে এইরকম ছেলে দেখেছি! আমি নিজেও কলেজে উঠেছি যখন, তখন দেখেছি!
আমি বলছি না, প্রাপ্তবয়স্কের নিচে পর্ণ দেখাটা খুব ভালো! কিন্তু আমরা দেখি! পর্ণের ভোক্তা আছে আমাদের দেশে প্রচুর। আগে নিউমার্কেটের ঘুপচি এলাকায়, ঢাকা কলেজের আশেপাশে ঢুকলেই সিডি ধরিয়ে দেয়া হতো, ছেলেমেয়ে উলঙ্গ অবস্থার কভার পিক দেওয়া । দেশে ২০০২ সালেও হলে হলে কাটপিস লাগিয়ে দিত উলঙ্গ ছবির, কাহিনী ছিল না, লোকে জাস্ট ওইসব দেখতেই যেত হলে।
কিন্তু খালি কাটপিস থাকলেই কি মুভি চলে? রিকশাওয়ালারা দেখলেও চলবে মাত্র ৭ দিন! তাই সিনেমা ব্যবসা করতে পারছে না, এর জোরেই দেশীয় সিনেমা থেকে কাটপিস বিদায় নিল একদিন। এখনও কিছু হলে দেখানোর প্রয়াস চালায়, ঢাকার পর্বতা হলে এসেছিল এইরকম একটা মুভি ! পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল দেয়াল! শুনি নাই, ওই মুভি দারুণ ব্যবসা করেছিল!
সো, পর্ণগ্রাফিক চলচিত্র ব্যবসা সেই অর্থে করে না। বাইরের দেশে হলে রেটিং এর মুভি চলে, সেই মুভি দেখে খুব কম দর্শক! শুধু সেক্স প্রডাক্ট থাকলে হবে না, কাহিনিও চাই ! তাই পর্ণস্টাররা মেইনস্ট্রিম ফিল্মে আসার চেষ্টা করে।
সানি পর্ণস্টার ছিল! হ্যাঁ ছিল! খুব গর্ব নিয়েই সে তার অতীত স্বীকার করে। আমি তার এই সত্যবাদিতায় মুগ্ধ! অনেক মেইনস্ট্রিম ফিল্ম স্টারদের দুঃসহ অতীত থাকে। তারা সেইগুলো গোপন করতে চায়। সানি সৎ, স্বীকার করেছে। স্বীকার করেছে, তার একদিন ভোক্তা ছিল পর্ণের, আজ তার মেইনস্ট্রিম ফিল্মেরও ভোক্তা আছে। আমি স্যালুট করি সানিকে।
সিলভার স্টেলনের মতো সুদর্শন অভিনেতা ছিল পর্ণস্টার, আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার ছিল গে পর্ণের মডেল! ক্ষতি কোথায়? মেইনস্ট্রিম ফিল্মে এসে তারা কি না করেছে, সেটা তো ইতিহাসই বলে দেয়! আজকে দেশে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার এলে লোকে থুথু দিবে? সিলভার স্টেলন এলে লোকে বেশ্যা, লুইচ্চা, পুরুষ বলে রক্তগঙ্গা বয়ে দিবে? আমি তো দেখি, যমুনা ফিউচার পার্কের কাছাকাছি শোয়ার্জনেগারের টার্মিনেটর জেনেসিসের পোস্টার ছেয়ে আছে!
দোষটা কি এটাই যে সানি লিওন একজন মেয়ে ?
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা মো. আবদুর রকিব এ্যাডভোকেট ও মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী সেক্স সিম্বল নায়িকা সানি লিওনের বাংলাদেশ সফরে আসার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, স্বল্প বসনা সানি লিওনের মতো একজন উদ্দাম নর্তকীর এদেশে আসার অনুমতিদান কোনোক্রমেই অভিপ্রেত নয়।
সঙ্গে এও বলেছেন “লিওন পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপনের এবং তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। যা আমাদের মতো রক্ষণশীল দেশের জাতীয় আদর্শ, ঐতিহ্য রীতি-নীতি ও সংস্কৃতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এবং সুস্থ রুচির জন্যে পীড়াদায়ক।”
আদর্শ-ঐতিহ্য-রীতি-নীতি সংস্কৃতির কথা ধরলে দেশে সালমান খান, ক্যাটরিনা, দীপিকা কাউরেই আসতে দেওয়া দরকার ছিল না! ( কারণ এরাও মেইনস্ট্রিম অভিনেতা , সানিও এখন তাই )। আবার আইটেম গান আমাদের দেশের জিনিষও না , কিন্তু ম্যাজিক মামনির জনপ্রিয়তা কম না!
পাশ্চাত্য থেকে ফিচারিং করা, আইটেম গানে নাচা, ডিজে সংস্কৃতি, ব্রেক ড্যান্স সংস্কৃতি সবই আমরা নিয়েছি! নতুন করে এই নিয়ে ফাঁপর বাবাজির মানে নেই!
কথাটা যেটা চোখে পড়েছে সেটা হল ““লিওন পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপনের এবং তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।“। লে ঠ্যালা সামলা! আসল রক্তক্ষরণ যে এইখানে সে কি বুঝি না!
একটা মেয়ে সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে! কারও উপর নির্ভর না করে, নিজের সচ্ছলতা নিজে এস্টাব্লিশ করছে, তা তো গায়ে লাগবেই হেফাজতিদের!
এরা তো কইয়াই দিছে, নারী ঘরে থাকবে, স্বামীকে তৃপ্তি দিবে। ব্যস! নারীর আর কিছু লাগবে না। ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ভাইয়া স্ট্যাটাসে বলেছেন, শফি হুজুর তার চার স্ত্রীকে দেনমোহর দিয়ে কিনে নিয়েছেন! যাদের জীবনের কোন নিজস্বতা নাই, ঘরে বন্দী থাকে, আর্থিকভাবে যারা নির্ভর করে থাকে অন্যের উপর। তাদের চেয়ে সানি অনেক ইস্টাব্লিশড, অনেক রেস্পেক্ট পাওয়ার যোগ্য। অনেক ছেলে পর্ণমডেল হয়েও এতোদূর আসতে পারে নাই !
কাহিনী হইল, নারী পুরুষের সমকক্ষ হতে গেলেই জ্বালা ধরে কেন জানি কিছু লোকদের ! হেফাজতিরা সেইসব জ্বালাঅলা লোকদের রিপ্রেজেন্ট করছে ! তাদের রক্তক্ষরণ হওয়াটাই স্বাভাবিক!
ভাই, সানি আসলেই দেশে পর্ণ ঢুকে পড়বে না, যুবকদের মূল্যবোধ অবক্ষয় হবে না! অলরেডি পর্ণ লোকে দেখে! সানি অজানা না কারও কাছে। সানি আমাদের পিসিতেই থাকে! তাই এইগুলো কোন তত্ত্ব না! বরং টিকিটের দাম ১৫,০০০ দেখে কি কারও রক্তক্ষরণ বেড়ে গিয়েছে! নাকি টিকিট দিয়ে তো যেতে পারবে না! তাই সানিকে ঢুকতেই দিব না এইরকম লড়াই শুরু হয়ে গেছে!
সানি দেশে আদতেই আসবে কি না জানি না! আসলেও আমি যেতে পারব না, টাকা নেই ! গেলে হয়ত সেলফি তুলতাম ডার্ক ফেস করে, হ্যান্ডশেক করে বলতাম “ তোমার এই স্বনির্ভর হওয়া সংগ্রামকে স্যালুট জানাই”।
চাইলেও যে কেউ সানি হতে পারবে না ! শুধু জামা কাপড় খুললেই সানি হওয়া যায় না ! তাইলে নায়লা নাঈমও সানি লিওন হয়ে যেত ( এটা নায়লা নাঈমের পেইজের একটা স্ট্যাটাস ছিল)।