বিয়ে ভেঙে গেছে? দু:খ কেন মেয়ে!

Phoenix 2নাজিয়া হক অনি: “আপনি কি আপনার জীবন নিয়ে খুশি?” -হ্যাঁ, খুশি। “আগের স্বামীকে মনে পড়ে?”-একটা বিয়ে করেছিলাম, এতদিন একসাথে ছিলাম, ভুলে যাবার তো কোন কারণ নেই। তবে আলাদা করে মনে পড়ে না। আমাদের বাড়ির পাশে যেমন একটা মুদি দোকানদার আছে, ব্যাপারটা অনেকটা ওরকম। “খারাপ লাগে না একা একা?” -না। জন্ম থেকে বাবা মায়ের সাথে আছি এত বছর। মাঝে কয়দিন আরেকজনের সাথে থেকেছি মানে তো এই না, বাবা মায়ের সাথে থাকতে খারাপ লাগবে।
“তার মানে কি আপনার আগের স্বামীর জন্য আপনার একদমই কষ্ট হয়না?” -যখন নতুন নতুন সম্পর্কটা ভেঙ্গেছিল, তখন একটা সময় পর্যন্ত খারাপ লাগত। এরপর আর না। জীবনে ঘটে যাওয়া আরও অনেক স্মৃতির মত এটিও একটি স্মৃতি, এর বেশি কিছু না।

যেকোনো নারী পুরুষের জন্য ‘ডিভোর্সি’ শব্দটি যতটুকু তার সম্পর্ক ভাঙ্গার কষ্ট বা সঙ্গী হারানোর কষ্ট তার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ কষ্ট বা ভয় সমাজের সামনে ছোট হবার। আমাদের সমাজে ডিভোর্স বা তালাক এখনও একটি বড় ধরনের সমস্যা। এখনও যারা সম্পর্ক ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে তাদের সবার চাইতে একটু অন্য চোখে দেখা হয়। যদিও কিছু পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু আরও বেশি পরিবর্তন না হওয়ার জন্য দায়ী আমাদের সমাজের মানসিক কাঠামো এবং এর সাথে যারা ডিভোর্সি তাদের হীনমন্যতা।

একটা ছেলে বা মেয়ে যখন বিয়ে করে, সে ডিভোর্স করবে এই কথা চিন্তা করে বিয়ে করে না। সংসারে অনেক ধরনের সমস্যা হয়, সেটার মোকাবেলা করার সাধ্যমত চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হয়, তখনই সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন মিল নেই, ভালবাসা নেই, শুধু সমাজ আর সন্তানের মুখ চেয়ে অথবা নির্ভরশীলতার জন্য তারা বিয়ে ভাঙ্গে না। কিন্তু ঐ বিষাক্ত পরিবেশ সেই মানুষগুলো এবং তাদের সন্তান থাকলে দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

আমি এই অসুস্থতা ধরে রাখতে চাইনি। আমি চাইনি আমার ভবিষ্যৎ সন্তান একটা কুৎসিত ভালবাসাহীন পরিবেশে বড় হোক। তাই মুক্তি দিয়েছিলাম আমার অর্ধাঙ্গকে। সাধ্যমত চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হয়েছি, সরে গিয়েছি। পরিবার, সমাজ থেকে একটা মেয়ে হিসাবে সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্য যতটুকু যুদ্ধ করতে হয় তার চেয়ে বেশিই করেছি। মানুষ যাকে ভালবাসে সে যেমনই হোক না কেন, চেষ্টা করে তার সাথে থাকার। আমিও করেছিলাম। কিন্তু ধৈর্যের সীমা অতিক্রম হয়ে যাবার অনেক পরে আমি ঠিক করেছিলাম, আর না। এভাবে আর সম্ভব না।

ইন্টার্নির সময় আমার এক প্রফেসর বলেছিলেন, “আরে বোকা মেয়ে কাঁদো কেন! জামাই ছাড়া, আর বাসা পাল্টানো তো একই কথা। মানুষের বাবা-মা মারা গেলে তাও মানুষ মেনে নেয় এক সময়, আর এটা তো রক্তের সম্পর্কও না। তখনই প্রথম বুঝলাম আসলেই তো আমার তো ওকে নিয়ে যেটুক কষ্ট হচ্ছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে মানুষ কী ভাববে সেটা চিন্তা করে। তাহলে সমস্যা তো আমার মধ্যেই। সেই সমস্যা আমি আরও অনেক আগে কাটিয়ে উঠেছি। বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই এটা বলতে যে, হ্যাঁ আমি আগে একটি বিয়ে করেছিলাম এবং আমি তাকে ত্যাগ করেছি এবং এ নিয়ে আমার মনে এতটুকু কষ্ট, দুঃখ, আফসোস নেই। বরং আমি খুশি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারার জন্য। আমার ডিভোর্স আমার জীবনের আর দশটা ঘটনার মত আরও একটি ঘটনা, ব্যতিক্রম বা দুর্বলতা কিছু না। কাজেই যদি কেউ এটাকে খুঁচিয়ে মজা নিতে চান, আপনিই হাসির পাত্র হবেন, আপনার নিচু মানসিকতার জন্য। আমি না।

আর যারা সেটা করে আমি বুঝে যাই যে তারা সমাজের সব কিছু মেনেও সুখী হতে পারেনি। তাই আমি যখন তথাকথিত “সুখী” সংজ্ঞার বাইরে থেকেও এত আনন্দে দিনযাপন করি তা তাদের মানতে অনেক কষ্ট হয়। হিংসা হয়। আমি বুঝি সেটা। কাজেই “স্বামী পরিত্যক্তা” শব্দটি আমাকে বলে লাভ নেই। আমার একটুও জ্বলে না। কারন পরিত্যাগ আমিই করেছিলাম, সে না। পরিত্যক্ত যদি বলতেই হয়, তাহলে তাকে গিয়েই বলুন। আমার আশে পাশে অনেক মানুষ আছে যারা ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসা, সমাজের কথা ভেবে নিজেদের লুকিয়ে রাখেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, আপনারা নিজেকে ছোট হয়ে থাকবেন না। এটা আসলেই কোন সমস্যা না। এই সমাজের কিছু অসুখি মানুষ আপনাকে আপনার ডিভোর্স নিয়ে খোঁচা মেরে ছোট করার চেষ্টা করবে, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি মনে করবেন না যে এটা আপনার সমস্যা, কারো সাধ্য নেই আপনাকে ছোট করার। জীবনে অনেক ধরনের কষ্ট মানুষকে অতিক্রম করতে হয়।

সম্পর্ক ভাঙ্গে, গড়ে, কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। জীবন তার নিয়ম মাফিক বয়ে চলে। এটা আপনারই ঠিক করতে হবে কতদিন একটা কষ্ট নিয়ে আপনি পরে থাকতে চান, নাকি তা ঝেড়ে ফেলে উঠে দাঁড়াতে চান।

if u can be happily single, or happily married then u can also be happily divorced!! remember that!!

শেয়ার করুন: